বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ছিল সাইফ পাওয়ারটেক। সরকারের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত ছিল প্রতিষ্ঠানটির মালিক তরফদার রুহুল আমিনের সখ্য। প্রভাব কাজে লাগিয়ে একের পর এক কাজ বাগিয়ে নেওয়া সাইফ পাওয়ার এখন টিকে থাকতে বিএনপি নেতার প্রতিষ্ঠানের আশ্রয় নিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের ১৭ বছরে বন্দরের টার্মিনাল অপারেশন, মূল্যবান যন্ত্রপাতি সরবরাহ, নতুন টার্মিনাল নির্মাণের ঠিকাদারি, বন্দরের অর্থায়নে কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ে নৌবাহিনীর সাব-ঠিকাদারি, মোংলা বন্দরে ১৬শ কোটি টাকার মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণসহ এমন কোনো বড় কাজ নেই সাইফ পাওয়ার করেনি।
এরই ধারাবাহিকতায় নগরীর হালিশহরে রেলওয়ের জায়গায় চট্টগ্রাম বন্দরের এক কিলোমিটারের মধ্যে বেসরকারি ডিপো হিসেবে নতুন মাল্টিমোডাল কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও অপারেশনের কাজ পায় সাইফ পাওয়ার গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সাইফ লজিস্টিক অ্যালায়েন্স। এ নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কনটেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) সঙ্গে চুক্তিও হয়।
সিসিবিএল একটি সরকারি সংস্থা। ওই সময়ে বন্দরের কনটেইনার জট মোকাবিলার জন্য নতুন অফডক করার দিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। সরকারি সংস্থা বিবেচনায় নিয়ে অফডকটি নির্মাণের জন্য একটি অনাপত্তি দেওয়া হয়।- বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক
কিন্তু অফডক নীতিমালা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন অফডক করার সুযোগ নেই। পাশাপাশি চুক্তিবদ্ধ নির্মাণাধীন অফডকের জায়গায় রয়েছে শতবর্ষী মসজিদ, মাজার ও কবরস্থান।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে অন্য প্রকল্পগুলোও যখন প্রায় স্থবির হয়ে পড়ছে, তখন তরফদার রুহুল আমিন হালিশহরে রেলওয়ের জমিতে নির্মাণাধীন অফডকের নির্মাণকাজে অংশীদার করেন চট্টগ্রামের প্রভাবশালী বিএনপি নেতা গিয়াস কাদের চৌধুরীর মালিকানাধীন কিউসি গ্রুপকে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রকল্প এলাকায় ঝোলানো হয়েছে কিউসি কনটেইনার টার্মিনাল অ্যান্ড লজিস্টিকস লিমিটেডের সাইনবোর্ড। সংশ্লিষ্টরা এখানে কিউসি গ্রুপকে সাইফ পাওয়ারের ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ হিসেবে দেখছেন।
নীতিমালায় সুযোগ নেই, তবু চলছে সিসিবিএলের অফডক নির্মাণ২০১৬ সালের ২ মে প্রকাশিত চট্টগ্রাম বন্দরের ‘বেসরকারি আইসিডি/সিএফএস নীতিমালা-১০১৬’ অনুযায়ী যানজট বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট বন্দর এলাকা থেকে ন্যূনতম ২০ কিলোমিটার দূরে আইসিডি/সিএফএস স্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের ১৪তম পোর্ট অ্যাডভাইজরি কমিটির সভায় চট্টগ্রাম শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলো শহরের বাইরে সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
আমাদের রেলওয়ের শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের লোকজনের কবর রয়েছে। এখনো কেউ মারা গেলে দাফন করা হয়। কবরস্থানের জন্য অন্য কোথাও জায়গাও নেই। রেলের উন্নয়ন হোক। কিন্তু মসজিদ, কবরস্থানের জায়গা দখল করে এখানে ডিপো নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।- শ্রমিক দল নেতা সাবের আহমদ
একইভাবে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর তারিখের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বেসরকারি ডিপো স্থাপন নীতিমালায়ও (বেসরকারি আইসিডি/সিএফএস বা অফডক স্থাপন ও পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২১) ‘প্রস্তাবিত আইসিডি/সিএফএস বন্দর এলাকা হতে অন্তত ২০ কিমি দূরে অবস্থিত হতে হবে’ উল্লেখ করা হয়।
তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও চট্টগ্রাম বন্দরের দুই নীতিমালায়ই বন্দর এলাকার ২০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন কোনো অফডক নির্মাণের সুযোগ না থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দরের এক কিলোমিটারের মধ্যেই রেলওয়ের জায়গায় শুরু হয়েছে সিসিবিএল-সাইফ লজিস্টিকের সেই মাল্টিমোডাল কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ।
আরও পড়ুনবেসরকারি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে চার্জ বৃদ্ধি, রপ্তানিতে নতুন শঙ্কা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য শিল্পকে ঝুঁকিতে ফেলবে বাড়তি বন্দর মাশুল বিদেশি ব্র্যান্ডের দখলে মেরিন পেইন্টের বাজার
সিসিবিএল সূত্রে জানা যায়, নগরীর হালিশহর সিজিপিওয়াই সংলগ্ন এলাকার রেলওয়ে নিজেদের ২১ দশমিক ২৯ একর জায়গায় নতুন অফডক করার জন্য ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সাইফ লজিস্টিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় সিসিবিএল।
বিষয়টি আমি পুরোপুরি জানি না। আমার ছেলে হালিশহরে রেলওয়ে ডিপোটির কাজ করছে।- কিউসি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী
এর আগে বেসরকারি এ ডিপো নির্মাণের জন্য সিসিবিএল টেন্ডার ডাকলে সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্সসহ ১৪টি প্রতিষ্ঠান শিডিউল সংগ্রহ করে। কিন্তু দরপত্রের জটিল কঠিন শর্তের বেড়াজালে ১৩ প্রতিষ্ঠানই দরপত্র জমা দিতে পারেনি। ওই সময়ে বিদ্যমান ১৯টি বেসরকারি ডিপো পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ সেই দরপত্রে অংশ নিতে পারেনি।
অভিযোগ রয়েছে, টেন্ডারে এমন শর্ত রাখা হয়েছে যাতে কেবল সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্স টেন্ডার ডকুমেন্ট জমা দিতে পারে। পরবর্তীসময়ে একমাত্র অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্সকে কাজটি দেয় সিসিবিএল। ওই চুক্তির পর ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি সাইফ লজিস্টিকসকে প্রকল্পের জায়গা হস্তান্তর করে সিসিবিএল। পরবর্তী ৫ ফেব্রুয়ারি ডিপোর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
তবে ২০২৩ সালের ২ জুলাই সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্স লিমিটেডের (এসএলএএল) নামে মাল্টিমোডাল কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার লাইসেন্স দেয় এনবিআর। পরবর্তীসময়ে মাত্র পাঁচদিনের মাথায় ৬ জুলাই সেই লাইসেন্স প্রত্যাহার করে নেয়।
সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্সের সঙ্গে সিসিবিএলের এখনো চুক্তি বলবৎ। কিউসি সাইফের সঙ্গে পার্টনার হচ্ছে। তারা (কিউসি) সাইফের কন্ট্রাক্টর কাম টার্মিনাল অপারেটর হিসেবে ওখানে আসছে।- সিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিয়াজাহান
এ বিষয়ে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিসিবিএল একটি সরকারি সংস্থা। ওই সময়ে বন্দরের কনটেইনার জট মোকাবিলার জন্য নতুন অফডক করার দিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। সরকারি সংস্থা বিবেচনায় নিয়ে অফডকটি নির্মাণের জন্য একটি অনাপত্তি দেওয়া হয়।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভূঞা এবং উপ-কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) এইচ এম কবিরকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা দিলেও সাড়া দেননি।
নীতিমালা অনুযায়ী বন্দর এলাকার ২০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন অফডক নির্মাণের সুযোগ না থাকলেও এক কিলোমিটারের কম দূরত্বের মধ্যে কীভাবে নতুন ডিপো নির্মাণ করা হচ্ছে?- এমন প্রশ্নের জবাবে বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিসিবিএল একটি সরকারি সংস্থা হিসেবে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অফডক করার অনুমতি দিয়েছিল।’
