নীলফামারী-২ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী একাধিক থাকলেও জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে একজনকেই। এ আসনে জামায়াতের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী থাকায় রংপুর বিভাগের মধ্যে সর্বশেষ গত সপ্তাহে তারা এ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। ফলে এখন সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন দলের এ প্রার্থী। বিএনপিতে অন্তত পাঁচজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের বেশির ভাগই নানাভাবে মাঠে আছেন। আবার অনেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে না নামলেও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে দলে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। কার পক্ষে ভোট চাইবেন এ নিয়ে নেতাকর্মীরাও শঙ্কায়। এছাড়া জাতীয় পার্টির একজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি দলের হাইকমান্ডের প্রিয়ভাজন হওয়ায় দল তাকে মনোনয়ন দেবে বলে প্রত্যাশা তার। এনসিপিরও অবস্থান বেশ শক্ত এ আসনে। তরুণ ভোটারদের তাদের পক্ষে সমর্থন নিতে তারাও মাঠে সক্রিয়। তবে জেলার চারটি সংসদীয় আসনে দলটি এখনো কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি।
নীলফামারী-২ আসনটি জেলার সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৩তম এবং জেলার ২য় সংসদীয় আসন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯৩। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৬ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৭। বিগত নির্বাচনগুলোর ফলাফলে দেখা গেছে, এ আসনে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ সাতবার নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া জাতীয় পার্টি তিনবার, বিএনপি একবার, বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টি একবার জয় পেয়েছে।
আরও পড়ুন
এ আসনে ২০০১ থেকে ২০২৪ সালের মোট পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে টানা নির্বাচিত হন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। এর মধ্যে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ‘বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন’, ‘রাতের ভোট’ ও ‘ডামি নির্বাচন’ খ্যাত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনও আছে। এ আসনটিকে অনেকেই নূরের দুর্গও বলেন। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বর্তমানে কারাগারে সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ‘বাকের ভাই’ খ্যাত এ অভিনেতা দেশের অন্যতম বিপণন, যোগাযোগ ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। নূরের এ আসনে জামায়াত আগে থেকেই শক্তিশালী ছিল। আওয়ামী লীগের পতন ও শেখ হাসিনার ভারত পালানোর পর তাদের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। এ আসনে বিএনপি ভালো কিছু করতে চাইলে জামায়াতের সঙ্গে তাদের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে।
এ আসনটিকে অনেকেই নূরের দুর্গও বলেন। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বর্তমানে কারাগারে সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ‘বাকের ভাই’ খ্যাত এ অভিনেতা দেশের অন্যতম বিপণন, যোগাযোগ ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। নূরের এই আসনে জামায়াত আগে থেকেই শক্তিশালী ছিল। আওয়ামী লীগের পতন ও শেখ হাসিনার ভারত পালানোর পর তাদের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
এ আসনে বড় একটি অংশ চাকরি ও ব্যবসা সূত্রে এখানে এসে ভোটার হয়েছেন। এই ভোটাররাই প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করেন স্থানীয়রা। তবে যাই হোক না কেন এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জামায়াতের প্রার্থীর সঙ্গে। কারণ এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হচ্ছে জামায়াতের। এর আগে রংপুরে এক জনসভায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এ বিভাগের নীলফামারী-২ আসন বাদে সব কয়টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। কারণ এখানে জামায়াতের একাধিক প্রার্থী আসনটি দাবি করে আসছিলেন। তাদের ধারণা, প্রার্থী যেই হোক না কেন, সামনের নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত।
আরও পড়ুন লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত জোটে বদলে যেতে পারে ভোটের হিসাবনিকাশএ কারণে দলের নেতাকর্মীরাও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন। অবশেষে গত ১৫ জুলাই নীলফামারী জেলা জামায়াত কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অ্যাডভোকেট আল ফারুক আব্দুল লতিফকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। প্রার্থী ঘোষণা দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল। এসময় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের জামায়াত নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। এদিকে জামায়াতের এই ঘোষণা ঘিরে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন পর সরাসরি নির্বাচনে যাওয়ায় জামায়াতের রাজনৈতিক কৌশল নিয়েও চলছে অনেক হিসাব-নিকাশ।
অ্যাডভোকেট আল ফারুক আব্দুল লতিফ জামায়াত ইসলামীর জেলা সহকারী সেক্রেটারি এবং বর্তমানে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।
