• যান চলাচলের জন্য দুটি সেতু নির্মাণ করবে ডিএনসিসি• পথচারী চলাচলে হবে একটি পদচারী সেতু
রাজধানীর আফতাবনগর ও বনশ্রী পাশাপাশি দুটি এলাকা। পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হওয়ায় বসবাসের জন্য বাসিন্দাদের কাছে বেশ পছন্দের এলাকা দুটি। পাশাপাশি অবস্থিত হলেও আফতাবনগর ও বনশ্রীকে আলাদা করেছে মাঝখানে অবস্থিত নড়াই নদী। নদী হলেও এটি দেখতে মৃতপ্রায় খালের মতো।
খুব কাছাকাছি হওয়ার পরও খালের মতো এই নড়াই নদী আফতাবনগর ও বনশ্রী এলাকার দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক। মূলত নড়াই নদীর ওপর কোনো সেতু না থাকায় বেড়েছে এই দূরত্ব।
আফতাবনগরের লেক ভিউ রোড থেকে মেরাদিয়া কাঁচাবাজারের দূরত্ব ২০০ ফুটেরও কম। অথচ এই দূরত্বে যানবাহনে যাতায়াতে সময় লাগে আধাঘণ্টারও বেশি, বাড়তি ঘুরতে হয় প্রায় ছয় কিলোমিটার। আবার মেরাদিয়া-বনশ্রী থেকে কেউ আফতাবনগর যেতে চাইলে বাড্ডা ইউলুপ ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে দূরত্ব বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় সাত কিলোমিটারে।
যানবাহনে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার ভোগান্তি কমাতে হেঁটে যাওয়ার জন্য আফতাবনগর থেকে মেরাদিয়া, বনশ্রী ও রামপুরা বরাবর পৃথক চারটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খুব বেশি জরুরি না হলে তারা যানবাহনের পরিবর্তে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করেন। তবে সাঁকোগুলো এখন নড়বড়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। বিশেষ করে বয়স্ক ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
তবে আফতাবনগর ও বনশ্রী-মেরাদিয়াবাসীর সেই দুঃখ ঘুচবে খুব শিগগির। আশার কথা হচ্ছে, আফতাবনগরের সঙ্গে মেরাদিয়া, দক্ষিণ বনশ্রী, বনশ্রী ও রামপুরার মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি হচ্ছে। নড়াই নদীর ওপর তিনটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এক যুগের বেশি সময় ধরে সেখানে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন আফতাবনগরের বাসিন্দারা। অবশেষে তাদের সেই দাবি পূরণ হতে চলেছে।
আফতাবনগরের লেক ভিউ রোড থেকে মেরাদিয়া কাঁচাবাজারের দূরত্ব ২০০ ফুটেরও কম। অথচ এই দূরত্বে যানবাহনে যাতায়াতে সময় লাগে আধাঘণ্টারও বেশি, বাড়তি ঘুরতে হয় প্রায় ছয় কিলোমিটার। আবার মেরাদিয়া-বনশ্রী থেকে কেউ আফতাবনগর যেতে চাইলে বাড্ডা ইউলুপ ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে দূরত্ব বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় সাত কিলোমিটারে।
জহুরুল ইসলাম সিটি বা আফতাবনগরের বাসিন্দারা জানান, আফতাবনগরে সাত হাজারের বেশি প্লট রয়েছে। সব প্লটে ভবন তৈরির কাজ শেষ না হলেও সেখানে প্রায় দুই লাখ মানুষের বাস। কিন্তু তাদের যাতায়াতে রয়েছে মাত্র একটি সড়ক। যানবাহনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে তাদের এই সড়কটিই ব্যবহার করতে হয়। সেতু না থাকায় যানবাহনে খাল পারি দিয়ে বনশ্রী কিংবা সংলগ্ন অন্য এলাকায় যাওয়ার কোনো উপায় নেই। তবে নড়াই নদীর ওপর সেতু বানানো হলে আফতাবনগরের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন বলে জানান তারা।
আরও পড়ুন
