মেরুদণ্ড সোজা রেখে নির্বাচন কমিশনকে দৃঢ়তা, স্বচ্ছতা ও সাহসিকতার সঙ্গে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা।
তারা বলেন, এই নির্বাচন জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তাই কমিশনকে মেরুদণ্ড সোজা রেখে এগোতে হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ভোটারদের ব্যাপারে ইসিকে সুস্পষ্ট অবস্থান জানাতে বলেন তারা।
নির্বাচন সামনে রেখে সোমবার (৬ অক্টোবর) গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন। এসময় সংবাদপত্রের সম্পাদক, সাংবাদিক ও গণমাধ্যম নেতারা এই আহ্বান জানান।
সংলাপে কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ বলেন, প্রত্যাশা থাকবে, আপনারা মেরুদণ্ডসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে জাতির কাছে পৌঁছাবেন। (নির্বাচন নিয়ে) ষড়যন্ত্র আছে- দেশের ভেতরেও, বাইরে থেকেও। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও তাদের ভোটারদের বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তারা নাগরিক, তাদের ব্যাপারে ইসিকে সুস্পষ্ট অবস্থান জাতির সামনে জানাতে হবে।
তিনি প্রস্তাব করেন, প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় পেশাজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও তরুণদের নিয়ে সামাজিক পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যারা ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত নির্বাচনী কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন।
আরও পড়ুনসুন্দর নির্বাচন করতে চাই, এই ঢোলটা বাজিয়ে দেবেনপ্রবাসীদের জন্য ১০ লাখ ব্যালট ছাপাবে ইসি
সংলাপে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রবেশপথ। গত ১৫ বছরে জাতি সে পথে যেতে পারেনি, এটাই বাস্তবতা। এবার নির্বাচন হবে এবং ভালো নির্বাচন হবে- এটা আমাদের আশা। তবে আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে অর্থ ও বলপ্রয়োগের ঝুঁকি রয়েছে। প্রার্থী কেনাবেচা ও প্রভাব খাটানো বন্ধে ইসিকে কঠোর হতে হবে।
ডিজিটাল প্রোপাগান্ডা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল স্পেসে অর্থ প্রয়োগ করে জনমত গঠনের প্রচেষ্টা চলবে। ইসিকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনী ব্যয় ও প্রার্থীর হলফনামা যাচাইয়ে স্বচ্ছতা আনতে হবে। দুয়েকটি ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে মানুষ ইসির নৈতিক শক্তিতে আস্থা পাবে।
দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব নিউজ জিয়াউল হক বলেন, ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশের নিশ্চয়তা দিতে হবে। কোনো সাংবাদিক যেন বাধা বা হয়রানির শিকার না হন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
আজকের পত্রিকার সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, প্রার্থীদের হলফনামা সঙ্গে সঙ্গে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে, যাতে ভোটাররা তাদের সম্পর্কে তথ্য জানতে পারেন। ইসি যেন কোনো গোপন নির্দেশনা না দেয়। সব নির্দেশনা প্রকাশ্য হওয়া উচিত, যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় থাকে।
গণমাধ্যম নেতারা আরও বলেন, ইসিকে শুধু নির্বাচনের আয়োজক নয়, বরং জাতির আস্থা পুনরুদ্ধারের প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে হবে। সাহস, স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা দিয়েই কেবল একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব।
এমওএস/কেএসআর/এএসএম