বিসিবি নির্বাচন
অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
বিসিবি নির্বাচনকে ঘিরে যে ভেতরে ভেতরে অগ্নেয়গীরির লাভা তৈরি হয়েছে এবং হয়ত খুব শিগগিরই সেটারর উদ্গীরণ ঘটবে- তার পরিষ্কার আভাস মিললো সোমবার বিকেলে।
‘বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় এবং ক্লাবের সকল পর্যায়ের ক্রিকেট খেলোয়াড় ও সংগঠকবৃন্দ’র- ব্যানারে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়াসহ দেশের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর অভিভাবক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং সরকারী প্রশাসনের বিপক্ষে প্রকাশ্যে বিসিবির আসন্ন নির্বাচনে অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং চরম পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ উঠেছে।
বিসিবির এবারের নির্বাচনে যাকে ধরা হচ্ছে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, সেই তামিম ইকবালসহ বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় এবং ক্লাবের ক্রিকেট খেলোয়াড় ও সংগঠকবৃন্দের পক্ষ থেকে ফুয়াদ বিন রেদোয়ান, রফিকুল ইসলাম বাবু, সিরাজউদ্দীন মোহাম্মদ আলমগীর, মাসুদুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, কাইয়ুম চৌধুরী ও ইসরাফিল খসরু সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
তাদের প্রত্যেকের কথার সারমর্ম হলো, এবারের বিসিবি নির্বাচনী পরিবেশ এখন দূষিত। ক্রীড়া উপদেষ্টা, এনএসসি, সরকারি প্রশাসন আর খোদ বিসিবি বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অযাচিত হস্তক্ষেপেই নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ঠ হয়েছে।
এ অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধের জোর দাবি জানানোর পাশাপাশি আজকের এ সংবাদ সম্মেলন থেকে আরও ঘোষণা এসেছে, যদি নির্বাচনে এ অযাচিত হস্তক্ষেপ ও কাউন্সিলরশিপ প্রদান নিয়ে অনিয়ম, অসচ্ছ্বতা ও একপেশে মনোভাবের বদল না ঘটে, জেলা ও বিভাগ থেকে যারা বিসিবি নির্বাচনে সত্যিকারের দাবিদাররা যদি কাউন্সিলরশিপ না পান, তাদের পরিবর্তে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্যের বাইরে আর কাউকে কাউন্সিলরশিপ দেয়া না হয়, তাহলে কঠিন প্রতিরোধের ঘোষণা আসতে পারে।
প্রাথমিকভাবে আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা জানানো হয়েছে। ইশরাক হোসেন, রেদেয়ান বিন ফুয়াদ ও রফিকুল ইসলাম বাবু জানিয়েছেন, ‘তাহলে বিসিবি ঘেরাওয়ের ঘোষণাও আসতে পারে।’

জেলা ও বিভাগীয় ক্যাটাগরিতে জামালপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে কাউন্সিলরশিপ প্রত্যাশি রেদোয়ান বিন ফুয়াদ বলেন, ‘১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন বিসিবি নির্বাচন নিয়ে যেসব কর্মকান্ড সম্পাদন করেছে, তা গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়েছে। তাতে কোন সমস্যা হয়নি; কিন্তু ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত যা যা হয়েছে তার কোনটাই গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়নি।’
বিসিবি নির্বাচনে অন্যতম সভাপতি প্রার্থী তামিম ইকবাল তার বক্তব্যে বলেন, ‘ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে আমার যেদিন শেষ দেখা হয়েছিল, সেদিন আমি তাকে মূলতঃ একটাই অনুরোধ করেলিাম। তাহলো বিসিবি নির্বাচনটা যেন নিরপেক্ষ হয় এবং সেখানে যেন অযাচিত হস্তক্ষেপ না করা হয়; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, শুধু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকেই নয়, সরকারের ওপর মহল থেকেও অনেক হস্তক্ষেপ হচ্ছে। এমনকি মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকেও প্রতিটি জেলা ও বিভাগে চিঠি পাঠিয়ে কাউন্সিলর পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। যা স্পষ্ট আইনের লঙ্ঘণ। বিসিবি ও এনএসসি গঠনতন্ত্র বিরোধী।’
তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও সিনিয়র ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি আক্রমণ করেননি, তবে তামিমের দাবি, ‘বুলবুল ভাই কী করে জেলা ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে চিঠি দিয়ে তার বা তাদের পছন্দের বিশেষ করে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্যের বাইরে কাউকে কাউন্সিলরশিপ প্রদান করতে নিষেধ করেন। এটাতো তিনি পারেন না।’
বলে রাখা ভাল, প্রাথমিকভাবে ১৭ জুলাই ছিল কাউন্সিলরদের নাম বোর্ডে জমা দেয়া শেষ দিন। তা পিছিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর করা হয়; কিন্তু তাতেও হয়নি। পরে তা আরও একবার পিছিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ‘বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় এবং ক্লাবের সকল পর্যায়ের ক্রিকেট খেলোয়াড় ও সংগঠকবৃন্দ’র পক্ষ থেকে পরিষ্কার দাবি করা হয়েছে যে, নিজেদের পক্ষের লোক কাউন্সিলর না হওয়ায় দুইবার কাউন্সিলরশিপ প্রেরণের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে।
শুধু কাউন্সিলরশিপ চূড়ান্তকরণের দিনক্ষণ পেছানোই নয়, সব ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্যের বাইরে কাউকে কাউন্সিলর করা যাবে না।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই কয়েকটি জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটিতে পরিবর্তন করা হয়েছে। মোহাম্মদ আশরাফুলের জায়গায় বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে ঢাকা বিভাগের অ্যাডহক কমিটির সদস্য করা হয়েছে। একইভাবে সাথিরা জাকির জেসিকে পরিবর্তন করে ঢাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্য করা হয়েছে নাজমুল আবেদিন ফাহিমকে।
সোমবার দুপুরে স্থানীয় এক হোটেলে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সন্মেলনে কথা বলতে গিয়ে বিসিবির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘ক্রিকেট কোনো গোষ্ঠি বা দলের নয়। গোটা দেশের। কিন্তু সেই ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অযাচিত হস্তক্ষেপ হচ্ছে এবং তা নিয়ে যে একটা উত্তেজক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে , সেটা কারোরই কাম্য নয়।’
সকল জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘তারা যেন একটু চিন্তা করে মনোনয়ন প্রদান করেন।’ বাবুর শেষ কথা, ‘আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। যাতে করে ক্রিকেট রাহুমুক্ত হতে পারে।’
ব্রাদার্স ইউনিয়র ক্লাবের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন শঙ্কা নিয়ে বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিসিবি নির্বাচন নিয়ে যে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে , তাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সম্ভাবনা গেছে কমে। সরকারী প্রশাসন জেলা ও বিভাগীয় কাউন্সিলরশিপ প্রদানে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের ওপর সরাসরি চাপ প্রয়োগ করেছে এবং তাদের (সরকারের) পছন্দর লোকজনকে কাউন্সিলরশিপ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। যা সরাসরি বিসিবি গঠনতন্ত্র বিরোধী এবং আইনের পরিষ্কার লঙ্ঘন। ইশারক হোসেন সরকারি প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, প্রশাসন তাদের হস্তক্ষেপ অব্যাহত রেখে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে আমরাও প্রতিবাদে সোচ্চার হবো এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
এআরবি/আইএইচএস/