আফতাবনগর-বনশ্রী সংযোগে নড়াই নদীর ওপর হবে দুই সেতু একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে ৩০ গ্রামের মানুষ ২২ গ্রামের চাঁদায় গড়া বাঁশের সাঁকো ভেঙে পড়লো কচুরিপানার চাপেরাজধানীর রামপুরা সেতু এলাকায় আফতানগরে প্রবেশের প্রধান গেট। এ গেটের ওপরে বড় করে লেখা ‘জহুরুল ইসলাম সিটি আফতাবনগর’। এখান থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আবাসিক এলাকাটি আফতাবনগর। আর আফতাবনগরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে রামপুরা খাল বা নড়াই নদী। মূলত এই নদীটিই রামপুরা ও বনশ্রীর সঙ্গে আফতানগরকে আলাদা করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আফতাবনগর একটি পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা। এ সড়ক দিয়েই আফতাবনগরের মানুষকে যানবাহনে যাতায়াত করতে হয়। বিকল্প কোনো সড়ক বা সেতু দিয়ে রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই। তবে হেঁটে যাতায়াতের জন্য মেরাদিয়া কাঁচাবাজারসহ পৃথক চারটি স্থানে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব সাঁকো দিয়ে রামপুরা ও বনশ্রীতে যাতায়াত করেন আফতাবনগরের বাসিন্দারা। এর মধ্যে মেরাদিয়া কাঁচাবাজার সংলগ্ন বাঁশের সাঁকো দিয়েই মানুষ বেশি চলাচল করেন। তবে সাঁকোটি নড়বড়ে হওয়ার কারণে বয়স্ক ও শিশুরা একা পার হতে ভয় পান।
গত এক দশকে আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিসহ বহু স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে মেরাদিয়া কাঁচাবাজার, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখাসহ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল রয়েছে খালের ওই পারে অর্থাৎ বনশ্রী ও রামপুরায়। আবার দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প দেখতে এবং ফাঁকা জায়গা থাকায় আফতাবনগরে পরিবার নিয়ে নিরিবিলি সময় কাটাতে বনশ্রী, দক্ষিণ বনশ্রী ও মেরাদিয়া এলাকা থেকেও আসেন অনেক মানুষ। প্রতিদিন সকালে এসব এলাকা থেকে হাঁটতে যান অনেক মানুষ। ফলে এসব এলাকার হাজারো মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন বাঁশের সাঁকো।
দীর্ঘদিন ধরে নড়াই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন আফতাবনগরের বাসিন্দারা। সবশেষ নিজেদের উদ্যোগে সেতু নির্মাণের চেষ্টা করে জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটি। তখন টনক নড়ে ডিএনসিসির।
আফতাবনগরের বাসিন্দা মাসুদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, নড়াই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবিতে আফতাবনগরে অনেক মানববন্ধন হয়েছে, কিন্তু কেউ তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এখন এখানে সেতু নির্মাণ হলে হাজারো মানুষের উপকার হবে।
আফতাবনগরে ইংরেজি মাধ্যমের একটি স্কুলে পড়ে দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা মনোয়ার হোসেনের ছেলে নাঈমুল ইসলাম। ছেলের স্কুলে যাতায়াতের সুবিধায় মনোয়ার এখন আফতাবনগরে বাসা ভাড়া করে থাকেন। আলাপকালে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘দক্ষিণ বনশ্রী থেকে আফতাবনগরে দিনে দুইবার যাতায়াত করতে বাচ্চার অনেক কষ্ট হতো। বাচ্চার সঙ্গে সকাল-বিকেল আমাদেরও যেতে হতো। গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে দিনে এক ঘণ্টা করে সময় লাগতো। আবার সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করাও সম্ভব ছিল না। তাই দক্ষিণ বনশ্রীতে নিজের ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে আফতাবনগরে বাসা নিয়েছি। এখন ছেলে একাই স্কুলে যেতে পারে।’
আরও পড়ুন
ব্রিজ পার হতেই লেগে যায় তিন ঘণ্টা! ‘অরক্ষিত’ হাতিরঝিল, সন্ধ্যা নামলেই আতঙ্ক সন্ধ্যা নামলেই সেতুতে সৃষ্টি হয় ভুতুড়ে পরিবেশআফতাবনগরের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মেরাদিয়া কাঁচাবাজার থেকে নিত্যপণ্য কেনেন বলে জানিয়েছেন লেক ভিউ রোডের বাসিন্দা মাহমুদা আক্তার। সম্প্রতি ওই বাজার থেকে কেনাকাটা করে ফেরার পথে তার সঙ্গে কথা হয়।
