প্রত্যেক মেয়ের জীবনে প্রথম পিরিয়ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পিরিয়ড, মাসিক বা ঋতুস্রাব নারীর স্বাভাবিক জীবনচক্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বয়ঃসন্ধি কালে এই পিরিয়ড সম্পর্কে জানা না থাকলে প্রথমবার পিরিয়ড শুরু হলে মেয়েরা খুব ভয় পায়।
অনেকে লজ্জা বা সংকোচে পরিবারের কাউকে বলতে পারে না। এছাড়া আমাদের দেশের অনেক মায়েরাই তাদের মেয়েদের পিরিয়ড বিষয়ে জানাতে অস্বস্তি বোধ করেন। কিন্তু একটি মেয়ের শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক স্থিতিশীলতার জন্যই এই সম্পর্কে জানা খুব জরুরি।
আসুন জেনে নেওয়া যাক প্রথম পিরিয়ডের আগে কীভাবে কন্যাশিশুকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করবেন-১. আগে থেকে জানিয়ে রাখুনকোন বয়সে কার মাসিক শুরু হবে, এটা আগে থেকে ধারণা করা যায় না। তবে আমাদের দেশে মেয়েদের প্রথম পিরিয়ড হওয়ার স্বাভাবিক বয়স ১২ বছরের আশেপাশে। তবে অনেকের ৮ বছরেও হয় যায়। তাই ছোট থেকেই মায়েদের উচিত পিরিয়ড সম্পর্কে মেয়েকে জানিয়ে রাখা। পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে এ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকলে তারা যে কোনো সমস্যার মোকাবিলা করতে পারবে।
২. পিরিয়ড কোনো অসুখ নয়পিরিয়ড কোনো অসুখ নয় এটি আগেই মেয়েকে বোঝাতে হবে। বয়ঃসন্ধিকালে মেয়ে শিশুর শরীরে কিছু পরিবর্তন মাধ্যমে তারা ধীরে ধীরে নারী শরীরের অধিকারী হয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা লাভ করে। এই পরিবর্তনটি হলো পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব শুরু হওয়া। প্রতি মাসেই হরমোনের প্রভাবে মেয়েদের জরায়ুতে পরিবর্তনের কারণে একটি নির্দিষ্ট সময়ে রক্ত এবং জরায়ু নিঃসৃত তরল পদার্থ বের হয়ে যায়। এটি একটি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া।
৩. পিরিয়ডের সময় খাদ্যাভ্যাসমেয়েদের পিরিয়ডের দিনগুলোতে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই পিরিয়ডের দিনগুলোতে সুষম খাবার এবং আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি জন্য মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, সবুজ শাক সবজি, ফল খেতে দিতে হবে। এছাড়া সামুদ্রিক মাছে মিনারেল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি রয়েছে। এগুলো পিরিয়ডকালে শরীরের ক্ষয় পূরণ করে ও ব্যথা কমাতে ভূমিকা রাখে।
৪. পিরিয়ডের তারিখটি মনে রাখাপ্রত্যেক মাসের পিরিয়ডের তারিখটি মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এই অভ্যাসটি শুরু থেকেই করতে হবে। এই ব্যাপারে মায়েদেরকে মেয়েদের সাহায্য করতে হবে। যদি মনে না থাকে তাহলে ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগিয়ে দিন কিংবা স্মার্টফোনে লিখে রাখতে পারেন। এতে করে পিরিয়ড শুরুর আগে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা যাবে।
৫. পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানানোপিরিয়ডের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা কতটা জরুরি সেটি তাকে বোঝাতে হবে। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে পরিষ্কার না থাকলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এ সময়ে পরিষ্কার পোশাক পরতে হবে। স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহারবিধি শেখাতে হবে। চার-ছয় ঘণ্টা অন্তর ন্যাপকিন পরিবর্তন করতে হয়, সেটা জানাতে হবে। স্যানিটারি ন্যাপকিন পরার আগে ও পরে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এছাড়া নিয়মিত অন্তর্বাস পরিবর্তনের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
৬. বিশেষ যত্ন নেওয়াপিরিয়ডের মন খারাপ লাগতে পারে, সে খিটখিটে হয়ে যেতে পারে। মায়েদের উচিত তার মেয়েকে জড়িয়ে ধরা, ভালোবাসার স্পর্শ দেওয়া। ভরসার জায়গা তৈরি করা। বিশ্রামে রাখা। স্কুলে যাওয়া বা ঘরের কাজ করার মতো স্বাভাবিক কাজে উৎসাহ দেওয়া। পিরিয়ড চলাকালে জরায়ু অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় থাকে, তাই সামান্য আঘাতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই সচেতন থাকুন। এছাড়া তলপেটে ব্যথা হলে হালকা গরম সেঁক দিতে হবে।
৭. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াঅতিরিক্ত রক্তপাত হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। পিরিয়ডের সময় পেটে বেশি ব্যথা হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। প্রথম থেকে সচেতন থাকলে পিরিয়ডের যে কোনা জটিলতা এড়ানো্ সম্ভব।
সূত্র: কিডস হেলথ, ইউনিসেফ, মায়ো ক্লিনিক ও অন্যান্য
আরও পড়ুন: পিরিয়ডের সময়ে স্যানিটারি প্যাড কতক্ষণ ব্যবহার করবেন?ওষুধ ছাড়াই পিরিয়ডের ব্যথা দূর করার উপায়
এসএকেওয়াই/এএমপি/জেআইএম