যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত একজন ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখতেন ১৯ বছরের মেডিকেল শিক্ষার্থী সিধি শর্মা। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির খবরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তিনি।
সিধি বলেন, আমি সবসময়ই ভেবেছিলাম বিয়ের পর আমেরিকায় স্থায়ী হবো। কিন্তু ট্রাম্প যেন আমার স্বপ্নের দরজাই বন্ধ করে দিয়েছে।
বিশেষ করে দক্ষ কর্মীদের জন্য নির্ধারিত এইচ-১বি ভিসার ওপর চাপ এবং অভিবাসন নীতির কঠোরতা ভারতের অনেক পরিবারকে চিন্তায় ফেলেছে। বিয়ের জন্য আমেরিকায় থাকা ভারতীয়দের পছন্দ করার ব্যাপারে এখন অনেকেই দ্বিধায় পড়ছেন, কারণ চাকরি হারানো বা ভিসা বাতিল হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
ভোস ফর ইটারনিটি নামে একটি ম্যাচমেকিং সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা অনুরাধা গুপ্তা বলেন, অভিবাসন নীতির সিদ্ধান্ত হয় ওয়াশিংটনে, কিন্তু তার প্রভাব পড়ে ভারতের প্রতিটি ডিনার টেবিলে, যেখানে বিয়ের আলোচনা চলে।
ভারতে এখনো বিয়ের ক্ষেত্রে পরিবারগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে। যদিও প্রেমের বিয়ের চল বাড়ছে, তবুও এনআরআই—বিশেষ করে আমেরিকায় বসবাসরত পাত্র-পাত্রীর ব্যাপারে আগ্রহ ছিল সবসময় বেশি।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দেওয়া এইচ-১বি ভিসার ৭৫ শতাংশই ভারতীয় পুরুষদের দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন নীতিতে এই ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
৫০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ম্যাচমেকার বনজা রাও বলেন, গত বছর পর্যন্ত বিদেশে থাকা পাত্রদের জন্য অনেক চাহিদা ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কারণে গত ছয় মাসে সেই আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে।
তিনি জানান, অনেকে বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ এমন প্রস্তাব বাতিলও করছেন।
অনেক ভারতীয় শিক্ষার্থী এখন আমেরিকায় পড়াশোনা ও স্থায়ী হওয়ার ব্যাপারে নতুন করে ভাবছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪.২২ লাখ ভারতীয় শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছিলেন। কিন্তু অভিবাসন নীতির অনিশ্চয়তা এবং কর্মসংস্থানের ঝুঁকি তাদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক হর্ষিতা ইয়ালামার্টি বলেন, প্রতিবার যখনই এইচ-১বি ভিসার কড়াকড়ি বা সীমাবদ্ধতার কথা ওঠে, তখনই সেটা সরাসরি ভারতীয় বিয়ের বাজারে প্রভাব ফেলে।
তিনি মনে করিয়ে দেন, ট্রাম্পের আগের প্রশাসনেও এই ভিসা নিয়ে কঠোরতা দেখা গিয়েছিল, যেখানে প্রস্তাব ছিল এই ভিসাধারীদের স্ত্রীদেরও কাজ করার অনুমতি থাকবে না। পরে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় এসে সেই নীতিটি প্রত্যাহার করেন।
সূত্র: রয়টার্স
এমএসএম