আন্তর্জাতিক

ভারতের ওপর হঠাৎ এত ক্ষেপলেন কেন ট্রাম্প?

যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের ফলে ভারতের ওপর মোট শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছে নয়াদিল্লি। রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার অভিযোগে এই শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তবে প্রশ্ন উঠেছে— একই কাজ চীনসহ অনেক দেশ করলেও ভারতের ওপরেই কেন এই শুল্ক রোষ? এই প্রশ্নের জবাবে ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ট্রাম্পের ‘সবচেয়ে বড় ক্ষোভ’ এখন ভারতের ওপর, কারণ ভারত তার রাজনৈতিক ‘ক্রেডিট’ নষ্ট করেছে।

ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, চীন কখনো প্রকাশ্যে ট্রাম্পের কৃতিত্ব খণ্ডন করেনি। চীনা নেতৃত্ব ট্রাম্পকে ফোন করে শেখায়নি কী সঠিক, আর কী ভুল। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে এসব ঘটেছে।

আরও পড়ুন>>

ভারতের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫০ করলেন ট্রাম্প ট্রাম্পের অপমানে হতবাক ভারত, ‘প্রকৃত বন্ধুত্বে’ ফাটল ভারতের ওপর ট্রাম্পের ৫০% শুল্কারোপে বাংলাদেশের সামনে বড় সুযোগ

সম্প্রতি কাশ্মীরের পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালানোর পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হয়েছে। কিন্তু নয়াদিল্লির দাবি, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত এসেছে পাকিস্তানের অনুরোধে এবং এতে কোনো বিশ্বনেতার ভূমিকা নেই।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই ভারতীয় পার্লামেন্টে বলেছেন, ভারতের সেনা অভিযান থামাতে কোনো বিশ্বনেতা আহ্বান জানাননি। যদিও তিনি সরাসরি ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করেননি।

কুগেলম্যানের মতে, ভারতের এই অবস্থান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিব্রত করেছে এবং সেখান থেকেই শুরু হয়েছে তার ক্ষোভের প্রকাশ।

‘এ কারণে সম্ভবত ট্রাম্প ভারতকে শুল্ক ও বাণিজ্য নীতিতে তার সবচেয়ে বড় ক্ষোভ প্রকাশের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন,’ বলেন দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এই বিশেষজ্ঞ। তার মতে, এটি দ্বৈত মানদণ্ড এবং একপ্রকার ভণ্ডামিও।

#WATCH | Washington DC | On being asked about why President Trump is not punishing China, but targeting India (for Russian imports), Director of the South Asia Institute at the Wilson Center, Michael Kugelman says, "...China has not stood out there and refused to let President… pic.twitter.com/OkDwhu7S7t

— ANI (@ANI) August 6, 2025

চীনের সঙ্গে একই ধরনের অপরাধে শাস্তির পরিবর্তে বাণিজ্য আলোচনা অব্যাহত থাকলেও ভারতের ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভারত সরকার বলছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা হয়েছে জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে। আর এর জন্য এভাবে শুল্ক বসানো অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ অন্য অনেক দেশ নিচ্ছে। শুধু ভারতের ওপরই এভাবে চাপ প্রয়োগ অন্যায্য।

অন্যদিকে, পাকিস্তান ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি স্বীকার করে তাকে ধন্যবাদ জানায় এবং এর পরপরই দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিও পায়।

এ প্রসঙ্গে কুগেলম্যান বলেন, গত দুই দশকের ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অংশীদারত্বের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় সংকট। তবে আমি বিশ্বাস করি, এই সম্পর্ক এখনও রক্ষা করা সম্ভব, কারণ এটি বহুস্তরবিশিষ্ট এবং বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার মাধ্যমে গঠিত, যা বড় ধাক্কাও সহ্য করতে পারে।

সূত্র: এনডিটিভিকেএএ/