২০২৩-২৪ অর্থবছরে জ্বালানি বিক্রি হঠাৎ কমে গেলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আবার বেড়েছে। এ অর্থবছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) ছয়টি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার ৩৪১ টন জ্বালানি বিক্রি করেছে। জ্বালানি বিক্রিতে ধারাবাহিকভাবে শীর্ষে রয়েছে পদ্মা অয়েল কোম্পানি পিএলসি।
বিগত অর্থবছরে পদ্মা অয়েল ২৬ লাখ ২৫ হাজার ৫১৮ টন পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রি করে। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জ্বালানি ডিজেল বিক্রিতে এগিয়ে রয়েছে আরেক বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা পেট্রোলিয়াম কোম্পানি। বিপিসির এক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৬৭ লাখ ৬১ হাজার ৩২০ টন পেট্রোলিয়াম পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিপিসির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৭৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫ টন জ্বালানি বিক্রি হয়। সেই বছরগুলোতেও পণ্য বিক্রিতে শীর্ষে ছিল পদ্মা অয়েল।
আরও পড়ুন তেলের চেয়ে সুদে লাভ পদ্মা-মেঘনা-যমুনার৫ বছরে ৪৬৫ কোটি টাকা ‘ভাগাভাগি’ পদ্মা-মেঘনা-যমুনায়কর্ণফুলীতে বিপিসির ‘তেল চুরির’ সত্যতা মিলেছে, বন্ধে ১২ সুপারিশ
এ বিষয়ে কথা হলে পদ্মা অয়েল কোম্পানি পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘পদ্মা অয়েল কোম্পানি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। সারাদেশে বিস্তৃত বিপণন নেটওয়ার্ক রয়েছে আমাদের। পদ্মা অয়েল গত অর্থবছর বিপিসির অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি বিক্রি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘সেবার দিক দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে পদ্মা অয়েলের আস্থা ও নির্ভরতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আমিও দীর্ঘদিন বিপণনের কাজে ন্যস্ত ছিলাম। পদ্মা অয়েলকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সেবা প্রদানে গ্রাহকদের চাওয়া সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হচ্ছে। তাছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর পরিশ্রমের কারণে বিপণন ব্যবস্থাপনা ও অপারেশনাল কাজে আমাদের সফলতা এসেছে।’ আগামীতেও এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুনজ্বালানি তেল কিনে গত বছর সাশ্রয় ১৪০০ কোটি টাকা: ফাওজুল কবিরপাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহনে বছরে সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকাবেসরকারিতে ঝুঁকছে জ্বালানি খাত, একক নিয়ন্ত্রণ হারাবে বিপিসি
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বিপিসির ছয় অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল পিএলসি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যমুনা অয়েল কোম্পানি, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি (এসএওসিএল), এলপিজিএল ও ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স পিএলসি (ইএলবিএল) ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার ৩৪১ টন পেট্রোলিয়াম জ্বালানি বিক্রি করে। এরমধ্যে ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ৭৫ টন ডিজেল, ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮ টন ফার্নেস অয়েল, ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৮০৪ টন জেট এ-ওয়ান, ৪ লাখ ৬২ হাজার ৪৭৫ টন পেট্রোল, ৪ লাখ ১৫ হাজার ৬৫৩ টন অকটেন, ৬৭ হাজার ৪৭৭ টন কেরোসিন, ৫৭ হাজার ৯৯৫ টন বিটুমিন, ১৯ হাজার ৪৭৯ টন এলপিজি, ১৩ হাজার ২৯৬ টন লুব অয়েল, ৯ হাজার ৬২৬ টন মেরিন ফুয়েল, ৮ হাজার ৮৯৭ টন জুট বেসিং অয়েল (জেবিও) এবং ৪ হাজার ৪৭৬ টন অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য রয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে পদ্মা অয়েল ২৬ লাখ ২৫ হাজার ৫১৮ টন জ্বালানি বিক্রি করে। বিপিসির মোট বিক্রির ৩৮ দশমিক ৪১ শতাংশ জ্বালানি বিক্রি করে ছয় বিপণন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিক্রিতে শীর্ষে রয়েছে পদ্মা অয়েল। ৩৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ জ্বালানি বিক্রি করে পরের অবস্থানে রয়েছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম। তারা ২৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪ টন পেট্রোলিয়াম জ্বালানি বিক্রি করে। একই অর্থবছর যমুনা অয়েল কোম্পানি ১৭ লাখ ১৬ হাজার ২৫ টন জ্বালানি বিক্রি করে, যা মোট বিক্রির ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। পাশাপাশি এসওসিএল ১ লাখ ২৬৫ টন, এলপিজিএল ২ হাজার ৬৫২ টন এবং ইএলবিএল ৬ হাজার ৮৭৭ টন জ্বালানি বিক্রি করে।
আরও পড়ুন১৩ বছর ঝুলে আছে বাস্তবায়ন, বাড়ছে না জ্বালানি সক্ষমতাতেল পরিশোধনে রেকর্ড গড়লো ইস্টার্ন রিফাইনারিজ্বালানি তেলের সংকট নেই, দাম বাড়ছে না: বিপিসি
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ডিজেল ও অকটেন বিক্রিতে এগিয়ে রয়েছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৭৩ টন ডিজেল এবং ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭২ টন অকটেন বিক্রি করে। একই সময়ে পদ্মা অয়েল ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৬৩ টন ডিজেল এবং ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৬২ টন অকটেন বিক্রি করে। তবে তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পদ্মা অয়েল সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৫ টন পেট্রোল বিক্রি করে।
আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলের জ্বালানি বিক্রি বেড়েছে। তবে মোট জ্বালানি বিক্রির ক্ষেত্রে পদ্মা ও যমুনা অয়েলের আনুপাতিক বিক্রি বাড়লেও প্রতিযোগী মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পদ্মা অয়েল ২৫ লাখ ৯৩ হাজার ৩৯ টন পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রি করে শীর্ষস্থান দখল করে। ওই বছর মেঘনা পেট্রোলিয়াম ২৩ লাখ ৭০ হাজার ৩৭০ টন, যমুনা অয়েল ১৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৯৭ টন, এসএওসিএল ১ লাখ ৮৮৪ টন, এলপিজিএল ১ হাজার ৯৮ টন এবং ইএলবিএল ৭ হাজার ৩২ টন পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রি করে।
এমডিআইএইচ/এমএমএআর/এমএফএ/জিকেএস