প্রতি বছর জুন মাস থেকে দেশের বাজারে বাড়তে থাকে টমেটো ও গাজরের দাম। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। গত জুন মাস থেকে টমেটো ও গাজরের দাম বাড়ছে। দফায় দফায় দাম বেড়ে এরই মধ্যে টমেটোর কেজি ২০০ টাকা হয়ে গেছে। আর গাজরের কেজি উঠেছে ১৬০ টাকায়। মৌসুম শেষে হওয়ায় বাজারে এই দুটি সবজির সরবরাহ কম থাকায় এমন দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, টমেটো ও গাজরের চাহিদা সারা বছর থাকে। ভরা মৌসুমে টমেটো ও গাজরের কেজি ১০-২০ টাকায় বিক্রি হয়। আর মৌসুম শেষ হলেই এই দুটি সবজির দাম বাড়তে থাকে। সাধারণত প্রতি বছরই জুন মাস থেকে টমেটো ও গাজরের দাম বাড়তে থাকে। এবারও তেমনটি হয়েছে।
তারা জানিয়েছেন, এখন বাজারে যে টমেটো পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগ ভারত থেকে আমদানি করা। কিছু টমেটো কোল্ড স্টোরেজ থেকেও আসছে। কোল্ড স্টোরেজ থেকে আসা টমেটোর মান তুলনামূলক খারাপ। এ কারণে এই টমেটোর দাম একটু কম, কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। আর আমদানি করা টমেটো বেশ টাটকা, এ কারণে দামও বেশি। আমদানি করা টমেটো ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে বাজারে যে গাজর পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগ আমদানি করা। আমদানি করা গাজর আসছে চীন থেকে। এই গাজর দেখতে সুন্দর এবং টাটকা। বাজারে এখন আমদানি করা গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। আমদানি করা গাজরের পাশাপাশি কিছু বাজারে কোল্ড স্টোরেজের গাজরও পাওয়া যাচ্ছে। এই গাজর বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।
এদিকে টমেটো ও গাজরের পাশাপাশি ঢাকার বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বর্তমানে সব থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে। এক কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা। বাকি সবজিগুলোর কেজি ৬০ টাকার ওপরে। সেই সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। এক কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৮০ টাকা।
আরও পড়ুন
ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া, ‘গরিবের মাছ’ পাঙাসেও অস্বস্তি বরিশালে বেগুনের কেজি ১৩০ চড়া ফলের বাজার, সিন্ডিকেটকে দুষছেন বিক্রেতারামঙ্গলবার (৫ আগস্ট) হাজিপাড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা টমেটো বিক্রি করছেন ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা।
খিলগাঁও তালতলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। সেখান থেকে মালিবাগ বাজারে গিয়েও একই দামে টমেটো ও গাজর বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে রামপুরা বাজারে কিছু ব্যবসায়ীকে দেশি গাজর ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। অবশ্য এই বাজারেও আমদানি করা গাজর ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়।
টমেটো ও গাজরের দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. শরিফুল বলেন, এখন টমেটো ও গাজরের মৌসুম না। বাজারে এখন আমদানি করা টমেটো ও গাজর বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আমদানি করা টমেটো ও গাজর দেখতে সুন্দর, যে কারণে চাহিদাও বেশি। বাজারে কিছু দেশি টমেটো ও গাজরও পাওয়া যাচ্ছে। তবে এগুলো দেখতে খুব একটা সুন্দর না। সে কারণে আমদানি করা টমেটো ও গাজরের তুলনায় দেশিগুলোর দাম একটু কম।
তিনি বলেন, প্রতি বছরই এই সময় টমেটো ও গাজরের দাম বেশি থাকে। এবারও বেশি। এর মূল কারণ এখন মৌসুম না। সামনে এই দুটি সবজির দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ এখন বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টির কারণে খেতের ক্ষতি হয়েছে। তাই আমাদের ধারণা সামনে সবজির দাম আরও বাড়বে।
রামপুরার ব্যবসায়ী জুয়েল বলেন, ভরা মৌসুমে টমেটো ও গাজর ২০ টাকার মধ্যে পওয়া যায়। কিন্তু মৌসুম শেষ হওয়ার পর প্রতি বছরই জুন মাস থেকে টমেটো গাজরের দাম বাড়তে থাকে। গত বছর টমেটোর কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা হয়ে গিয়েছিল। এবার তো এখনো কেজি ২০০ টাকার ওপরে ওঠেনি। তবে সামনে হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, গত বছর আমদানি করা গাজরের কেজি ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এ বছর এখনই গাজর সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা গাজরের কেজি ১৬০ টাকা, আর দেশি গাজর ১০০ টাকা বিক্রি করছি। কিছুদিনের মধ্যে গাজরের কেজি ২০০ টাকা হয়ে গেলে অবাক হবো না। কারণ বাজারে এখন অন্যান্য সবজির দামও বাড়তে শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিনে পটল, ঝিঙা, বেগুন, করলা, বরবটির দাম কেজিতে ১০ টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। এখন এক কেজি পটল ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙা, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
টমোট ও গাজরের দামের বিষয়ে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করে মালিবাগ বাজারে বাজার করতে আসা লিয়াকত আলী বলেন, এক কেজি টমেটোর দাম ২০০ টাকা চাচ্ছে। গাজরের কেজি ১৬০ টাকা। চিন্তা করেন, এত দামে কি সবার পক্ষে টমেটো, গাজর কিনে খাওয়া সম্ভব? বাজারে এখন তো কোল্ড স্টোরেজের টমেটো ও গাজর পাওয়া যাচ্ছে, তার মানে এই দুটি পণ্য মজুত করে রাখা যায়। তাহলে ভর মৌসুমে যখন ১০-২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়, সেই সময় মজুত করে রেখে তো সারা বছর বাজারে এই দুটি পণ্য সরবরাহ করা যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, দেশের ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশই লোভী। তারা সবসময় অতিরিক্ত লাভ করতে চায়। এখন বাজারে কোল্ড স্টোরেজের যে টমেটো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো নিশ্চিয়ই ১০-২০ টাকা কেজি যখন ছিল সেই সময় মজুত করা। ১০-২০ টাকা কেজি কিনে মজুত করে রাখা পণ্য এখন কেন ১৫০-২০০ টাকা হবে?
রামপুরা বাজারে বাজার করতে আসা খায়রুল হোসেন বলেন, টমেটো ও গাজর এমন সবজি যা সবকিছুতেই ব্যবহার করা যায়। এ কারণে সবসময় এই দুটি পণ্যের দাহিদা থাকে। মৌসুম না, আমদানি করতে হচ্ছে এই অজুহাতে টমেটো, গাজরের কেজি ১৫০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কিছুতেই স্বাভাবিক না। কিন্তু কিছু করার নেই, ব্যবসায়ীরা যে দাম চাইবেন আমরা সেই দামে কিনে খেতে বাধ্য। আমি না কিনলেও কেউ না কেউ তো ঠিকই কিনছে।
এমএএস/ইএ/এমএস