স্বাস্থ্যের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেছেন, অক্সিজেনকে এমনভাবে সহজলভ্য করতে হবে, যেন এটি ওষুধের মতো সহজে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, বর্তমানে হাসপাতালভেদে অক্সিজেনের দাম ভিন্ন। তাই এটিকে জরুরি ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছি, যার দাম সরকার নির্ধারণ করবে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত বাংলাদেশ অক্সিজেন সামিটে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ন্যাশনাল অক্সিজেন সিস্টেম গড়ে তুলে সারাদেশে সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। ডিপিপি প্রস্তুত করা হচ্ছে। পাশাপাশি অক্সিজেন ডিভাইসের মান নিয়ন্ত্রণও করা হবে। আমরা দেশে অক্সিজেন, ভ্যাকসিন, অ্যান্টিভেনম ও অ্যান্টিরেবিস উৎপাদনের উদ্যোগ নিচ্ছি।
সায়েদুর রহমান বলেন, যদি নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহ করতে না পারি, তবে আমাদের স্বাধীনতা অর্থহীন।
তিনি আরও বলেন, যে কোনো খাতে এমন ব্যর্থতা, যা জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে, সেগুলো মোকাবিলার সক্ষমতা আমাদের থাকতে হবে।
সম্মেলনে স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান, আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, পরিচালক (হাসপাতাল) অধ্যাপক ডা. এএইচএম মইনুল আহসানসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।
আইসিডিডিআর,বি এই অক্সিজেন সামিট ২০২৫ আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশের অক্সিজেন চাহিদা, প্রাপ্যতা, নীতিমালা, বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও গবেষণার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়। সম্মেলনে বাংলাদেশকেন্দ্রিক গবেষণা উপস্থাপনার পাশাপাশি ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ কমিশন অন মেডিকেল অক্সিজেন সিকিউরিটি-এর প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত বৈশ্বিক তথ্য, প্রমাণ এবং গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশও তুলে ধরা হয়।
আয়োজকদের মতে, মেডিকেল অক্সিজেন একটি অপরিহার্য জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, কিন্তু এর নিরবচ্ছিন্ন প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। কোভিড-১৯ মহামারির সময় বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে সব বয়সী মানুষের জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। তবুও এই জীবনরক্ষাকারী উপকরণের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি ও বৈষম্য রয়ে গেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, চিকিৎসাক্ষেত্রে অক্সিজেনের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, কিন্তু সরবরাহ এখনো অপর্যাপ্ত। তাই বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং অক্সিজেন ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই।
ল্যানসেট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রোগী ও স্বজনদের সাক্ষ্য থেকে বোঝা যায় অক্সিজেন সেবা ও পালস অক্সিমিটার ব্যবহারে এখনো বিপুল পরিমাণ ব্যক্তিগত ব্যয় বহন করতে হয়। তাই সরকারগুলোকে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় পালস অক্সিমেট্রি ও অক্সিজেন সেবা অন্তর্ভুক্ত করা এবং ব্যবহার ফি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সরকার, শিল্পখাত ও বৈশ্বিক সংস্থার সমন্বয় অপরিহার্যপ্রতিবেদনে বলা হয়, মেডিকেল অক্সিজেন শিল্প এখন জনস্বাস্থ্য ও মহামারি প্রস্তুতি ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। সরকারগুলোর দায়িত্ব হলো বাজারের নিরাপত্তা, প্রতিযোগিতা ও মূল্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সামঞ্জস্য রেখে অক্সিজেনের মান ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ কার্যকর করা।
এছাড়া অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট ‘অক্সিজেন অ্যাক্সেস টার্গেট’ নির্ধারণ করে তা প্রকাশ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোকে এ খাতের অগ্রগতি নিয়মিত মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে—যেমনটি তারা ওষুধ শিল্পের ক্ষেত্রে করে থাকে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গ্লোবাল হেলথ এজেন্সি ও দাতাদের উচিত অক্সিজেন প্রাপ্তিকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য অগ্রাধিকারে রাখা, Global Oxygen Alliance-কে সহায়তা করা এবং The Global Fund-এর অর্থায়নে অক্সিজেন প্রাপ্তিকে একটি শক্তিশালী অঙ্গীকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।
অক্সিজেন ব্যবস্থাপনায় নির্ভুল ও সময়োপযোগী তথ্য জরুরিকমিশন জানায়, বর্তমানে অক্সিজেন কাভারেজ, ব্যয়-সাশ্রয়ী সমাধান ও রোগীভিত্তিক সেবার তথ্যের ক্ষেত্রে বড় ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে তারা দুটি নতুন সরঞ্জাম প্রস্তাব করেছে—‘১০টি অক্সিজেন কভারেজ সূচক’ এবং ‘জাতীয় অক্সিজেন অ্যাক্সেস স্কোরকার্ড’। এগুলো ব্যবহার করে সরকার জাতীয় অক্সিজেন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে পারবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পরবর্তী বৈশ্বিক স্বাস্থ্য কাঠামোয় সমতা ও টেকসই উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিচালিত, শক্তি-সাশ্রয়ী অক্সিজেন যন্ত্র ব্যবহার এবং স্থানীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতা গড়ে তোলা হলে ব্যয় কমবে, পরিবেশ রক্ষা হবে এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থাও হবে আরও শক্তিশালী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকসই বিনিয়োগ ও পরিকল্পিত উদ্যোগের মাধ্যমে জাতীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা শুধু রোগীর জীবন রক্ষায় নয়, বরং ভবিষ্যতের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষায়ও নেতৃত্ব দিতে পারে।
এসইউজে/এমআইএইচএস/এএসএম