রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ে গঠিত প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির খসড়া অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছে ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীরা। তারা যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেলে সাত কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালুর দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ইডেন মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
অধ্যাদেশ বিষয়ে ইডেন শিক্ষার্থীদের সুস্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রীরা বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ খসড়া অধ্যাদেশ আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। অবিলম্বে এ অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। সরকারি ৭ কলেজে কোনো পরীক্ষামূলক বিশ্ববিদ্যালয় মডেল চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। আমরা চাই, সাত কলেজের জন্য অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি মডেল ফলো (অনুসরণ) করা হোক। যেখানে সব কলেজের স্বাতন্ত্রতা বজায় থাকবে; প্রতিটি বিভাগে অন্তত ১৬ জন শিক্ষক ও গবেষণা বাজেট থাকবে; স্ব স্ব কলেজে ফাইনাল পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে; পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে ফলাফল প্রকাশ সর্বক্ষত্রে বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রীরা বলেন, ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাত কলেজের সমস্যা সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটির ৬টি কার্যপরিধির মধ্যে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক ছিল সাত কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি বাতিল করে স্বতন্ত্র সত্তা বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ কাঠামো প্রস্তাব করা। সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ইউজিসি ও কমিটির সদস্যরা এ কার্যপরিধির বাইরে গিয়ে বাস্তবতা-বিবর্জিত একটি হাইব্রিড মডেল দাঁড় করিয়েছেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কার স্বার্থে পরীক্ষামূলক মডেল চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে? এর পেছনে কারা? প্রাইভেট কলেজ নাকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়?
ইডেন শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাবির বৈষম্য দূরীকরণ ও উচ্চশিক্ষার আধুনিকায়নের মহৎ লক্ষ্যকে সামনে রেখে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে একটি সামষ্টিক আন্দোলনের সূচনা করেছিল। কিন্তু এ আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ একপর্যায়ে গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে চলে যায়। তারা তাদের অতি-উগ্রতা, অশোভন আচরণ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিটি ক্যাম্পাসে অরাজকতার আগুন জ্বালিয়ে চলেছে। অনলাইন কিংবা অফলাইনে যখনই তাদের মতের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য এসেছে, তখনই সাধারণ ছাত্র, নারী শিক্ষার্থী এমনকি অভিভাবক পর্যন্ত কুৎসিত ট্যাগিং, গালাগালি এবং মানসিক হেনস্তার শিকার হয়েছেন। অথচ দুঃখজনক এসব ঘটনার মধ্যেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির খসড়া অধ্যাদেশ প্রকাশ করা হলো।
তারা আরও বলেন, সাত কলেজের প্রতিটি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন, সাধারণ শিক্ষক, অ্যালামনাই এবং শিক্ষার্থীদের সরাসরি আলোচনায় সম্পৃক্ত করতে হবে। ৭ দিনের সময় বেঁধে প্রহসনমূলক ই-মেইলের মাধ্যমে মতামত গ্রহণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সময়োপযোগী, টেকসই ও গণতান্ত্রিক অধ্যাদেশ প্রণয়নের জন্য একটি নতুন শিক্ষা কমিশন বা নতুন রিভিউ কমিটি গঠন করতে হবে; ইডেন মহিলা কলেজে সহশিক্ষা কার্যক্রম কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না; এছাড়া পর্যাপ্ত পরিবহন, লাইব্রেরি, কমপিউটার ল্যাব, আবাসন সুবিধা, উন্নত খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ফ্রি ওয়াইফাই ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকবে।
এছাড়া নারী শিক্ষার উন্নতির জন্য একজন দানবীর ইডেন মহিলা কলেজের জমি দান করেছিলেন, সুতরাং স্থাবর ও অস্থাবর সকল সম্পত্তি কলেজের নামে সংরক্ষিত থাকবে বলেও জানান তারা। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ‘কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এসব সম্পদের মালিকানা হস্তান্তর করা যাবে না; নারী শিক্ষার সংকোচন অগ্রহণযোগ্য। ইডেন মহিলা কলেজ ও বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ বহু বছর ধরে মেয়েদের নিরাপদ ও সাশ্রয়ী উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিয়েছে। আমরা চাই, আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হোক।
এ সময় তারা খসড়া অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করে নতুন শিক্ষা কমিশন বা নতুন রিভিউ কমিটি গঠন করে বাস্তবসম্মত সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় ইডেন শিক্ষার্থীরা রাজপথে আন্দোলনে নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
এএএইচ/এমআরএম/জিকেএস