দেশজুড়ে

দুর্গ উদ্ধারের লড়াইয়ে জামায়াত, প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি

নীলফামারী-৩ আসন জলঢাকা উপজেলা নিয়ে গঠিত। ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায়, জামায়াত নিজেদের দুর্গ উদ্ধারের মরিয়া। ৫ আগস্টের পর কর্মী সম্মেলন, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে। এরইমধ্যে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এক জনসভায় তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক নতুন সমীকরণে বিএনপিও নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার চেষ্টা করছে।

তবে বিএনপি দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করলেও সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী নিজেদের জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরে কয়েক মাস ধরে প্রচার চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই জোরেশোরে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন। মাঠ পর্যায়ে এই দুই দলের পাশাপাশি প্রচারের মাঠে আছে এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তবে জাতীয় পার্টি, এবি পার্টি বা অন্য দলের তেমন উল্লেখযোগ্য প্রচার এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন জামায়াতের একক প্রার্থী, বিএনপিতে সম্ভাব্য একাধিক ১৮ বছর পর ফেরা তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত

নির্বাচন ঘিরে জামায়াত নেতাদের ভাষ্য, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের কাছে দলের আদর্শ পৌঁছানোর চেষ্টা করছে জামায়াত। এটা নির্বাচনী প্রচার নয়, দলীয় আদর্শের প্রচার। কারণ হিসেবে তারা মনে করেন, দেশে ইসলামি দল ক্ষমতায় গেলে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সুন্দর সমাজ ও উন্নত রাষ্ট্র গঠন হবে।

এর আগে এ আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ দিনের ভোট যদি রাতে না করতো, আগের চারটি সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীই নির্বাচিত হতেন। জুলাই বিপ্লবের পর মানুষের চিন্তা-চেতনারও বিপ্লব ঘটেছে। সামনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ আসন জামায়াত পুনরুদ্ধার করবে ইনশাআল্লাহ।

বিএনপিও শহীদ রাষ্ট্র্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও তারেক রহমানের ব্যক্তিত্ব তুলে ধরে ভোটারদের দলের প্রতি আকর্ষণ করছেন। নেতারা বলছেন, তাদের ক্ষমতায় আসা শুধু সময়ের ব্যাপার। নির্বাচন হলেই বিএনপি ক্ষমতায় যাবে।

এ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হচ্ছেন মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফি। বিএনপিতে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ আলী। তিনি পরপর দুবার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য খালেক কাজী। এছাড়া খালেদা জিয়ার ভাগনে সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনের এ আসন থেকেও মনোনয়ন নেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাইদ লিওন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হচ্ছেন আমজাদ হোসেন।

আরও পড়ুন লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত জোটে বদলে যেতে পারে ভোটের হিসাবনিকাশ

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে এটি ১৪ নম্বর আসন। কৃষিপ্রধান উপজেলা হিসেবে উত্তরাঞ্চলের মধ্যে জলঢাকার গুরুত্ব রয়েছে। ১৪টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে নীলফামারী-৩। সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীর যে কয়েকটি উর্বর এলাকা রয়েছে, তার মধ্যে নীলফামারী-৩ আসন অন্যতম।

জামায়াত বা বিএনপি যে দলেরই প্রার্থী বিজয়ী হোক না কেন, এবার সাধারণ মানুষ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এর আগে এ আসনে যেই এমপি হয়েছেন, তারা শুধু নিজের আখের গুছিয়েছেন। এলাকার কোনো উন্নয়ন হয়নি। সৃষ্টি হয়নি বেকার যুবকদের জন্য কোনো কর্মসংস্থান। ফলে জেলার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত উপজেলা জলঢাকা।

এ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪২। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪০ হাজার ৭১ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৭০। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার একজন। এখানে জামায়াতের নিজস্ব ভোটব্যাংক আছে। এর বাইরে বড় ফ্যাক্টর প্রায় ৭০ হাজার হিন্দু ভোটার। এই ভোটাররা যেদিকে সমর্থন দেবেন, প্রার্থী বিজয়ের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। আশার কথা হচ্ছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে এখন তাদের পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে যারা নতুন প্রজন্ম তারা বিএনপি, জামায়াতের অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পদে থেকে নিজেদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করছেন।

বিগত ১২টি নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এককভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রথম, পঞ্চম এবং দশম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন। মহাজোটের অংশ হিসেবে নবম ও একাদশে নির্বাচিত হন জাপার প্রার্থী। চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাপা, ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হন। জামায়াত তৃতীয়, সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আসনটি দখল করে। সর্বশেষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন পাভেল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন।

মীরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সাদিকুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় জামায়াত বা বিএনপি যেই দলেরই প্রার্থী বিজয়ী হোক না কেন, এবার সাধারণ মানুষ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এর আগে এ আসনে যেই এমপি হয়েছেন, তারা শুধু নিজের আখের গুছিয়েছেন। এলাকার কোনো উন্নয়ন হয়নি। সৃষ্টি হয়নি বেকার যুবকদের জন্য কোনো কর্মসংস্থান। ফলে জেলার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত উপজেলা জলঢাকা।’

আরও পড়ুন বিএনপি-জামায়াত দুই দলই আশাবাদী বিএনপির চ্যালেঞ্জ জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন

তবে বেশির ভাগ তরুণ ভোটার বলছেন, এবার এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়ন করতে হলে প্রয়োজন তরুণ নেতৃত্ব।

এখানে জামায়াতের নিজস্ব ভোটব্যাংক আছে। এর বাইরে বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার হিন্দু ভোটার। এই ভোটাররাই যেদিকে সমর্থন দেবেন, প্রার্থী বিজয়ের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। আশার কথা হচ্ছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে এখন তাদের পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে যারা নতুন প্রজন্ম তারা বিএনপি, জামায়াতের অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পদে থেকে নিজেদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করছেন।

এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী আবু সাইদ লিওন বলেন, তিনি ও তার দল ক্ষমতায় গেলে জেলায় একটি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হবে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাকে আধুনিকায়ন করা হবে। ফলে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তার আশা ভোটাররা তার পক্ষে সমর্থন দেবে।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সৈয়দ আলী বলেন, মনে রাখতে হবে, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান কেউই এককভাবে সফলতার ভাগিদার নয়। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এককভাবে সফল হওয়া যায় না। তাই নতুন বাংলাদেশ গঠনে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অভিজ্ঞ ও শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। এদিক থেকে তিনি এগিয়ে আছেন দাবি করে এলাকার সব শ্রেণির ভোটাররা তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।

আরও পড়ুন বিএনপি-জামায়াত লড়াইয়ের সম্ভাবনা নতুন প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারণা

নীলফামারী-৩ আসন জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি এমন মন্তব্য করে দলটির প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফি বলেন, এর আগে এ আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ দিনের ভোট যদি রাতে না করতো, আগের চারটি সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীই নির্বাচিত হতেন। জুলাই বিপ্লবের পর মানুষের চিন্তা-চেতনারও বিপ্লব ঘটেছে। সামনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ আসন জামায়াত পুনরুদ্ধার করবে ইনশাআল্লাহ।

এএইচকিউ/এসএইচএস/এমএফএ/এএসএম