ভোলায় মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রকাশ্যে চলছে চিংড়ির রেণু শিকারের মহোৎসব। এ কাজে শিকারিরা ব্যবহার করছেন নিষিদ্ধ মশারি ও নেট বেহুন্দী জাল। ফলে চিংড়ির রেণুর সঙ্গে উঠে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণু। এতে শিকারিদের প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ রেণু ধ্বংস হচ্ছে।
Advertisement
এদিকে এসব বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু বিভিন্ন হাত ঘুরে রাতের আঁধারে পাচার হচ্ছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায়। প্রকাশ্যে এসব চললেও প্রতিরোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই মৎস্য বিভাগের। জনবল সংকটের কথা বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে জেলার সদর উপজেলার মেঘনা নদীর তুলাতুলি, নাছির মাঝি, ভোলার খাল, শিবপুর, ইলিশা জংসন ও তেতুলিয়া নদীর ভেদুরিয়া এবং ভেলুমিয়ার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, দিন-রাত মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে প্রকাশ্যে শিকার করা হচ্ছে অবৈধ বাগদা-গলদা চিংড়ির রেণু। শিকারিরা নিষিদ্ধ মশারি জাল ও নেট বেহুন্দী জাল ব্যবহার করছেন। তাই তাদের জালে চিংড়ির রেণুর সাথে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণুও উঠে আসছে। শিকারিরা চিংড়ির রেণু পাত্রে রেখে অন্যান্য মাছের রেণু তীরেই ফেলে দিচ্ছেন। এতে ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় বিপুল পরিমাণ মাছের রেণু ধ্বংস হচ্ছে।
মেঘনা নদীতে বাগদা ও গলদা শিকারি মো. রাজু, মো. ইসমাইল ও মো. আলম জানান, তারা প্রতি বছর মার্চ মাসের শেষ থেকে জুন মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত নদীতে মশারি জাল ও নেট বেহুন্দী জাল দিয়ে বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু ধরেন। কোনো দিন এক হাজার পিস, কোনো দিন দুই হাজার পিস আবার কখনো ৪০০-৫০০ পিস বাগদা ও গলদার রেণু পান। এসব রেণু ব্যাপারীদের কাছে প্রতি পিস এক টাকা করে বিক্রি করেন তারা। ব্যাপারীরা এগুলো ভোলার পাইকারদের কাছে দেড় টাকা করে পিস বিক্রি করেন।
Advertisement
তেতুলিয়া নদীতে বাগদা ও গলদা শিকারি মো. মোসলেউদ্দিন ও আব্দুল হাই জানান, বাগদা-গলদা ধরার জন্য মশারি ও নেট বেহুন্দী জাল ব্যবহার করি আমরা। বাগদা ও গলদা চিড়িং রেণুর সঙ্গে বালিয়া, বাটা, পোয়া ও পাঙ্গাসের রেণুসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উঠে আসে। আমরা চিংড়ি রেণু পাত্রে রেখে অন্যান্য মাছের রেণু নদীতে ফেলে দেই। কিন্তু অনেকেই আছে যারা চিংড়ি রেণু পাত্রে নিয়ে অন্যান্য মাছের রেণু নদীতে না ফেলে তীরে ফেলে মেরে ফেলে।
ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ বলেন, প্রতি বছর এপ্রিল, মে ও জুন মাস পর্যন্ত বাগদা এবং গলদা রেণুর ভর মৌসুম চলে। এসময় প্রচুর পরিমাণ বাগদা ও গলদা রেণু ধরা পড়ে শিকারিদের নিষিদ্ধ জালে। জালে বাগদা ও গলদা রেণুর সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের কোটি কোটি রেণু ধ্বংস করায় ভবিষ্যতে নদীতে মাছের সংকট দেখা দেবে। তাই মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের দাবি করছি।
তিনি জানান, ভোলার জেলেদের থেকে এক টাকায় ক্রয় করা বাগদা ও গলদার রেণু বিভিন্ন হাত ঘুরে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের বিভিন্ন পাইকারি আড়তে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। বাগদা ও গলদা পাচারকারীদের যদি দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা যায় তাহলে রেণু ব্যবসা বন্ধ হবে। এতে নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উৎপাদন বাড়বে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, গত কয়েক বছরের তুলতায় এ বছর প্রচুর পরিমাণে বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু নদীতে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে কিছু জেলে, নারী ও শিশুরা সেগুলো শিকার করেন। ভোলার সাত উপজেলার মধ্যে তিন উপজেলায় মৎস্য কর্মকর্তার পদ খালি। জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না তারা।
Advertisement
তিনি আরও জানান, কোস্টগার্ড ও পুলিশের সহযোগিতায় চিংড়ির রেনু শিকারিদের উৎসাহিত করার সঙ্গে জড়িত ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়াও এক কোটি ৮০ লাখ পিস বাগদা ও গলদা রেণু জব্দ করা হয়েছে।
জুয়েল সাহা বিকাশ/এমএন/জেআইএম