জাতীয়

মানবপাচার রোধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন বাংলাদেশের

মানবপাচার রোধে উল্লেখযোগ্য ও টেকসই অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এর স্বীকৃতি হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৫ সালের মানবপাচারবিষয়ক (টিআইপি) প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্তরে স্থান দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার এখনো মানবপাচার নির্মূলে ন্যূনতম মান পুরোপুরি পূরণ করতে না পারলেও গত বছরের তুলনায় দৃশ্যমান উন্নতি লাভ ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ কারণেই দেশটি এবারও দ্বিতীয় স্তরে অবস্থান ধরে রেখেছে।

টিআইপি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভুক্তভোগীদের শনাক্তকরণ, সুরক্ষা এবং আন্তসংস্থা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। সরকার ২০২৪ সালে এক হাজার ৪৬২ জন মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিকে শনাক্ত করে। যাদের মধ্যে ১৪৪ জন যৌনকর্মী হিসেবে, ২৮৫ জন জোরপূর্বক শ্রম দিতে এবং বাকিরা অন্যান্যভাবে পাচারের শিকার হন। আগের প্রতিবেদনে একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল এক হাজার ২১০ জন।

ভুক্তভোগীদের স্বাস্থ্যসেবা, আশ্রয় ও আইনি সহায়তা দিতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্মুখ সারির কর্মকর্তা, পুলিশ ও অভিবাসন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম’ চালুর বিষয়টিও ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মানবপাচারবিরোধী তদন্তে বাংলাদেশ ইন্টারপোল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো অংশীদার দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। এতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের(সিটিটিসি) সমন্বয় জোরদার করার উদ্যোগকেও বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনটেকনাফের পাহাড়ে পাচার চক্রের আস্তানা থেকে শিশুসহ ৩৮ জন উদ্ধারপাহাড়ে পাচারচক্রের আস্তানা থেকে নারী-শিশুসহ উদ্ধার ২১৪৮ লাখ টাকা দিয়েও মুক্তি মেলেনি লিবিয়ায় বন্দি আসলামের

মানবপাচার প্রতিরোধে জাতীয় মানবপাচারবিরোধী কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে সরকার ২০২৫ সাল পর্যন্ত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে। এ খাতে চলতি অর্থবছরে ৬২১ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

এছাড়া সচেতনতামূলক কার্যক্রম, নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিদেশগামী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও সম্প্রসারিত হয়েছে। নারী গৃহকর্মীদের জন্য ৩০ দিনের বিশেষ কোর্স চালুর বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো প্রধান গন্তব্য দেশের সঙ্গে শ্রমচুক্তি জোরদার করেছে এবং অভিবাসীদের অতিরিক্ত ব্যয় থেকে রক্ষায় নিয়োগকর্তা প্রদত্ত নিয়োগ মডেলও চালু করেছে।

প্রতিবেদনটি উপসংহারে বলেছে, চলমান সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাংলাদেশের মানবপাচারবিরোধী লড়াইয়ে দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রতিফলন।

জেপিআই/একিউএফ/এমএস