চার প্রকল্পে বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিলো এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ২২ পয়সা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা।
Advertisement
শুক্রবার (২০ জুন) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এই ঋণচুক্তি হয়। চুক্তিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সই করেন অর্থনৈতিক সম্পদ বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী। এডিবির পক্ষে সই করেন সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রধান হোয়ে ইউন জিয়ং।
ব্যাংক খাত সংস্কারে ৫০ কোটি ডলার ঋণবাংলাদেশে ব্যাংক খাত স্থিতিশীল ও সংস্কারের জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। নিয়ন্ত্রক তত্ত্বাবধান, করপোরেট সুশাসন, সম্পদের মান এবং স্থিতিশীলতা জোরদার করে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে স্থিতিশীল ও সংস্কারের জন্য এ ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি। ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ও সংস্কার কর্মসূচি, সুশাসন বৃদ্ধি, বাংলাদেশ ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা কাঠামোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং ব্যাংক ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য খেলাপি ঋণ সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা প্রবর্তনে খরচ হবে এ অর্থ। এর মাধ্যমে আর্থিক খাতের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধির জন্য নীতিগত সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হবে।
এডিবির প্রধান আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব কৌশিক বলেন, ব্যাংক খাতে মূল সমস্যা হলো শক্তিশালী সম্পদের মানের অভাব, তারল্যের অভাব এবং অপর্যাপ্ত আর্থিক মধ্যস্থতা- যার ফলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির হার কম। এই কর্মসূচি আন্তর্জাতিক নিয়মে মেনে চলা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রকের ক্ষমতা বাড়ানো হবে। এছাড়া ব্যাংক খাতের মূলধন বৃদ্ধি এবং ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের অর্থায়নের অ্যাক্সেস উন্নত করার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য মূল্য সংযোজন আনবে।
Advertisement
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বলেন, বাংলাদেশ এখন ব্যাংক খাতে বড় পরিসরে সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এই কর্মসূচি বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়াবে, ব্যাংকগুলোর সুশাসন জোরদার করবে, সম্পদের মান উন্নত করবে এবং আর্থিক খাতকে উচ্চতর প্রবৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত করবে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করিডোর উন্নয়নঢাকা উত্তর-পশ্চিম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করিডোর উন্নয়নে ২০ দশমিক ৪ কোটি ডলারের একটি ঋণচুক্তি সই করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকার। করিডোরটির উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশের আঞ্চলিক বাণিজ্য আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন দুই প্রকল্পে ১০৯৯৮ কোটি টাকা ঋণ দেবে এডিবি বাংলাদেশের ব্যাংক খাত সংস্কারে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবিএই সহায়তা দ্বিতীয় দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এসএএসইসি) ঢাকা উত্তর-পশ্চিম করিডোর সড়ক প্রকল্পের আওতায় এক দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বহু-অঞ্চলীয় এডিবি ঋণের চতুর্থ কিস্তি হিসেবে দেওয়া হচ্ছে।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, এই প্রকল্প বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ এবং উপ-আঞ্চলিক সংযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করে। এটি করিডোর পথের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে এবং ভুটান, নেপাল ও ভারতের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সহজ করবে।
Advertisement
এ প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা থেকে হাটিকুমরুল হয়ে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। এটি বাংলাদেশের আধুনিক ও দক্ষ পরিবহন ব্যবস্থার লক্ষ্যে বড় ভূমিকা রাখবে। সড়ক নিরাপত্তা বাড়াতে নির্মিত হবে ফুটওভারব্রিজ, ফুটপাত এবং ধীরগতির যানবাহনের জন্য দুটি নির্দিষ্ট লেন।
বিদ্যুৎ খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে প্রকল্পবাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার মান, নির্ভরযোগ্যতা, স্থিতিশীলতা এবং দক্ষতা বাড়াতে ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার প্রসারে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। ‘বিদ্যুৎ সঞ্চালন শক্তিশালীকরণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি একীভূতকরণ’ প্রকল্পের আওতায় বগুড়া, চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, হবিগঞ্জ, পিরোজপুর ও সাতক্ষীরা জেলার গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিড উন্নয়ন করা হবে। একই সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিবর্তনশীল নবায়নযোগ্য জ্বালানি (ভিআরই) হাবের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করাও সহজ হবে।
চুক্তি সই শেষে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করা, দারিদ্র্য হ্রাস, ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য- বিশেষ করে দরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য। এই প্রকল্প নবায়নযোগ্য জ্বালানির সংহতকরণ, স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, জ্বালানি খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তা করবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রকল্পজলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানো, নির্গমন হ্রাস এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন উৎসাহিত করতে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি। এই তহবিল ‘জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচি (সিআরআইডিপি)’র দ্বিতীয় পর্যায়ে সহায়তা হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। এ কর্মসূচির আওতায় এজেন্সি ফ্রান্সেস ডি ডেভেলপমেন্ট (এএফডি) থেকে প্রায় ১১৩ মিলিয়ন ডলার এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে আরও ৪০০ মিলিয়ন ডলার সহ-অর্থায়ন রয়েছে।
এ বিষয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, এই কর্মসূচি একটি কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অভাব, অপর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়ন এবং বেসরকারি খাতের সীমিত অংশগ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাধাগুলো মোকাবিলা করবে। এটি জলবায়ু উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়ক পরিবেশ তৈরি, অভিযোজন জোরদার এবং প্রশমনমূলক পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
এমওএস/কেএসআর/জিকেএস