মাহমুদা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আফতাবনগরে কাঁচাবাজার নেই। কয়েকটি সুপারশপ আছে, তাও প্রধান ফটকের দিকে। এ কারণে এই এলাকার অনেকেই মেরাদিয়া থেকে কেনাকাটা করেন। এজন্য সাঁকোই ভরসা। এখন এখানে সেতু নির্মাণ হলে দুই পাড়ের মানুষই উপকৃত হবেন।’
ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই নড়াই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন আফতাবনগরের বাসিন্দারা। সবশেষ নিজেদের উদ্যোগে সেতু নির্মাণের চেষ্টা করে জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটি। তখন টনক নড়ে ডিএনসিসির। পরে গত ১৯ জুলাই ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ আফতাবনগর-বনশ্রী এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি এলাকাবাসীর সুবিধায় নড়াই নদীর ওপর তিনটি সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন আফতাবনগরের বাসিন্দারা।
জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথমে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম। এলাকাবাসী এই সেতুর মাধ্যেমে খুব উপকৃত হবে এবং তাদের এটা দাবি ছিল। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। কয়েক লাখ টাকা খরচ করে আমরা নিজস্বভাবে সেতুর পরিকল্পনা ও নকশা করেছি। আমাদের সঙ্গে এসব কাজে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে ইস্টার্ন হাউজিং কর্তৃপক্ষও।’
আফতাবনগর-বনশ্রী এলাকার মানুষের যাতায়াতে কষ্ট দূর করতে সিটি করপোরেশন থেকে তিনটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। পাশাপাশি ফুটপাতে মানুষ হাঁটতে পারবে। আর একটি পদচারী সেতু নির্মাণ করা হবে। অল্প সময়ের মধ্যে এগুলোর কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
‘পরে আমি এলাকাবাসীর পক্ষে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। দিনের পর দিন এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে, কখনো আমি এককভাবে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিটিং করেছি, এখানকার সেতুর প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়েছি। সচিবালয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে গেছি সেতুর দাবি নিয়ে। উত্তর সিটির প্রশাসক, ইঞ্জিনিয়ারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দিনের দিনের পর মিটিং করেছি, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি এখানে সেতু কতটা প্রয়োজন। আগের প্রশাসক, নতুন প্রশাসকসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আমাদের কথা শুনেছে। তারা এখন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। মোট তিনটি সেতু হবে এখানে। দুটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে বাকি একটি দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাচল করবে।’ বলছিলেন আলমগীর হোসেন ঢালী।
ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, আফতাবনগর-বনশ্রী এলাকার মানুষের যাতায়াতে কষ্ট দূর করতে সিটি করপোরেশন থেকে তিনটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। পাশাপাশি ফুটপাতে মানুষ হাঁটতে পারবে। আর একটি পদচারী সেতু নির্মাণ করা হবে। অল্প সময়ের মধ্যে এগুলোর কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জাগো নিউজকে বলেন, আফতাবনগর থেকে বনশ্রী যাওয়া-আসার জন্য প্রধান সড়ক ছাড়া বিকল্প কোনো মাধ্যম নেই। তাই এলাকাবাসীর সুবিধায় এই নড়াই নদীর ওপর তিনটি সেতু নির্মাণ করা হবে, যা এ দুটি আবাসিক এলাকার মধ্যে সহজ ও সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। প্রস্তাবিত এ সেতুর নাম হবে ‘নড়াই সেতু’। শিগগির সেতু নির্মাণে দরপত্র চূড়ান্তসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করা হবে।
এমএমএ/ইএ/এমএমএআর/এমএস