দেশজুড়ে

৪৫ বছরেও শুরু হয়নি ফুলবাড়ী উপশহর প্রকল্পের কাজ

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার উপশহর প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা প্রায় ১২ একর জমি ৪৫ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দীর্ঘ এই সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় জমি চলে যাচ্ছে অবৈধ দখলদারদের কবলে। তবে দীর্ঘ ৪৫ পর এই জমি নিয়ে নতুন করে চিঠি চালাচালি শুরু হয়েছে।

জেলা শহর ছাড়াও উপজেলা শহরগুলোতে চাপ বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ও পরিকল্পিত নগরায়নের কথা চিন্তা করে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার জন্য ‌‘উপশহর প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে ফুলবাড়ী পৌর শহরের থানার উত্তর দিকে কানাহার মৌজার ১০ দশমিক ৯৪ একর ও গৌরীপাড়া মৌজার শূন্য দশমিক ৮৫ একরসহ মোট ১১ দশমিক ৭৯ একর জমি অধিগ্রহণ করে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ পরিশোধ করা হয় পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার ২৬০ টাকা।

১৯৮০ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য খুঁটি স্থাপন এবং অন্যান্য নাগরিক সুবিধা দেওয়ার কাজ শুরু হয়। কিন্তু ১৯৮১ সালে সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় সেই উপশহর প্রকল্পের কাজ। সেই থেকে অধিগ্রহণ করা প্রায় ১২ একর জমি ৪৫ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব জমি চলে যাচ্ছে অবৈধ দখলদারদের হাতে।

উপশহরের এই জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে প্রকাশ্যে নিলামে লিজ দেয় উপজেলা পরিষদ। তবে ২০২১ সালে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ পুনরায় জমির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইলে দেখা দেয় জটিলতা। শুরু হয় উপজেলা প্রশাসন ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চিঠি চালাচালি। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকে উপশহরের জায়গা দখল করে ধানসহ বিভিন্ন চাষাবাদ করছেন। কেউ কেউ আবার শুরু করেছেন অবকাঠামো নির্মাণ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপশহরের জন্য তৈরি করা পাকা রাস্তা ও বিদ্যুতের খুঁটি এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জমির বড় অংশে স্থানীয়রা ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন। কোথাও আবার উঠেছে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড, দোকানপাট এবং স্থায়ী অবকাঠামো। ক্রমে পুরো জমিই চলে যাচ্ছে অবৈধ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসাহাক আলী বলেন, ‘জমিটি উপজেলা পরিষদ থেকে ফেরত নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন এবং শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রস্তাবনা তৈরি করা আছে। জমি ফেরত পেলেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’

জানতে চাইলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের দিনাজপুর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বাদল কুমার মন্ডল বলেন, ১৯৮৪ সালে জমিটি উপজেলা প্রশাসনকে হস্থান্তর করা হয়। পরে উপশহর প্রকল্পের জন্য জমি ফেরত চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জমি ফেরতের মতামত দিয়েছেন। এখন জেলা প্রশাসক জমি বুঝিয়ে দিতে বললেই আমরা ওই জমিতে প্রকল্প অনুযায়ী উন্নয়নের কাজ শুরু করবো।

এমদাদুল হক মিলন/এসআর/জেআইএম