বছরের পর বছর মামলার জটিলতা আর প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বগুড়ায় জব্দ হয়ে পড়ে থাকা শত শত গাড়ি এখন ভাঙাড়িতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে আছে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। অধিকাংশই আর ব্যবহারযোগ্য নেই। এতে মামলার আলামত নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কোটি কোটি টাকার সম্পদ হারাচ্ছে রাষ্ট্র।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বগুড়ার বিভিন্ন থানার মাঠ ও পুলিশ লাইন্সের মালখানার চত্বর এখন প্রায় পরিত্যক্ত যানবাহনের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। কোথাও প্রাইভেটকার গিলে ফেলেছে ঝোপঝাড়, কোথাও মরিচায় ঢেকেছে ট্রাক ও পিকআপে। মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অচল হয়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় বছরকে বছর এসব যানবাহন পড়ে থাকে। পরে এগুলো বিক্রির অযোগ্য হয়ে যায়।
কাহালু মাগুরা এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘গাড়িগুলো বছরের পর বছর বাইরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। মামলা শেষে দেখা যায় গাড়ি ভাঙাড়ি হয়ে গেছে।’
বগুড়া জেলা পুলিশের হিসাবে, জেলায় বর্তমানে জব্দকৃত যানবাহনের মধ্যে রয়েছে মাইক্রোবাস ৯টি, প্রাইভেটকার ৪৯টি, ট্রাক ও পিকআপভ্যান ৫৮টি, সিএনজি অটোরিকশা ১৯টি, মোটরসাইকেল ৪১৫টি, ইজিবাইক ২৮টি, ভ্যান ৫টি ও সাইকেল ৪টি। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মামলায় আরও ২৪৬টি গাড়ি জব্দ অবস্থায় আছে। সব মিলিয়ে এক হাজারের বেশি যানবাহন এখন পড়ে আছে অযত্নে।
আরও পড়ুন- তিন বছর পর উন্মুক্ত কেওক্রাডং পর্বত, পর্যটকের ভিড়আধা কিলোমিটার সড়কের অভাবে কাজে আসছে না ৯ কোটির সেতু১০ মাস ধরে ঝুলে আছে ১০ দিনের তদন্ত
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান বলেন, ‘পুলিশের হাতে এসব গাড়ি সংরক্ষণের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। আলাদা গ্যারেজ বা মালখানা না থাকায় গাড়িগুলো খোলা আকাশের নিচেই পড়ে থাকে। বছরের পর বছর মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় এগুলো অকেজো হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত নিলাম সম্ভব হলে রাষ্ট্রের তহবিলে বিপুল অর্থ যোগ হতো।’
বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল বাছেদ বলেন, ‘জব্দ যানবাহনের জন্য পৃথক মালখানা থাকলে হয়তো সংরক্ষণ করা যেত। কিন্তু এখানে তা নেই। বিগত সরকারগুলো এলোমেলোভাবে কাজ করেছে। ফলে মামলার আলামত নষ্ট হচ্ছে। জেলা জজের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’
আইনজীবী ও স্থানীয়রা বলছেন, মামলার দীর্ঘসূত্রিতা ও অবহেলার কারণে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। মামলার নিষ্পত্তি শেষে এসব গাড়ি নিলামে তোলা হলে রাজস্ব আসত, আর মালিকদেরও ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে যেত।
এফএ/এএসএম