দেশজুড়ে

বেনাপোলে এক বছরে খাদ্যপণ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ৭৩২০০ মেট্রিক টন

গত অর্থ বছরে আগের থেকে ভারত থেকে চাল আমদানি বাড়লেও কমেছে গম, ডাল, পেঁয়াজ ও মরিচসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের আমদানি। এতে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে খাদ্য-দ্রব্য জাতীয় ভোগ্য পণ্যের বাণিজ্য ঘাটতি ৭৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।

বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল, রফতানি মূল্য বৃদ্ধি ও নানান শর্তের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এদিকে ভারতের সঙ্গে নিত্য প্রয়োজনীয় ৮টি ভোগ্য পণ্য আমদানিতে কোটা চুক্তি ৩ বছরেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। এতে খাদ্য আমদানিতে ঘাটতি দিনদিন বেড়ে চলেছে। যার প্রভাবে বছরজুড়ে নিত্যপণ্যের বাজার থাকছে চড়া। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অন্তবর্তীকালীন সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন:তিন সপ্তাহে ভারত থেকে বেনাপোল দিয়ে ৭১০০ মেট্রিক টন চাল আমদানিদুর্গাপূজার ছুটিতে বেনাপোলে বেড়েছে ভারতগামী যাত্রীর চাপ

বেনাপোল স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি হয় ২১ হাজার ৩৮৪ টন, ডাল ৭৮ হাজার ৯৪৭ টন, পেঁয়াজ ২০০ টন, আদা ৪৩১ টন, মরিচ ৭ হাজার ১৫২ টন, আলু ৪ হাজার ৯৬৩ টন, চিনি ও গম আমদানি হয়নি। অপরদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চাল আমদানি হয়েছে এক হাজার ১৫০ টন, ডাল এক হাজার এক হাজার টন, পেঁয়াজ ১৫ হাজার ২৯৫ টন, আদা ৬০ টন, মরিচ ৯ হাজার ৪৪৭ টন, আলু ৩ হাজার ৮৪ টন এবং চিনি ও গম আমদানি হয়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ এক লাখ ৮ হাজার ৫৯ মেট্রিক টন আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি ছিল ৩৪ হাজার ৮৬০ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চাইতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভোগ্য পণ্যের আমদানি কমেছে ৭৩ হাজার ১৯৯ মেট্রিক টন।

কৃষি অধিদপ্তর সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩২ লাখ মেট্রিক টনের বিপরীতে উৎপাদন হয় ২৭ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদা মেটাতে বাকিটা আমদানি করতে হয়। চালের চাহিদা ৩ কোটি ৬০ লাখ মেট্রিক টনের মতো। সেখানে উৎপাদন হয় ৪ কোটি ১৫ লাখ টন। চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টনের বিপরীতে উৎপাদন মাত্র ১ লাখ টন। গমের চাহিদা ৭০ লাখ টন আর উৎপাদন ১২ লাখ টন। আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন আর গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১২৯ লাখ টন। আদার চাহিদা ৩ লাখ টন আর উৎপাদন ২ লাখ টনের মত। রসুনের চাহিদা ৬ লাখ টন আর গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৬ লাখ ৯ হাজার ৯০০ লাখ টন।

বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ ভোগ্যপণ্যের চাহিদা রয়েছে সব পণ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতা না থাকায় আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। আর এসব পণ্যের বড় অংশ আসে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। তবে নানান কারণ জানিয়ে দেশটি হঠাৎ আমদানি বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা, রফতানি মূল্য ও কঠিন কঠিন শর্ত দেওয়ায় দিনদিন বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে চলেছে। সরবরাহ ঘাটতির কারণ দেখিয়ে দাম বৃদ্ধি করে সুযোগ নিচ্ছে অসৎ ব্যবসায়ীরা। যার খেসারত গুনতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের।

আরও পড়ুন:দুর্গাপূজায় প্রথম চালানে ভারতে গেলো সাড়ে ৩৭ টন ইলিশ১২ দিনে বেনাপোলে ১৭৮৫ মেট্রিক টন ভারতীয় চাল আমদানি

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ২০২২ সালের ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে কোটা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে বার্ষিক ভারতের কাছে গম ৪৫ লাখ টন, চাল ২০ লাখ টন, পেঁয়াজ ৭ লাখ টন, চিনি ১৫ লাখ টন, আদা দেড় লাখ টন, ডাল ৩০ হাজার টন ও ১০ হাজার টন রসুনের অনুরোধ করা হয়। শর্ত অনুযায়ী কোটা পাওয়া গেলে যখন-তখন ভারত এসব পণ্যের রপ্তানি বন্ধ বা মূল্য বৃদ্ধি করতে পারবে না। এতে দ্রব্যমূল্যের দাম অনেকটা সহনশীল পর্যায়ে ও খাদ্য সংকট কমে আসবে। তবে এখনো পর্যন্ত চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে প্রতি বছর ঘাটতি বাড়ছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, সরকার পরিবর্তন স্বাভাবিক। তবে আমরা আশা করবো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে ভারত সরকার তাদের বাণিজ্যনীতির জায়গায় যেন অটুট থাকে।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক আনু জানান, সরকার পরিবর্তন আর আমদানি জটিলতায় বেনাপোল বন্দরে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কোটা চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে।

বেনাপোল স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. আবু তালহা জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চাইতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি কমেছে বন্দরে। আমদানিকৃত পণ্য মান পরীক্ষা শেষে বন্দর থেকে খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়।

মো. জামাল হোসেন/এমএন/এএসএম