ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ঘটনাস্থল ও কক্ষ তল্লাশি, সিসিটিভি ফুটেজ এবং সুরতহাল প্রতিবেদন পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে।
রোববার (২০ জুলাই) বেলা সোয়া ১১টায় এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী। এসময় উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শাহীনুজ্জামান ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. ওবায়দুল ইসলাম ।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সঠিক কারণ উদঘাটনে রোববার গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে তথ্য আহ্বান করেছে প্রশাসন। এ পর্যন্ত উভয় কমিটি পৃথকভাবে অন্তত ২৫ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। শনিবার (১৯ জুলাই) উভয় কমিটি ও কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া সাজিদের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নম্বর কক্ষ তল্লাশি করা হয়েছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্টের রেকর্ড ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাওয়া হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, কমিটির হাতে সুরতহাল প্রতিবেদন এসেছে এবং সোমবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। দ্রুত ফরেনসিক প্রতিবেদনের বিশেষ আবেদন এবং আইসিটি সেলের কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর থেকে শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধারএদিকে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন এবং ছয় দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে হল ও প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে দুজন করে শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত করা, ক্যাম্পাসে সিসিটিভি স্থাপন, হলে শিক্ষার্থীদের গমন ও বহির্গমন মনিটরিংয়ের আওতায় আনা, ক্যাম্পাসের চারপাশে নিরাপত্তাবেষ্টিত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, পর্যাপ্ত সড়কবাতি স্থাপন ও বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা।
রোববার (২০ জুলাই) সাজিদ আব্দুল্লাহর আত্মার মাগফিরাত ও শিক্ষার্থীদের ১৫ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে শোকর্যালি করেছে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ।
প্রশাসনের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন জানান, তারা ১৭ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব নয়। তদন্ত কমিটিতে শিক্ষার্থী রাখার বিষয়ে কোনো নোটিশ পাননি। এটি আইনবহির্ভূত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হল তদন্ত কমিটি এরইমধ্যে আটজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনো গাফিলতি নেই। সবাই দিন-রাত আন্তরিকতার সঙ্গে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমরা সাজিদ আব্দুল্লাহকে হারিয়েছি। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণে তাদের ধৈর্যধারণের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে। একজন হাউজ টিউটর এবং একজন সহকারী প্রক্টর প্রতিরাতে দায়িত্ব পালন করবেন। ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদারে আমরা কাজ করছি। রোববার থেকে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে। লালন শাহ হল ও শাহ আজিজুর রহমান হল পকেট গেটে ২৪ ঘণ্টার জন্য দুজন আনসার সদস্য দেওয়া হয়েছে। থানা গেটেও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পুকুর পাড় ও জিমনেসিয়ামসহ বিভিন্ন পয়েন্টে লাইট লাগানো হয়েছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। আজকেও কিছু স্থানে লাইট স্থাপন করা হবে।
শাহ আজিজুর রহমান হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে থাকতেন শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ। হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল গফুর গাজী বলেন, হলে চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। একে একে অন্যান্য সমস্যাগুলোও সমাধান করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়।
ইরফান উল্লাহ/এসআর