চিকিৎসকদের চেয়ে নার্সরা রোগীদের সঙ্গে বেশি সময় থাকেন। তাদের সেবায় অনেক রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। মানসিক রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে নার্সদের এ ভূমিকা আরও বেশি। অথচ বাংলাদেশে ‘সাইকিয়াট্রিক নার্স’ খুবই কম। অল্পসংখ্যক যারা আছেন, তাদেরও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। দেওয়া হয় না পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও। মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় দেশকে এগিয়ে সাইকিয়াট্রিক নার্সদের দক্ষ করে গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ‘বিপর্যয়-জরুরি অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য উঠে আসে। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজ। রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় অবস্থিত জাগো নিউজের সম্মেলনকক্ষে এর আয়োজন করা হয়।
গোলটেবিল বৈঠকে সাইকিয়াট্রিক নার্সদের ভূমিকা, গুরুত্ব ও তাদের পেশাগত প্রশিক্ষণের ঘাটতি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন সিনিয়র স্টাফ নার্স শফিউল আজম শাকিল।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য খাতটা অবহেলিত। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও আমরা বাংলাদেশে ‘সাইকিয়াট্রিক নার্স’ কথাটা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। পাবনায় যে মানসিক হাসপাতাল রয়েছে, সেখানে ৫০০ বেডের জন্য আমাদের ৩৩০ জন নার্স রয়েছেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ৪০০ বেডের জন্য ১৫৮ জন নার্স রয়েছেন। বর্তমানে কর্মরত আছেন ১২২ জন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ চাইলেই তাদের অন্য কোথাও বদলি করতে পারেন বা সংযুক্তিতে দিয়ে দিতে পারেন।
শফিউল আজম শাকিল বলেন, চিকিৎসক ও পরামর্শকের পর মানসিক রোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবসময় পাশে থাকা লোকটি হলো একজন নার্স। অন্য যে কোনো পেশাজীবীর চেয়ে নার্সকে রোগীর কাছে বেশি থাকতে হয়।
‘আমরা চাই যে, সম্প্রতি যে কোর্সগুলো চালু হয়েছে; যেমন—ডিপ্লোমা ইন সাইকিয়াট্রিক নার্সিং এবং পাশাপাশি সাইকিয়াট্রিক নার্সিংয়ে যারা এমএসসি করছেন; তাদের একটা স্বীকৃতি তৈরি হোক সাইকিয়াট্রিক নার্স হিসেবে, যাতে তাকে যেখানে-সেখানে পদায়ন করে না দেওয়া হয়। অথবা যেখানেই তাকে দেওয়া হোক না কেন, তার যেন সাইকিয়াট্রিক নার্স এনভায়রনমেন্টটা থাকে। তার যে অর্জিত জ্ঞান, সেটা যেন তিনি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন।’
আরও পড়ুনদক্ষ নার্স পাঠাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছিদেশে প্রথমবার নার্সদের জন্য পিএইচডি কর্মসূচিস্বাস্থ্যখাতে গতি আনতে ৩৫০০ সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগে প্রজ্ঞাপন
সাইকিয়াট্রিক নার্সদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ জরুরি উল্লেখ করে শাকিল বলেন, সাইকিয়াট্রিক নার্সদের যে প্রশিক্ষণ, তা পাঁচদিন; সাতদিন বা সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ মেয়াদি হচ্ছে; সেগুলো একটু বাড়ানো দরকার। এক বা দুই সপ্তাহের যে প্রশিক্ষণ; তাতে একজন নার্স পুরোপুরি প্রশিক্ষিত বা দক্ষ হয়ে উঠতে পারে না।’
মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের একেবারে শেষপর্যায়ে হাসপাতালে নেওয় হয় জানিয়ে তিনি বলেন, মানসিক রোগে আক্রান্ত সিরিয়াস রোগীদের হাসপাতালে আমরা যখন পাই, তখন অনেকটা দেরি হয়ে যায়। তার আগে হয়তো তারা ঝাড়-ফুঁক নেন। সে কারণে রিকভারির চান্সটা কমে আসে কিংবা দীর্ঘমেয়াদি হয়।
সাইকিয়াট্রিক নার্স শাকিল বলেন, দেশের ৯২ শতাংশ মানসিক রোগী মেন্টাল হেলথ কেয়ার বা মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কাছাকাছি আমরা পাই না; তারা আসেন না বা আসার সুযোগ পান না। যদি কমিউনিটি সাইকিয়াট্রিক নার্স; যেটা অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় চালু আছে; সেটা বাংলাদেশে চালু করতে সক্ষম হই, তাহলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ফার্স্ট এইডটা সঠিকভাবে দিতে পারবো।
রোগীদের করুণ পরিস্থিতি তুলে ধরে শাকিল বলেন, যে রোগীগুলোর দুর্ঘটনাজনিত কারণে হাত বা পা কাটা যায়। তারা অপারেশনের পর দীর্ঘমেয়াদে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন। যারা ক্যানসারে আক্রান্ত; বিশেষ করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত তাদের বারবার হাসপাতালে আসতে হয়। আমি দেখেছি, হাজবেন্ড তার ওয়াইফকে নিয়ে বারবার আসছেন। সঙ্গে হয়তো সন্তানকেও নিয়ে আসতে হচ্ছে। বারবার হাসপাতালে আসতে আসতে অনেকের সন্তান স্কুল থেকে ড্রপ আউট হয়ে পড়ে; অনেকে চাকরিটাও হারিয়ে ফেলেন।
তিনি বলেন, তারা মানসিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছেন। তাদের জন্য আলাদা সাইকিয়াট্রিক নার্সের যদি ব্যবস্থা করি, তাহলে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবো বলে বিশ্বাস করি।
এএএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস