ক্যাম্পাস

ডাকসু নির্বাচন: ভোটারদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় হাইকোর্টে রিট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটার তালিকায় নারী শিক্ষার্থীদের ছবিসহ ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুরক্ষার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। রিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ও নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে করা আবেদন নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

রোববার (২৪ আগস্ট) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীর পক্ষে তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়জুল্লাহ ফয়েজ এই রিট দায়ের করেন। রিটকারীরা হলেন- আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জাকারিয়া, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রেদোয়ান মন্ডল রিফাত, ক্রিমিনিলোজির শিক্ষার্থী ফাতিমা তাসনিম ঝুমা ও বোটানি বিভাগের সাবিকুন্নাহার তামান্না।

রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ও নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে। রিটের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়জুল্লাহ ফয়েজ বলেন, অনলাইনে ছবি দিয়ে অনেক নারী শিক্ষার্থী বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তিনি জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে প্রকাশ্যে রাখা পুরুষের ছবি বা ঠিকানা সমস্যা নাও হতে পারে। তবে, নারীদের ছবি হাইলাইট করা যেতে পারে। কারণ, এর মাধ্য দিয়ে অনেক নারী শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার লঙ্ঘন হচ্ছে। কেউ কেউ বুলিংয়ের শিকারও হচ্ছেন। কারণ অনলাইন থেকে ছবি নিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে নারীদের। এসব সমস্যার সমাধান করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ও নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে করা আবেদনে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা তা নিষ্পত্তি না করায় নারী শিক্ষার্থীদের ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা সুরক্ষার জন্যে নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে আগামী রোববার (৩১ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজিব ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হতে পারে।

আরও পড়ুন ডাকসু নির্বাচনে সব প্রার্থীর ডোপ টেস্টের দাবিডাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন সাংবাদিকতা বিভাগের ২৫ শিক্ষার্থী

এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটার তালিকায় প্রকাশিত নারী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ছবি অপসারণ চেয়ে ভিসি বরাবর চিঠি দেন শিক্ষার্থীরা।

চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটার তালিকায় নারী শিক্ষার্থীদের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার গুরুতর লঙ্ঘন। ছবি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য, যা শিক্ষার্থীর অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী এরইমধ্যে মানসিক অস্বস্তি ও বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ নিকাবি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি ছিল অত্যন্ত বিব্রতকর ও বিভ্রান্তিকর পদক্ষেপ।

এতে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা এই সংবেদনশীল তথ্যগুলো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রশাসনের নজরে আসেনি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এজন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

অতএব, আমাদের বিনীত অনুরোধ–

১. দ্রুততম সময়ে নারী শিক্ষার্থীদের ছবি সংবলিত ভোটার তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হোক।

২. ভবিষ্যতে এ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ না করে বিকল্প হিসেবে শিক্ষার্থী পরিষেবার মতো রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে তথ্য দেখার একটি নিরাপদ ব্যবস্থা চালু করা হোক।

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, উপাচার্য মহোদয় দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এরপরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় রিট দায়ের করা হয় বলে জানান রিটকারীরা।

রিটকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী জাকারিয়া বলেন, ডাকসুর ভোটার তালিকাকে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের জন্য এক্সেসিবল করা এবং ভোটার তালিকা থেকে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ছবি সরিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের প্রাইভেসি রক্ষার জন্য আমরা চিফ রিটার্নিং অফিসার বরাবর আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হতে বাধ্য হয়েছি। আমরা রিট দায়ের করছি।

জাকারিয়া আরও বলেন, ভোটার লিস্টের ওপেন এক্সেসের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেসি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নারী শিক্ষার্থীরা হ্যারাসমেন্ট ও বুলিং এর শিকার হয়েছেন। আশা করি এবার প্রশাসনের টনক নড়বে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রাইভেসি রক্ষায় সতর্কতা অবলম্বন করবে এবং যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডাকসু পেছানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, অনেকে কনসার্ন জানিয়েছেন এই রিটের কারণে ডাকসু পেছাবে কি না! এমন সম্ভাবনা অমূলক এবং অবান্তর। সদিচ্ছা থাকলে প্রশাসন আজকেই এই বিষয়টির সমাধান করে ফেলতে পারে।

এফএইচ/এমএইচএ/এএমএ/জেআইএম