এ আসনে বড় একটি অংশ চাকরি ও ব্যবসা সূত্রে এখানে এসে ভোটার হয়েছেন। এই ভোটাররাই প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করেন স্থানীয়রা। তবে যাই হোক না কেন এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জামায়াতের প্রার্থীর সঙ্গে। কারণ এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হচ্ছেন জামায়াতের। এর আগে রংপুরে এক জনসভায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এ বিভাগের নীলফামারী-২ আসন বাদে সব কয়টি আসনের প্রাথীর নাম ঘোষণা করেন। কারণ এখানে জামায়াতের একাধিক প্রার্থী আসনটি দাবি করে আসছিলেন। তাদের ধারণা, প্রার্থী যেই হোক না কেন, সামনের নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত।
আব্দুল লতিফের ভাষ্য, ‘ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। যদি জনগণ ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করে, তবে তাদের আস্থার প্রতিদান দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। পিছিয়ে পড়া এ জনপদের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করবো।’
আরও পড়ুন বিএনপি-জামায়াত দুই দলই আশাবাদী বিএনপির চ্যালেঞ্জ জামায়াত-ইসলামী আন্দোলনএ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী পাঁচজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- জেলা বিএনপির সদ্য বিদায়ী সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম, বর্তমান জেলা কমিটির আহ্বায়ক মীর সেলিম ফারুক, সদস্য সচিব এ.এইচ.এম সাইফুল্লাহ রুবেল ও যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল পারভেজ। তবে দিন যত যাবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এছাড়া এ নির্বাচনে ফ্যাসিবাদের দোসর খ্যাত জাতীয় পার্টি অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলে এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব একেএম সাজ্জাদ পারভেজ। এর বাইরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠনিক তৎপরতা সামান্য লক্ষ্য করা গেলেও নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা একেবারেই নেই।
দিনের ভোট রাতের কারণে এ আসনে টানা পাঁচবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি হন। কিন্তু দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। শুধু দলীয় কিছু নেতাকর্মীর পকেট ভারী হয়েছে। তার লোকজন দিয়ে চাকরি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো কাজ নেই যে তিনি করেননি। বিরোধী মত দমনে নির্যাতন ও হত্যা সবই হতো তার ইশারায়। ফ্যাসিস্ট শাসন আমলে আসাদুজ্জামান নূরের নির্দেশে বিএনপি কর্মী গোলাম রব্বানীকে গুম করে পরে হত্যা করা হয়। ওই সময় তার পরিবার বিচারও চাইতে পারেনি। এমনকি তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদও করতে পারেনি।
জেলা বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, দিনের ভোট রাতের কারণে এ আসনে টানা পাঁচবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি হয়েছেন। কিন্তু দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। শুধু দলীয় কিছু নেতাকর্মীর পকেট ভারী হয়েছে। তার লোকজন দিয়ে চাকরি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো কাজ নেই যে তিনি করেননি। বিরোধীয় মত দমনে নির্যাতন ও হত্যা সবই হতো তার ইশারায়। ফ্যাসিস্ট শাসন আমলে আসাদুজ্জামান নূরের নির্দেশে বিএনপি কর্মী গোলাম রব্বানীকে গুম করে পরে হত্যা করা হয়। ওই সময় তার পরিবার বিচারও চাইতে পারেনি। এমনকি তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদও করতে পারেনি। কারণ প্রতিবাদ করলেই গোলাম রব্বানীর মতো প্রাণ দিতে হতে পারে, এই ভয়ে। তবে সেই জালিম শাসন আমলের পতন হয়েছে। নতুন বাংলাদেশে এখন সবাই স্বাধীন। বৈষম্যহীন সুন্দর রাষ্ট্র গঠনে বিএনপিই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন বিএনপি-জামায়াত লড়াইয়ের সম্ভাবনা নতুন প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারণাতাদের দাবি, বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমানে বিএনপি অনেক শক্তিশালী। দলের জনপ্রিয়তা এখন গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। নেতাকর্মীরাও বেশ সক্রিয়। এ আসনে একাধিকবার জামায়াতের প্রার্থীর পরাজয় ঘটেছে। বর্তমানে জামায়াতের চেয়ে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। এ কারণে এবার তাদের পক্ষে নির্বাচনে গণজোয়ার ঘটবে।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আ খ ম আলমগীর সরকার বলেন, দলের দুর্দিনে তিনি হাল ধরে রেখেছিলেন। এ কারণে দল তাকে নিরাশ করবে না। এছাড়া বেশির ভাগ নেতাকর্মীই তার পক্ষে আছেন। সাধারণ মানুষেরও প্রত্যাশা যেন আমি নির্বাচন করি। এক কথায় বলতে পারি দলমত নির্বিশেষে সবার সমর্থন আছে। তাই দলের প্রার্থী হলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি।
একইভাবে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, এবার জাতীয় পার্টি কোনো জোটে যাবে না। এ আসনটি জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হলেও জোটগত কারণে আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। এবার তা হচ্ছে না। এজন্য ভোটারদের বহুদিনের ইচ্ছা পূরণ হবে। তারা শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে তাকেই বেছে নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এএইচকিউ/এসএইচএস/এমএফএ/জেআইএম