রাজনীতি

স্মৃতির ঘ্রাণে বিএনপি নেতাদের ছোটবেলার ঈদ

স্মৃতির ঘ্রাণে বিএনপি নেতাদের ছোটবেলার ঈদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ও মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান (ওপরে বাঁ থেকে)। ছবি: সংগৃহীত

Advertisement

ঈদ আজও বাঙালি মুসলমান জীবনের অন্যতম বড় উৎসব। তবে সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে উদযাপনের ধরণ। স্মার্টফোন-সেলফির এই যুগে ঈদের আবহ একরকম হলেও ষাটোর্ধ্ব প্রজন্মের কাছে ছোটবেলার ঈদ মানে ছিল অন্য কিছু—পারিবারিকতা, সামাজিকতা আর একরকম সরল আনন্দ, যা এখন অনেকটাই ‘নস্টালজিয়া’।

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শৈশবের ঈদের কথা জানতে চাইলে দাউদকান্দির বাড়ির ঈদের স্মৃতি টেনে আনেন তিনি। বলেন, ‘স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পর্যন্ত ঈদ করেছি গ্রামে। নতুন জামার অপেক্ষা ছিল সবচেয়ে বড় আনন্দ। বাবা-মা নিজের সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করতেন সন্তানের জন্য নতুন জামা কিনে দিতে।’

ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য গরু কেনা ও দেখার রীতিকে সামাজিক উৎসবের মতো মনে করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগের রাতে গ্রামের সবাই দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু দেখতাম। বেশিরভাগই ঈদের আগের দিন গরু কিনতেন। গরু কেনার মধ্যেও ছিল এক ধরনের সামাজিক প্রতিযোগিতা ও আনন্দ।’

Advertisement

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর জন্ম চট্টগ্রামে। তাদের বাড়িতে ঈদ ছিল বড় পরিসরের পারিবারিক সমাবেশের মতো।

আরও পড়ুন

লন্ডনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করলেন তারেক রহমান‘মেজর জিয়া বলছি’- দিকভ্রান্ত জাতিকে সাহস জুগিয়েছিল যে ঘোষণাড. ইউনূসের ‘পদত্যাগ ভাবনা’ নিয়ে বিএনপিতে মতপার্থক্যআওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, ‘সতর্ক প্রতিক্রিয়া’ বিএনপিতে

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের যৌথ পরিবার ছিল। ঈদের দিন সকালে সবাই আমাদের বাড়িতে এসে ফজরের নামাজ পড়ে নাস্তা করতেন কিমা আর পরোটার সঙ্গে। নতুন জুতো, অফুরন্ত বেড়ানো—এইসব নিয়েই ঈদ হতো। ঈদ শেষ হলে মনে হতো যেন দুনিয়া শেষ হয়ে গেছে, একটা শূন্যতা।’

Advertisement

তবে ছোটবেলায় সালামি না পাওয়ার কথা জানিয়ে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পরিবারে সালামির রেওয়াজ ছিল না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাল্যকালের স্মৃতি তো এখন তেমন মনে নাই। বাল্যকালের ঈদের আনন্দ সবার যেমন উৎসবমুখর হয়, আমারও তেমন ছিল।’

দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বেগম সেলিমা রহমান মনে করেন, ঈদের সবচেয়ে বড় উত্তেজনা ছিল চাঁদ দেখা এবং নতুন জামা পরে আত্মীয়স্বজনের সামনে হাজির হওয়া।

আরও পড়ুন

নেতাকর্মীদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে বেকায়দায় বিএনপি দুই শতাধিক আসনে আসতে পারে ধানের শীষের সবুজ সংকেত ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচিতে কী পেলো বিএনপি? তারেক রহমান কি আসলেই ‘শিগগির’ দেশে ফিরছেন?

‘আমরা ঈদের কাপড় লুকিয়ে রাখতাম, যেন ঈদের দিন তা পরে সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে পারি। আত্মীয়দের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া, একসঙ্গে সময় কাটানো—এইসবই ছিল ঈদের আনন্দ। এখন সে জীবনের সরলতা আর নেই,’ বলছিলেন সেলিমা রহমান।

ঈদের আগের রাতে কোরবানির গরু ঘিরে কী পরিমাণ উন্মাদনা থাকত, তা তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বলেন, ‘ঈদের আগের রাতটা কেটে যেত গরুর পেছনেই। কখন গরু কেনা হবে, কখন কোরবানি হবে—এই সব নিয়েই উত্তেজনা থাকত। একবার নিজের পোষা গরুই কোরবানির জন্য দেওয়া হয়েছিল। আমি কেঁদে ফেলেছিলাম।’

‘তখনকার দিনে ৭০-৮০ টাকায় গরু কেনা যেত, যা তখনকার মূল্যমান অনুযায়ী যথেষ্ট।’ বলেন টুকু।

নতুন জামাকাপড় কখন আসবে, সেই শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষায় থাকতেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। এর কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তখন রেডিমেড কাপড়ের প্রচলন ছিল না, সেলাই করে পোশাক তৈরি করতে হতো। ভোর রাতে উঠে বসে থাকতাম গোসল, বড়দের সঙ্গে ঈদের মাঠে যাওয়ার জন্য। আমাদের এক বন্ধু ছিল, প্রায়ই শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকতো। সে ঈদের মাঠে না যেতে পারলে আমার খুব খারাপ লাগতো, আমার অন্য বন্ধুদেরও খারাপ লাগতো।’

আরও পড়ুন

দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা ফখরুলের খালেদা জিয়াকে গরু উপহার দিতে পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় হাজির কৃষক উপহার নয়, ভালোবাসা বিলিয়ে দাও: কৃষক সোহাগকে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় গেলে প্রথম ১৮০ দিনে যা করবে বিএনপি

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘ছোটবেলার বেশিরভাগ ঈদ নানা বাড়িতে করতাম। মায়ের সঙ্গে যেতাম আর বাবার গিফটের অপেক্ষায় থাকতাম। সাধারণত বরিশাল থেকে ছোটমামা বাবার গিফট নিয়ে যেতেন। সেটা পাশে রেখে ঘুমাতাম। ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নতুন পোশাক পরার জন্য অস্থির হয়ে থাকতাম। তারপরে যে কোনো মামার হাত ধরে ঈদের মাঠে যেতাম।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ঈদের সময় নতুন কাপড়চোপড়, জুতা, বিশেষ করে ঈদের দিনের গোসলটা মজার ছিল। বাবার সঙ্গে রাগ করে বাড়ি থেকে একবার হলে গিয়ে ঈদ করেছিলাম—এটা খুব কষ্টের ছিল। এছাড়া নানা কারণে দীর্ঘদিন ঈদের নামাজ পড়া হয়নি।’

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পুকুর বড় ছিল, সারা বছর প্রচুর পানি থাকে। ভোরবেলায় পুকুরের ঘাটে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে গোসল করতে আসত। একসঙ্গে গোসলের প্রতিযোগিতার মজাই আলাদা ছিল। ঈদের দিন সুগন্ধি সাবান দিয়ে গোসল করতাম। আজও সেই সাবানের স্মৃতি জীবিত।’

কেএইচ/এমএমএআর/এমএস