বিড়াল, পোষা প্রাণীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আদুরে প্রাণি এটি। বিড়াল পছন্দ করেন না এমন মানুষ বোধহয় কমই আছেন। বিড়াল শুধু যে একটি পোষা প্রাণি তা কিন্তু নয়, আপনার একাকীত্বের সঙ্গী হতে পারে বিড়াল। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিড়াল মানুষের মধ্যে থাকা স্ট্রেস হরমোন (কর্টিসল) কমায় এবং সেরোটোনিন, ডোপামিন ও অক্সিটোসিন হরমোন বাড়ায়, যা মন ভালো রাখে।
আপনি যদি একজন বিড়ালপ্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে ইউরোপের মন্টিনিগ্রোর শহর কোটরে হতে পারে স্বর্গরাজ্য। মন্টিনিগ্রোর মধ্যযুগীয় পুরোনো শহর কোটর। অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের তীরে একটি মনোমুগ্ধকর, নির্জন উপসাগরের কোণে খাড়া পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত এটি।
এটির শতাব্দী প্রাচীন পাথরের দেয়াল থেকে শুরু করে ভিন্টেজ লুক আপনাকে মুগ্ধ করবে। তবে একবার এই শহরে গেলে সবচেয়ে বেশি যে ব্যাপারটির জন্য একে ছেড়ে আসতে ইচ্ছা করবে না তা হলো বিড়াল। এই শহরের রাস্তাঘাট, বাড়ি, দেয়াল সবখানেই দেখবেন বিড়াল আর বিড়াল। কোনোটিই কারো পোষা নয়, তবে সব বিড়ালই এখানে সমান যত্ন পায়।
পুরোনো শহরের মধ্যযুগীয় জাদুঘর, দোকান, বার এবং রেস্তোরাঁর গোলকধাঁধার মধ্যে অবস্থিত। খেয়াল করলেই দেখবেন রাস্তার কোণে বা ধারে বাটিতে বিস্কুট বা খাবার রাখা বিড়ালদের জন্য। এর পাশে বসে কিংবা শুয়ে আছে বিড়ালরা। এখানে শত শত, হাজার হাজার বিড়াল রয়েছে।
শহরের রেস্তোরাঁ, বার, মুদি দোকান এবং ছোট ছোট খাবারের দোকানগুলো এই বিড়ালদের খাবার সরবরাহ করে। বিশ্বাস করা হয় যে এই বিড়ালগুলো অতীতে নাবিকরা এই শহরে নিয়ে এসেছিলেন। ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, এখানে ৮ হাজার ৮৬২টি বিড়াল হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে, তাদের জনসংখ্যা কমানোর পদ্ধতি শুরু হয়েছে।
এটা বিশ্বাস করা হয় যে এই বিড়ালগুলো শহরটিকে অনেক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছে। ৪৪ বছর আগে এখানে একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যাতে শহরের অনেক ক্ষতি হয়। এছাড়া যুদ্ধের কারণে শহরের অবস্থাও খারাপ ছিল।
শহরটি বিড়াল প্রেমীদের জন্য স্বর্গের চেয়ে কম নয়! ২০১২ সালে, এখানে প্রথম বিড়াল-থিমযুক্ত স্যুভেনির দোকান খোলা হয়েছিল যার নাম ক্যাটস অব কোটর। এই দোকানের মালিক অক্সানা ট্রোশিনা বলেছেন যে এই বিড়ালগুলো শহর এবং এর বাসিন্দাদের জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসে।
জেনে অবাক হবেন যে এখানে বিড়ালর উপর তৈরি অনেক জাদুঘর খোলা হয়েছে। যারা তাদের লাভ দিয়ে বিড়ালদের খাওয়ায়। শীতের দিনে এই বিড়ালগুলিকে সাধারণ মানুষ তাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায়। এমনকি বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, এখানকার মানুষ সব সময় বাড়ির দরজা খোলা রাখতেন, যেন বিড়ালগুলো অবাধে বাড়িতে আসতে যেতে পারে।
কিন্তু মনে প্রশ্ন আসতে পারে এখানে এতো বিড়াল আসলো কীভাবে। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, ১৯১৮ সালে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান নৌবাহিনীর ‘ক্যাটারো বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত বিদ্রোহের সময় কোটর উপসাগরে তাদের বিড়াল ভর্তি জাহাজ নোঙর করেছিল। তখন থেকেই এই শহরে বিড়ালের বসবাস শুরু হয়।
আরও পড়ুন
নিঃশব্দ এক বিপ্লবী শাকিরের বৃক্ষ ভালোবাসার গল্প অতীতে যেসব রাষ্ট্রপ্রধান দেশ ছাড়েনকেএসকে/এমএস