বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নির্বাচনে জেলা ও বিভাগের অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর করা নিয়ে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। তবে আগামী ৬ অক্টোবর বিসিবি নির্বাচনে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। একইসঙ্গে বিসিবি নির্বাচনে জেলা ও বিভাগের অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর চেয়ে চিঠি বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের পাঠানো চিঠি কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট।
বিসিবি সভাপতির চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথ এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। আর বিসিবির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জোনারেল ব্যারিস্টার আরশাদুর রউফ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ।
আদেশের পর আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নির্বাচনে অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর করা নিয়ে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের চিঠির কার্যকারিতা ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। আগের মনোনয়ন বাতিল করে নতুন করে কাউন্সিলর মনোনয়নে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ১৮ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত চিঠির বৈধতা প্রশ্নে রুলও জারি করেছেন আদালত। ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছেন। একইসঙ্গে ক্রীড়া সচিব ও বিভিন্ন জেলা সংস্থা সভাপতির কাছে পাঠানো সেই চিঠির কার্যকারিতা ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন। এতে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না।
এর আগে ক্যাটাগরি-এ তে ক্রিকেট বোর্ডে পাঠানো মনোনীত কাউন্সিলররা পরবর্তী নির্বাচনে নিযুক্ত থাকবেন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের নাম কাউন্সিলর হিসেবে চলে এসেছিল বলে জানান এ আইনজীবী।
বিসিবি সভাপতির চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে চার ব্যক্তি বাদী হয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন। রিটকারী চারজন হলেন রাজবাড়ীর মঞ্জুরুল আলম, গোপালগঞ্জের জসিম উদ্দিন খসরু, লক্ষ্মীপুরের মঈনুদ্দিন চৌধুরী এবং টাঙ্গাইলের আলী ইমাম।
বিসিবি নির্বাচন আগামী ৬ অক্টোবর। এর আগে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে কাউন্সিলর হিসেবে মনোনীত হয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিসিবিতে ফরম জমা দিয়েছিলেন সাবেক খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকরা। তবে অ্যাডহক কমিটি থেকে যেসব জেলা ক্রীড়া সংস্থা কাউন্সিলরের জন্য মনোনয়ন দেয়নি তাদের আবেদন বাতিল করেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
আরও পড়ুন
বিসিবি সভাপতির চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটবিসিবি নির্বাচন/অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
সেই সঙ্গে প্রধান নির্বাহীর পরিবর্তে নতুন করে নিজে সই করে অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর দিতে বলেন বিসিবি সভাপতি, যা নিয়ে গত দুদিন বেশ আলোচনা তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের সইয়ে ৫৩টি ফরম জমা পড়েছে বিসিবিতে। বেশ কয়েকটি জেলা ক্রীড়া সংস্থা অ্যাডহক কমিটির বাইরে গিয়ে কাউন্সিলর মনোনয়ন দিয়েছে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ঘোষিত অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর না দেওয়ায় সেগুলো বাতিল করেন বিসিবি সভাপতি। পরে নিজে সই করে অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর চেয়েছেন বুলবুল। যদিও এটা করার সুযোগ নেই। গঠনতন্ত্রের ১২ এর ৭ ধারা অনুযায়ী পুনরায় কাউন্সিলর পাঠানোর সুযোগ নেই। এছাড়া বিসিবি সভাপতিও এমন নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিসিবি নির্বাচনে জেলা ও বিভাগের অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর চেয়ে চিঠি দেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অনুমোদিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গঠনতন্ত্র (সংশোধিত ২০২৪) অনুযায়ী একটি সাধারণ পরিষদ গঠন এবং পরিচালনা পরিষদ নির্বাচন-২০২৫ আয়োজনের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার (ক্যাটাগরি-১) ‘কাউন্সিলর’ মনোনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে বোর্ডের পক্ষ থেকে গত ১ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার্ড ডাকযোগে এবং ২ সেপ্টেম্বর কুরিয়ারযোগে প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি/আহ্বায়ক বরাবর বিজ্ঞপ্তি, মনোনয়ন ফরম ও গঠনতন্ত্রের কপি প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও গত ১১ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়, যাতে তারা কাউন্সিলর মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অনুমোদিত বিসিবির গঠনতন্ত্র (সংশোধিত ২০২৪) বিশেষ করে অনুচ্ছেদ ৯.১ এর (ক) ও (খ) যথাযথভাবে অনুসরণ করেন।
এফএইচ/এসএইচএস/এমএস