পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলা মানেই পাহাড়ে শীতল মেঘের হাতছানি। আর পাহাড় মানেই বিশুদ্ধ বায়ুর অপরূপ সৌন্দর্যের ভরা সবুজ গালিচা। পাহাড়ের বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করা হয়। এই নানা সংস্কৃতি আজও অনেকের কাছে অজানা। তার মধ্যে পাহাড়ের এক ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘রোপাই’ উৎসব।
পুরোনো আমল থেকে এই উৎসব পালন করে আসছে পাহাড়ে বসবাসকারী লোকজন। রং-বেরংঙের পাশাকে নাচ-গানের মধ্য দিয়ে পালিত হয় এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব। মূলত আষাঢ় মাসে পাহাড়ের ঢালে ধান রোপন করতেন পাহাড়ি সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা দলবদ্ধভাবে ধান রোপন করে এবং আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে, এক সঙ্গে চাষের জমিতে লাঙ্গল দিয়ে মাঠে চাষ করে। এই উৎসবে পাহাড়ি পোশাক পরে সবাই অংশগ্রহণ করে।
নানা রংয়ের সাজ পোশাকের সঙ্গে থাকে পাহাড়ি গান ও নাচ। একদল নারী গান করেন আর একদল নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে মাটিতে ধানের চারা রোপণ করতে থাকেন। এই উৎসবের আরো একটি মূল আকর্ষণ রোপন চলাকালীন কাঁদা জলে নাচ করা।
চাষের জমিতে বলদ গাই দিয়ে চাষ করার সময় গ্ৰামের বড় থেকে ছোট সবাই মিলে চাষের জমির কাঁদা মাটিতে পড়ে আনন্দে মেতে উঠেন।
প্রথমে নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পূজা করেন তারা। এরপরেই শুরু হয় ধানের চারা রোপণ করা। আষাঢ় মাসে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যখন ধান রোপনের কাজ শুরু হয়।
বিগত কয়েক দশক ধরে কালিম্পংয়ের পাহাড়ি জনজাতির সংস্কৃতির এই অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তবে এই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য যাতে হারিয়ে না যায় সেই জন্য পাহাড়ি লোকজন এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে উদ্যোগী হয়েছেন।
পাহাড়ি বাসিন্দা পালেন তামাং বলেন, এই উৎসব খাদ্য সুরক্ষা জন্য করা। আমরা করোনার সময় দেখেছি কি ভাবে খাদ্যের অভাব হয়েছিল। আমরা যে বছরের পর বছর চাষাবাদ করছি সেই চাষাবাদ শেখানোর একটা উদ্দেশ্য আছে।
কালিম্পং পাহাড়ের মিলন থাপা জানিয়েছেন, পাহাড়ি সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে অনেক রীতির মধ্যে অন্যতম হলো এই রোপাই উৎসব। যা আষাঢ় মাসে পালন করা হয়। আমরা এই উৎসব পৌরাণিক হিসাবে পালন করে আসছি।পাহাড়ি সমাজের বিভিন্ন কৃষ্টি যা ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে সেগুলো ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
মিলন থাপা আরও বলেন, প্রাচীনকাল থেকেই পাহাড়ে এই রীতি চলে আসছে। তারা ছোটবেলায় দেখেছেন তাদের পূর্বপুরুষ এইভাবে চাষাবাদ করেছেন। সেই নিয়ম আজও অক্ষুন্ন রয়েছে।
এই উৎসব চলাকালীন দিনভর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে পাহাড়ি বিভিন্ন রকমারি খাবারের মধ্যে দিয়ে আনন্দ উপভোগ করেন স্থানীয়রা।
ডিডি/টিটিএন