দেশজুড়ে

অর্ধেকে থেমে আছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলের ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের কাজ

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল প্রায় ৮ বছর আগে। দুই বছর মেয়াদী প্রকল্পটির দীর্ঘ সময়ে কাজ হয়েছে মাত্র অর্ধেক। বাকি কাজ কবে শেষ হবে এর নিশ্চয়তা নেই। বর্তমানে থমকে আছে নির্মাণ কাজ। এ অবস্থায় সীমাহীন ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল যাত্রীদের।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৭ সালে ৩৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শুরুর পরিকল্পনায় ছিল পাঁচটি নতুন স্টেশন ভবন ও প্ল্যাটফর্ম, একটি অফিস কাম স্টেশন ভবন, ১১টি ব্রিজ ও কালভার্ট, চারটি পথচারী সেতু, সীমানা প্রাচীর এবং দুটি ওয়াশপিট নির্মাণ। প্রকল্প অনুমোদনের সময় ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর তৃতীয় দফায় ২০২১ সালের জুন এবং চতুর্থ দফায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। দীর্ঘ ৮ বছরেও এসব স্থাপনার একটিও পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ চায়না পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না কাজ অসমাপ্ত রেখেই প্রকল্প ত্যাগ করে। সেই সময় পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ছিল মাত্র ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

‘ট্রেনে যাতায়াত করতে গিয়ে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আগে ট্রেনের ভেতরে গাদাগাদি করে যাতায়াত করলেও জেলা প্রশাসকের প্রচেষ্টায় ট্রেনের বগি বৃদ্ধিতে গাদাগাদি কিছুটা কমেছে। কিন্তু বাইরের ভোগান্তি কমেনি। বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজতে হয় আর গ্রীষ্মকালে তীব্র রৌদ্রের তাপ সহ্য করতে হয়। স্টেশনে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। ভালো কোনো শৌচাগার নেই।’

এদিকে প্রায় দুই বছর প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল আবারও নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। জিপিটি-স্ট্যান্ডার্ড জয়েন্ট ভেঞ্চারের সঙ্গে ৩১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকার চুক্তি করা হয়। নতুন চুক্তি আগের ঠিকাদারের করা নতুন ডুয়েলগেজ লাইনের কাজ শেষ করার পাশাপাশি বিদ্যামান মিটারগেজ লাইনকেও ডুয়েলগেজে রূপান্তর করে দেবে। এসব কাজ বাস্তবায়নের ৩১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকার একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে কাজের কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

যাত্রী ও রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন। স্টেশনের অবকাঠামো, নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবা সবকিছুতেই রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। বর্ষায় বৃষ্টিতে ভেজাসহ শীতকালে তীব্র শীত ও গ্রীষ্মকালে তীব্র রৌদে ভুগতে হয় যাত্রীদের। সেই সঙ্গে নেই মানসম্মত টয়লেট, পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা ও নারীদের জন্য আলাদা শৌচাগার। সেবার মান ভালো না হওয়ায় যাত্রীদের অনেকে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে সড়কপথে যাতায়াত করছেন বলে জানা গেছে।

‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ডুয়েলগেজ রেললাইনের কাজ নতুন করে দরপত্রের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। কিছু কাজ এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। শ্যামপুর পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেললাইন কাজ শেষ হয়েছে। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত তদারকি করছেন। কাজ সম্পন্ন হলে যাত্রীসেবার মান বাড়বে, দুর্ভোগও কমে আসবে। পাশাপাশি শহরের যানজটও কমে আসবে। ছোট শহরে যানবাহনের গাদাগাদি থাকবে না। রেলপথে নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ বাড়বে।’

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন দেশের অন্যতম পুরোনো বাণিজ্যকেন্দ্রিক যোগাযোগ মাধ্যম হলেও অবকাঠামোর কোনো উন্নয়ন হয়নি। স্টেশনের ভেতর-বাইরে ছড়িয়ে থাকে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। বর্ষায় জলাবদ্ধতার ডুবে থাকে রেললাইনের বিভিন্ন অংশ। এমনকি রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িও পানিবন্দি থাকে দীর্ঘদিন। পাশাপাশির বাড়েনি ট্রেনের সংখ্যাও।

আরও পড়ুনশিক্ষার্থীতে ঠাসা কিন্ডার গার্টেন, ফাঁকা সরকারি বিদ্যালয়লবণের বিষে অস্তিত্ব সংকটে উপকূলের কৃষি

নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ঢাকায় গিয়ে অফিস করেন শহরের গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা সবুজ সাহা। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ভাড়া কিছুটা সাশ্রয়ী হওয়ায় তিনি ট্রেনেই যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, ট্রেনে যাতায়াত করতে গিয়ে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আগে ট্রেনের ভেতরে গাদাগাদি করে যাতায়াত করলেও জেলা প্রশাসকের প্রচেষ্টায় ট্রেনের বগি বৃদ্ধিতে গাদাগাদি কিছুটা কমেছে। কিন্তু বাইরের ভোগান্তি কমেনি। বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজতে হয় আর গ্রীষ্মকালে তীব্র রৌদ্রের তাপ সহ্য করতে হয়। স্টেশনে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। ভালো কোনো শৌচাগার নেই।

শহরের কালীরবাজার স্টেশনের নির্মাণাধীন নতুন স্টেশন ভবনের নিরাপত্তা কর্মী আলী হোসেন বলেন, অনেকদিন ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। কবে কাজ শুরু হবে জানি না। আগে আমার সঙ্গে চারজন থাকতো। এখন আমি একাই থাকি।

আরও পড়ুনজলবায়ু বিপর্যয়ে কখনো পুড়ছে কখনো ডুবছে সিলেট‘বাবা উঠো, মজা আইন্না দাও’ কবরের কাছে গিয়ে বলে ছোট্ট সাজিদুল

অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’র সভাপতি হাজী নুরুদ্দিন বলেন, স্টেশনে যাত্রীসেবার মান নিশ্চিত করা দরকার। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে যারা যাতায়াত করে তাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এই ভোগান্তি কমাতে হবে। স্টেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। স্টেশনগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ডুয়েলগেজ রেললাইনের কাজ নতুন করে দরপত্রের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। কিছু কাজ এরইমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। শ্যামপুর পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেললাইন কাজ শেষ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত তদারকি করছেন। কাজ সম্পন্ন হলে যাত্রীসেবার মান বাড়বে, দুর্ভোগও কমে আসবে। পাশাপাশি শহরের যানজটও কমে আসবে। ছোট শহরে যানবাহনের গাদাগাদি থাকবে না। রেলপথে নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ বাড়বে।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/এমএন/জিকেএস