সড়কের বেহাল দশার কারণে পাইকগাছা-কয়রা উপজেলার বাসিন্দাদের খুলনায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার কাজ ফেলে রাখায় যাতায়াত ব্যবস্থার দুর্ভোগে ব্যবসা বাণিজ্যেও পিছিয়ে পড়ছেন স্থানীয়রা। শুকনো মৌসুমে ধুলা-খোয়া ও বৃষ্টির সময় বড় গর্তে জমা পানি স্থানীয়দের নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক সংস্কার চলছে কচ্ছপের গতিতে। তারা দ্রুত সড়টির সংস্কার দাবি করেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে একনেকে ৩৩৯ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদনের পর খুলনা-পাইকগাছা সড়ক প্রশস্তকরণ ও সংস্কার কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে তিন দফা সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে এ প্রকল্প ব্যয় বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫৩৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। প্রায় ৬০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত, সংস্কার ও ৩৪টি বাঁক সরলীকরণ করা হচ্ছে এ প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। চলতি বছরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, খুলনা থেকে পাইকগাছা-কয়রা প্রধান সড়কের পৌর সদরের জিরো পয়েন্ট, মানিকতলা, নতুন বাজার, আগড়ঘাটা, গোলাবাড়ী, মুচির মোড় (পুকুর) ও কপিলমুনি হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কটির বিভিন্ন স্থানে বড়বড় গর্ত। গর্তে পানি জমে রয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে যায়। বেশিরভাগ জায়গায় বালি-কাদা। হেলেদুলে যানবাহন চলাচল করছে। সড়কটির বেশিরভাগ জায়গা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক সময় মালবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন গর্তে আটকে যায়।
আরও পড়ুন:সংস্কারের পরেও বেহাল মাদারীপুর-শরীয়তপুর সড়ক, দুর্ভোগ চরমেযাতায়াত দুর্ভোগে ৪০ শতাংশ পর্যটক কমেছে সিলেটে
স্থানীয়দের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ এলাকার প্রায় দুই থেকে তিনশত মিটার সড়কের কাজ ফেলে রেখেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। খুলনা-পাইকগাছা-কয়রা রুটের একটি মাত্র রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শতশত যান চলাচল করে। কিন্তু সামান্য বৃষ্টি হলে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। মুচির পুকুর নামক স্থানে প্রতিদিন ভারী যানবাহন গর্তে আটকে পড়ে। শুকনো মৌসুমে ধুলাবালি আর বৃষ্টির মৌসুমে কাঁদা পানিতে চলাচলের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এছাড়া জরুরি অবস্থায় অসুস্থ রোগী নিয়ে সহজে যাতায়াত করতেও নানান সমস্যায় পড়তে হয়। অ্যাম্বুলেন্স কিংবা যানবাহন সহজে এ রাস্তা দিয়ে যেতে চায় না।
‘বাস-ট্রাক তো বাদ দিলাম ভ্যান-ইজিবাইকে চলাচল করাও এখন দুষ্কর। দিনের বেলা একিয়ে বেকিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে আর সন্ধ্যার পর এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গেলে মুখ থুবড়ে গর্তে পড়তে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন থাকায় দুই উপজেলার সাধারণ মানুষের প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
পাইকগাছা উপজেলার বাসিন্দা হাসান মোল্ল্যা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া এ রাস্তায় উঠতে ইচ্ছা করে না। স্থানীয় মানুষের কাছে সড়কটি এখন আজাবে পরিণত হয়েছে। কাজ অর্ধেক করে ফেলে রেখেছে। যার কারণে আরো বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের। সড়কটির বেহাল দশার কারণে এ অঞ্চলের মানুষ ব্যবসা বাণিজ্যে উন্নতি করতে পারছে না। দ্রুত যাতায়াতে একদিকে ভোগান্তি হচ্ছে অন্যদিকে বড় ছোট দুর্ঘটনা প্রায় ঘটছে।
বাস চালক তোহা শেখ বলেন, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন খুলনা থেকে পাইকগাছা ও কয়রা রুটে বাস ট্রাকসহ অনেক বেশি যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু রাস্তার এমন অবস্থা খারাপ হওয়াতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একদিকে শরীরের কষ্ট, অন্যদিকে কোনো যানবাহনের অবস্থা ভালো নেই। প্রায় সময় বাসের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
তিনি আরও বলেন আগে একটি বাসের পাইকগাছা থেকে খুলনায় যেতে সময় লাগতো দেড় ঘণ্টা। এখন সড়কের এমন খারাপ অবস্থার কারণে সময় লাগে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা। ফলে জ্বালানি খরচও বেড়ে গেছে।
আরও পড়ুন:দুদকের নজরবন্দি খুলনার ১০ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানএক যুগে ভোগান্তি না কাটলেও নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ১৬০ কোটি টাকা
শিক্ষার্থী তাপোষ গোলদার বলেন, বাস-ট্রাক তো বাদ দিলাম ভ্যান-ইজিবাইকে চলাচল করাও এখন দুষ্কর। দিনের বেলা একিয়ে বেকিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে আর সন্ধ্যার পর এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গেলে মুখ থুবড়ে গর্তে পড়তে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন থাকায় দুই উপজেলার সাধারণ মানুষের প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
‘বাঁক সরলীকরণের জন্য এই সড়কে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জটিলতা ছিল। জটিলতা দূর হয়েছে। সড়কের অন্যান্য জায়গার কাজ শেষ। যেখানে ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা ছিল সেখানে কাজ বাকি আছে, তবে তা খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে।’
পাইকগাছা-কয়রা নাগরিক ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, একটি অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হলে অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়ে। ঠিক তেমনি ভাবে কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা অর্থনৈতিকভাবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কয়রা থেকে খুলনা জেলা শহর একশত কিলোমিটার যেতে ৪-৫ ঘণ্টা এবং পাইকগাছা থেকে খুলনা শহরে ৬০ কিলোমিটার যেতে সময় লাগে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। একদিকে ভোগান্তি অন্যদিকে সময় নষ্ট।
তিনি আরও বলেন, আমরা নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে গত বছর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনীনের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো সুফল মেলেনি। দিনদিন যেন ভোগান্তি আরও বেড়ে চলেছে।
উপজেলা ইউএনও নাজনীন বলেন, বাঁক সরলীকরণ ও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা থাকায় কাজ আটকে ছিল। এছাড়া এ বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে।
খুলনা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তানিমুল হক বলেন, বাঁক সরলীকরণের জন্য এই সড়কে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জটিলতা ছিল। জটিলতা দূর হয়েছে। সড়কের অন্যান্য জায়গার কাজ শেষ। যেখানে ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা ছিল সেখানে কাজ বাকি আছে, তবে তা খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে।
আরিফুর রহমান/এমএন/জেআইএম