জাতীয়

চেনা ঢাকা অচেনা রূপে

চেনা ঢাকা অচেনা রূপে

রাজধানী ঢাকার ব্যস্ততম সব সড়কে নেই যানবাহনের চিরচেনা উচ্চশব্দ। নেই যানজট, পথচারীদের তাড়াহুড়ো কিংবা কর্মজীবী মানুষের ছুটে চলা। যান্ত্রিক কোলাহলে ঠাসা নগরী এখন যেন শুধুই নীরবতা পালনে ব্যস্ত। এমন ফাঁকা ঢাকায় ঈদের প্রশান্তিও নগরবাসীর কাছে অন্যরকম এক অনুভূতি।

Advertisement

ঈদুল আজহা ঘিরে কর্মস্থল ঢাকা ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেছেন লাখ লাখ মানুষ। ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন তারা। ফলে এসময়ে রাজধানীর প্রায় সব সড়কে নেমে এসেছে এক অচেনা নীরবতা। স্বাভাবিক সময়ে যেসব সড়কে সকালের আলো ফোটার পর থেকেই শুরু হয় তীব্র যানজট, সেসব সড়কে এখন সুনসান। সেই অতিরিক্ত যানবাহন বা কর্মব্যস্ত মানুষের চাপ।

সব মিলিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের ছুটি ঘিরে চেনা ঢাকা অচেনা রূপ নিয়েছে। নেই প্রতিদিনের চেনা যানজট, উচ্চশব্দে হর্ন আর মানুষের ভিড়। নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোকেও মনে হচ্ছে বেশ নিঃসঙ্গ।

আরও পড়ুন

Advertisement

লম্বা ছুটিতে ঢাকা ফাঁকা মেট্রোরেল আজ চলবে না

ঈদের দিন শনিবার (৭ জুন) সকালে সরেজমিনে ঢাকার রাস্তায় চলাচলরত কারও কারও সঙ্গে কথা হলে তারা জাগো নিউজকে বলছেন, বছরের অন্য সময়গুলোতেও যদি ঢাকার ওপর যানবাহনের চাপ কিছুটা কম থাকতো তবে এ শহরের জনজীবন কতইনা সুন্দর হতো।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, পল্টন, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালী, জাহাঙ্গীর গেট, বিজয় সরণি, আগারগাঁও এবং শ্যামলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে সড়কে গাড়ির সংখ্যা ছিল না বললেই চলে।

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতেগোনা কিছু গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। গণপরিবহনের উপস্থিতি কম থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি, ব্যাটারিচালিত এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচল ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো।

সীমিত পরিসরে চলা গণপরিবহনে ঈদ বকশিসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে কিছুটা বাড়তি ভাড়া আদায় করতেও দেখা গেছে।

Advertisement

এদিকে, সড়কে গাড়ি কম থাকায় কাউকে কাউকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

রাজধানীর বাড্ডা থেকে আলিফ পরিবহনে উঠেছেন রাসেল মিয়া। যাবেন মোহাম্মদপুর। কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর গাড়ি পেয়েছি। রাস্তা একদম ফাঁকা। গাড়িতেও তেমন যাত্রী নেই।

ভাড়া বেশি নিচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাড়া বেশি বলতে জোর করে ভাড়া বেশি নিচ্ছে না। তবে ঈদের বকশিস চেয়ে ১০ টাকা বাড়িয়ে দিতে বলছে। ১০ টাকা বেশি দিলাম। কী আর করা, ঈদের দিন।

ইব্রাহীম নামের অন্য এক যাত্রী বলেন, বোনের বাসায় যাচ্ছি। গাড়ি না পেয়ে গুলশান থেকে মহাখালী টিবি গেট পর্যন্ত হেঁটে এসেছি। টিবি গেট পর্যন্ত হেঁটে এসে গাড়ি পেলাম।

আলিফ পরিবহনের চালকের সহকারী বলেন, নামাজ পড়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। রাস্তায় তেমন যাত্রী নেই। সব ফাঁকা। সবাই এখন পশু কোরবানি নিয়ে ব্যস্ত। বিকেলের পর যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে।

সাধারণত ঈদের সময় মানুষ পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ছুটে যায়। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল আর লঞ্চঘাটে গত কয়েকদিন ঈদযাত্রীদের ভিড়ের ছাপ এখন নগরীর শূন্যতায় স্পষ্ট। শহরের বাসিন্দাদের বড় একটা অংশ এখন গ্রামে, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগিতে ব্যস্ত।

ঈদুল আজহার আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেষ কর্মদিবস ছিল বুধবার (৪ জুন)। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) থেকে শুরু হয় টানা ছুটি। টানা ১০ দিনের লম্বা ছুটি শেষ হবে ১৪ জুন।

এর আগে গত ৬ মে সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নির্বাহী আদেশে ১১ ও ১২ জুন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া ঈদের আগে দুই শনিবার অফিস চালু রাখারও সিদ্ধান্ত হয়।

আরও পড়ুন

রাজধানীতে পশু কোরবানি চলছে সারাদেশে ত্যাগের মহিমায় উদযাপন হচ্ছে ঈদ

নির্বাহী আদেশে দুদিন ছুটির ফলে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সবমিলিয়ে টানা ১০ দিনের ছুটি পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।

উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী ১১ ও ১২ জুন নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ১৭ ও ২৪ মে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অফিস খোলা থাকবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। সে অনুযায়ী দুই শনিবার অফিস খোলা ছিল।

টানা ১০ দিনের এ ছুটি শেষে আগামী ১৫ জুন আবারও চালু হবে অফিস-আদালত।

গত ঈদুল ফিতরেও ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি ছিল। তবে কোরবানির ঈদে ছুটির সংখ্যা আরও একদিন বেড়ে হলো ১০ দিন।

কেআর/এমকেআর/এমএস