প্রবাস

মালয়েশিয়ার ২০২৬ সালের বাজেট, অর্থনীতিবিদদের প্রশংসা ও সতর্কতা

অর্থনীতিবিদদের মতে, মালয়েশিয়ার ২০২৬ সালের বাজেট আর্থিক শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও অর্থনীতিতে সরকারের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ এখনো সংস্কারের পথে বড় বাধা। বাজেটটি ব্যয় সংকোচন ও ঘাটতি কমানোর দিক থেকে প্রশংসনীয় হলেও এটি এখনো ‘রাষ্ট্রনির্ভর’ প্রবণতা থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

সেন্টার ফর মার্কেট এডুকেশনের প্রধান নির্বাহী ড. কারমেলো ফেরলিতো বলেন, বাজেট-২০২৬ শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতার দিকে অগ্রগতির স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। তবে রাষ্ট্র এখনো পরিকল্পনাকারী, বিনিয়োগকারী ও সম্পদ বণ্টনকারীর ভূমিকা পালন করছে- যা বাজারভিত্তিক স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতি ৪ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা দায়িত্বশীল আর্থিক নীতিরই প্রতিফলন। পাশাপাশি, জ্বালানি ভর্তুকি সংস্কারগুলো সার্বজনীন ভর্তুকির তুলনায় অনেক কম বিকৃতিমূলক, কারণ সার্বজনীন ভর্তুকি অতিভোগ ও ‘রেন্ট সিকিং’-এর প্রবণতা বাড়ায়।

ফেরলিতো আরও বলেন, ফিসকাল রেসপনসিবিলিটি অ্যাক্ট শক্তিশালী করা ও নিরীক্ষা প্রক্রিয়া কড়াকড়ি করা ইতিবাচক দিক, কারণ নৈতিক আহ্বানের চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলাই আর্থিক সততা ধরে রাখে।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, মোট ব্যয় ৪৭০ বিলিয়ন রিঙ্গিত- যার মধ্যে অপারেশনাল খাতে বরাদ্দ ৩৩৮ বিলিয়ন। এখান থেকেই বোঝা যায়, রাষ্ট্রের উপস্থিতি এখনও বড় আকারে রয়ে গেছে, যা বাজারের দক্ষতাকে সীমাবদ্ধ করতে পারে। যখন সরকারি ব্যয় প্রকৃত সঞ্চয়ের চেয়ে দ্রুত বাড়ে, তখন ক্রয়ক্ষমতা দুর্বল হয় এবং পুঁজিনির্ভর খাতে দামের ভারসাম্য নষ্ট হয়।

তিনি বলেন, প্রকৃত উদার অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন সরকারের ভূমিকা সীমিত করা, সুষম বাজেটের জন্য স্পষ্ট নীতি নির্ধারণ, এবং ধীরে ধীরে ভর্তুকি ও যৌথ বিনিয়োগ তহবিল কমিয়ে কর নিরপেক্ষতা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা।

ফেরলিতো মনে করেন, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে ১০ বিলিয়ন রিঙ্গিত বিনিয়োগের পরিকল্পনা ভালো উদ্যোগ, তবে সরকারকে নিজে বিজয়ী নির্ধারণ না করে বাজারকে নেতৃত্ব দিতে দিতে হবে।

অর্থনীতিবিদ ড. জেফরি উইলিয়ামস এর মতে, মোট ফেডারেল ব্যয় আগের বছরের তুলনায় কমানো হয়েছে, যা ভর্তুকি সংস্কারের মাধ্যমে সঞ্চয় ও শৃঙ্খলার প্রতিফলন। ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বাজেট ঘাটতির লক্ষ্য অর্জনযোগ্য এবং ৪-৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাস্তবসম্মত।

উইলিয়ামস জানান, নতুন কোনো কর আরোপ করা হয়নি, শুধু কার্বন কর যুক্ত হয়েছে। যা তার মতে অপ্রয়োজনীয়। কারণ, গত বছরের এসএসটি বৃদ্ধি থেকেই আগামী বছর প্রায় ১০ বিলিয়ন রিঙ্গিত রাজস্ব আসবে।

তিনি আরও বলেন, প্রত্যাশিত ১৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত সঞ্চয় (যা পূর্বের ১৭ বিলিয়নের কিছু কম) নতুন কর ছাড়াই আর্থিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

তবে তিনি সতর্ক করেন, সেমিকন্ডাক্টর, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ডিজিটাল অবকাঠামোয় সরকারি বিনিয়োগ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হলে তা বেসরকারি বিনিয়োগকে সহায়তা করার বদলে বাধা দিতে পারে।

উইলিয়ামস বলেন, মাসিক আয় ২৭০০ রিঙ্গিতের নিচে এমন পরিবারের সন্তানদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা ইতিবাচক উদ্যোগ, তবে এটি আরও সম্প্রসারণযোগ্য ছিল।

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ সম্পর্কেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, বরাদ্দ কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে ক্রমবর্ধমান দামের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সীমিত বাজেটেই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজেট ২০২৬-এ আর্থিক শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও ঘাটতি হ্রাসের অঙ্গীকার ইতিবাচক। তবে অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের প্রভাব কমানো, ভর্তুকি সংস্কার আরও এগিয়ে নেওয়া এবং জনগণকেন্দ্রিক ব্যয়ের পরিকল্পনা জোরদার করলেই বাজেটটি দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে পারে।

এএমএ/এমএস