ডিপো নির্মাণে মাজার-কবরস্থানের জায়গাওনির্মাণাধীন মাল্টিমোডাল কনটেইনার ডিপোর চুক্তিবদ্ধ জায়গায় রয়েছে শতবর্ষী মাজার, কবরস্থান এবং মসজিদ। রেলওয়ে সিসিবিএলকে ডিপো নির্মাণের যে জায়গা হস্তান্তর করে তাতেও জমির বর্তমান শ্রেণি হিসেবে কবরস্থান, মসজিদের কথা উল্লেখ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মাজারটিতে কোনো ওরস হয় না। শুক্রবারসহ ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতে স্থানীয় মুসল্লিরা দোয়া-জেয়ারত করেন। পাশাপাশি কবরস্থানে রয়েছে সাড়ে চারশর বেশি কবর। এসব কবর প্রয়াত রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের লোকজনের। ডিপো নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে সম্প্রতি কবরস্থান থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে গোরখোদককে। ডিপোর নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে কবর-মসজিদ উচ্ছেদ আতঙ্কে রেলওয়ে কলোনির বাসিন্দারা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সম্পাদক লোকোমাস্টার জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘হালিশহরে সিজিপিওয়াই সংলগ্ন কলোনিতে রেলওয়ের সাতটি ট্রেডের আড়াই হাজার লোকের বসবাস। শতবর্ষী একটি মসজিদ রয়েছে। পাশের কবরস্থানে আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রায় সাড়ে চারশ মানুষের কবর রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে মসজিদ, মাজার ও কবরস্থানের জায়গা মিলে ২১ দশমিক ২৯ একর জায়গা কনটেইনার ডিপো করার জন্য ইজারা দেয় রেলওয়ে। এ নিয়ে এলাকার রেল কর্মচারীরা ক্ষোভে ফুঁসছে। শ্রমিক-কর্মচারীরাও বিক্ষুব্ধ।’
জাতীয়তাবাদী রেল শ্রমিক দল জেটি শাখার সভাপতি সাবের আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের রেলওয়ের শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের লোকজনের কবর রয়েছে। এখনো কেউ মারা গেলে দাফন করা হয়। কবরস্থানের জন্য অন্য কোথাও জায়গাও নেই। রেলের উন্নয়ন হোক। কিন্তু মসজিদ, কবরস্থানের জায়গা দখল করে এখানে ডিপো নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও সিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিয়াজাহান জাগো নিউজকে বলেন, ‘কবরস্থান কবরস্থানের জায়গায় থাকবে, মসজিদ মসজিদের জায়গায় থাকবে। ওগুলো আগে থেকেই আছে। ওখানে রেলওয়ের কর্মচারীদের যারা মারা যান, তাদের সমাহিত করা হয়, এটা থাকবে। প্রকল্পের জায়গাটি একটি লট। এর মধ্যে কিছু কলোনি আছে, কিছু কবর আছে। সেগুলো বাদ দিয়েই বাকি জায়গায় ডিপো হবে।’
মসজিদ পুনর্স্থাপন করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কবরস্থানে আমরা হাত দেবো না। আমরা চিটাগাং-লাকসাম ডাবল লাইনে পাঁচটি নতুন দৃষ্টিনন্দন মসজিদ করে দিয়েছি। এখানেও যদি প্রয়োজন পড়ে মসজিদ পুনর্স্থাপন করা হবে।’
রাজনৈতিক আশ্রয়ে চলছে কাজ২০২২ সালে অফডকটির নির্মাণকাজ শুরু করলেও ভৌত কাজ তেমনটি এগোয়নি। শর্ত অনুযায়ী চুক্তির দুই বছরের মধ্যে ডিপোর নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই নির্ধারিত সময়ে ডিপো নির্মাণ করতে ব্যর্থ হয় সাইফ লজিস্টিকস।
সরকারের পতনের পর শক্তি খর্ব হয়ে আসা তরফদার রুহুল আমিনের ব্যবসায় ভাটা পড়ে। একে একে হাতছাড়া হতে থাকে সিসিটি-এনসিটি পরিচালনা, ঢাকা আইসিডির কাজ। সবশেষ দেখা যায়, মাল্টিমোডাল কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের সাইফ লজিস্টিকসের সাইনবোর্ড রাতারাতি পাল্টে উঠে যায় কিউসি কনটেইনার টার্মিনাল অ্যান্ড লজিস্টিকস লিমিটেডের।
সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় সাঁটানো সাইটবোর্ড পর্যালোচনা দেখা যায়, সাইনবোর্ডে লেখা আছে প্রকল্পের নাম- মাল্টিমোডাল কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা, উদ্যোক্তা- কনটেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান) এবং বাস্তবায়ন ও পরিচালনা- কিউসি কনটেইনার টার্মিনাল অ্যান্ড লজিস্টিকস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পরিবারের মালিকানাধীন কিউসি গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে কিউসি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন সদ্য পদ স্থগিত হওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাইফ পাওয়ার ব্যবসা ধরে রাখতে রাজনৈতিক আশ্রয় হিসেবে কিউসি গ্রুপকে বেছে নিয়েছে। এ বিষয়ে কথা হলে কিউসি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক জে এ এম ইকবাল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাইফ পাওয়ারের পক্ষে নয়, সিসিবিএলের পক্ষে হালিশহরে মাল্টিমোডাল কনটেইনার ডিপো নির্মাণ করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিউসি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি পুরোপুরি জানি না। আমার ছেলে হালিশহরে রেলওয়ে ডিপোটির কাজ করছে।’
সাইফ পাওয়ারকে শেল্টার দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তা নয়, আমার ছেলেসহ কয়েকজন মিলে ডিপোটি করছে।’ কনটেইনার ডিপোর নির্মাণে কিউসি গ্রুপের সিভিল কাজের আগের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া তিনি বলেন, ‘ও (গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে) সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়ে সিভিল কাজগুলো করছে।’ তবে সিসিবিএল কিংবা সাইফ পাওয়ারের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য দেননি।
পরে এ বিষয়ে কথা হলে ডিপো নির্মাণে বর্তমানে মাটি ভরাটের কাজ চলছে বলে জানিয়ে সিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিয়াজাহান বলেন, ‘সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্সের সঙ্গে সিসিবিএলের এখনো চুক্তি বলবৎ রয়েছে।’
প্রকল্পে কিউসি কীভাবে যুক্ত হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিউসি সাইফের সঙ্গে পার্টনার হচ্ছে। তারা (কিউসি) সাইফের কন্ট্রাক্টর কাম টার্মিনাল অপারেটর হিসেবে ওখানে আসছে।’
সাইফ লজিস্টিকসের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাইফের সঙ্গে সিসিবিএলের চুক্তিতে ইপিসি (ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন) কন্ট্রাক্টর নিয়োগ ও অপারেটর নিয়োগ নেওয়ার বিষয়ে প্রভিশন রয়েছে।’
রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য কিউসিকে নেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাইফ এতদিন নিউমুরিং চালাচ্ছিল, ওখান থেকে বের করে দিয়েছে। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে, সেও (তরফদার) বিপদের মধ্যে আছে।’
সাইফ পাওয়ারের বিভিন্ন প্রকল্প আটকে থাকার তথ্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘মোংলা বন্দরে দুটি জেটি কনস্ট্রাকশন করতে গিয়ে তার (সাইফ পাওয়ার) ৮শ কোটি টাকা পশুর নদীর জলের মধ্যে পড়ে আছে, কমপ্লিট করতে পারেনি। এখন তিনি (তরফদার) ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণও পান না, কাজও শেষ করতে পারেন না। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে তিনি (তরফদার) জেটি নির্মাণে টাকা ইনভেস্ট করছেন। টাকা কন্ট্রাক্টর হিসেবে ফেরত পেয়েছেন, কিন্তু পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালটি নিয়ে গেছে। নিউমুরিং নৌবাহিনী নিয়েছে, এটাও হয়তো ভবিষ্যতে অন্য কেউ নিয়ে যাবে। ঢাকা আইসিডিতে একটি কাজ করতেন। সেটিও টেন্ডার হচ্ছে, এখন কে পায় কে জানে? এটা তো (কিউসিকে পার্টনার নেওয়া) তিনি করতেই পারেন।’
এ বিষয়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্সের কর্ণধার তরফদার রুহুল আমিন। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বিষয় উল্লেখ করে বক্তব্য চাইলেও তিনি সাড়া দেননি।
এমডিআইএইচ/এএসএ/এমএফএ/জিকেএস