জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত যারা নির্দেশদাতা তারা কিন্তু প্রায় সবাই দেশ থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। এই যে দেশ থেকে তারা চলে যেতে সক্ষম হয়েছে, এটাও তো একটা বিচারের দাবি রাখে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘জুলাই গণহত্যার বিচার: আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন’ অনুষ্ঠানে পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, তারা কেমন করে দেশ থেকে চলে গেলো। আপনি তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের বিচার করবেন, তারা উপস্থিত থাকলো না, তাদেরকে আমরা উপস্থিত রাখতে পারলাম না, এখান থেকেও কিন্তু আসলে বোঝা যায় যে রাষ্ট্রযন্ত্রের কোনো কোনো জায়গায় বিচারহীনতা।
তিনি আরও বলেন, আপনি হয়তো বিচার করবেন, ট্রাইবুনাল হয়তো রায় দেবে কিন্তু তাদেরকে সত্যিকার অর্থে কিন্তু মুখোমুখী হতে হচ্ছে না। আমাদের তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে সব যুক্তি বিশ্লেষণ করে বিচারে যেতে হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে। নিশ্চয়ই আইন মন্ত্রণালয় সেই কাজটা করবে। আমরা এখনো গ্রেফতার বাণিজ্য মামলা বাণিজ্য এ সব শব্দ থেকে মুক্তি পেলাম না। একটা রাজনৈতিক কালচার না বদলালে, এটা যদি আপনি ঠিকও করে দিয়ে যান কিন্তু রাজনৈতিক কালচার যদি না বদলায় রাজনীতি যদি বিচারটাকে নিজের মধ্যে ধারণ না করে তাহলে এই পরিবর্তন আসলে কখনো প্রেক্টিস হবে না।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, আমরা আর কসমেটিক কোনো পরিবর্তন দেখতে চাই না। সত্যিকার অর্থে মূল্যবোধের জায়গা থেকে পরিবর্তন দেখতে চাই। আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, যারা এই খুনগুলো করেছেন, তাদের সমর্থকরা কিন্তু বিভিন্ন সেক্টরে এখনো এ সমাজে আছে। যদি না থাকতো তাহলে পালিয়ে গেলো কেমন করে? এটা তো আমাদেরকে বুঝতে হবে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারিক পদ্ধতি মেনেই বিচার করা হচ্ছে। যাতে করে এই বিচার নিয়ে কখনো কোনো নেতিবাচক কথা উঠতে না পারে।
আরও পড়ুন:
শেখ হাসিনা যা করেছে, পাকিস্তানি বাহিনীও এত জঘন্য অপরাধ করেনিশহীদ ইয়ামিনের মৃত্যুর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ইয়ামিনের শ্বাস নেওয়ার শেষ মুহূর্ত আমাকে শুধু মনে করিয়ে দেয় যে আসলে কি রকম একটা দেশে আমরা বসবাস করতাম। যে একটা মানুষ বেঁচে আছে, তাকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে যারা দেশ চালায় তারা তাকে মেরে ফেলতে চায়। তারা নাগরিকদেরকে পুড়িয়ে ফেলতে চায়।
দেশকে গোষ্ঠী আর দলীয় স্বার্থের ওপরে প্রাধান্য দিতে হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন যদি দেশকে আমরা ব্যক্তি, গোষ্ঠী আর দলীয় স্বার্থের ওপরে রেখে পরিবর্তন না করি তাহলে বিচার শুধু একটা প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন হয়েই থাকবে। আর এই অন্যায়গুলো বারবার হয়তো হবে। কাজেই প্রাতিষ্ঠানিক বিচারের পাশাপাশি দেশ বদলানোর যে একটা বাসনা আছে, আমাদের সবাইকে সবসময় সজাগ থেকে ওই পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যেতে হবে।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা, চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের কয়েকজন সদস্য।
এফএআর/এসএনআর/এমএস