খুলনার রাজনীতিতে মাঠে থাকার চেষ্টা করছে জাতীয় পার্টি। সম্প্রতি জাতীয় পার্টির একটি বর্ধিত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত ঘিরে খুলনার রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে তাদের এই সক্রিয়তা নির্বাচন ঘিরে নয় বরং তৃণমূলকে শক্তিশালী ও আওয়ামী লীগের প্রভাব কাটানোর উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের ‘মিত্র’ জাতীয় পার্টি রয়েছে কোণঠাসা অবস্থানে, খুলনাতেও এর ব্যতিক্রম নয়। কিছুদিন আগে গণঅধিকার পরিষদের খুলনার নেতাকর্মীরা নগরীর ডাকবাংলো মোড়ের জাতীয় পার্টি অফিসে একাধিকবার হামলাও চালান।
এরমধ্যে শনিবার (৪ অক্টোবর) খুলনার ডাকবাংলোর জাতীয় পার্টির অফিসে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় জাতীয় পার্টির খুলনা জেলার তেরোখাদা, রুপসা, দীঘলিয়া, কয়রা, পাইকগাছা উপজেলা এবং পাইকগাছা পৌরসভার কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। নতুন করে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে যোগ্য লোকও খোঁজা হচ্ছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র সমাজ এবং যুব সংহতি কমিটিকে গতিশীল করার লক্ষ্যে দলের ভেতর থেকেই কাজ শুরু হয়েছে।
বিগত সময়ে জাতীয় পার্টির কিছু সুযোগসন্ধানী নেতাকর্মীর কারণে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির নামকে যখন খুশি তখন ব্যবহার করেছে। কিন্তু তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলেই খুলনায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। তবে এ সক্রিয়তার মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন ঘিরে না বরং আওয়ামী লীগের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা বলে জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে জাতীয় পার্টির খুলনা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি কোণঠাসা অবস্থায় বিগত দিনে রাজনীতি করেছে। এই দল আওয়ামী লীগের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে বললে ভুল হবে। মানুষের কাছে এখনো আমাদের অনেক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তবে একটি বিশেষ মহল বিগত দিনের মতো আমাদের কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা করছে। হামলার পরও ধৈর্য্য ধারণ করে আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রয়েছি।
আরও পড়ুন- কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কর্মী সমাবেশ ভন্ডুলআওয়ামী লীগ গেছে যেই পথে, জাতীয় পার্টি যাবে সেই পথে: সারজিস
তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যক্রমে আওয়ামী লীগের আসার কোনো সুযোগ নেই। তবে ভোটের রাজনীতিতে অনেকে মনে করছেন আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশের ভোট জাতীয় পার্টি পাবে। কিন্তু আমরা ভোটের বিষয় নিয়ে এখনই কিছু ভাবছি না। আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি এবং নিজেদেরকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
জাতীয় পার্টির খুলনা জেলা শাখার সহ-সভাপতি ফরহাদ আহমেদ জানান, আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে খুলনার অনেক উন্নয়ন করেছে। জাতীয় পার্টির অবদান মানুষ এখনো ভুলে যায়নি।
তিনি জানান, আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনের ভয় দূর করে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। আওয়ামী লীগ বিগত দিনে রাজনৈতিকভাবে জাতীয় পার্টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় রয়েছি আমরা।
জাতীয় পার্টির যুব সংহতি সংগঠনের খুলনা জেলা শাখার সভাপতি ডা. সৈয়দ আবুল কাশেম বলেন, একাধিকবার জাতীয় পার্টির অফিসে হামলার প্রতিবাদ আমরা চাইলে করতে পারতাম। কিন্তু আমরা হামলায় বিশ্বাসী না। আমরা প্রতিবাদ করেছি। সাধারণ মানুষও আমাদের সঙ্গে প্রতিবাদ করেছে। এটাই আমাদের জনপ্রিয়তা। তবে আমরা চাই, ভেঙে পড়া দলকে আরও মজবুত করতে। রাজনৈতিকভাবে আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে চাই। এছাড়া এখনো আমরা অন্য কিছু ভাবছি না।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও খুলনা জেলার সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীদের দল থেকে বহিষ্কারের পর আমরা পুনরায় সক্রিয় হয়েছি। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ শুরু করেছি। নতুন করে কমিটি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি আমরা। খুব দ্রুতই আমরা গতিশীল ভূমিকায় থাকবো।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। খুলনা সিটি করপোরেশন, খুলনা-দাকোপ, খুলনা-পাইকগাছা সড়কসহ অসংখ্য সড়ক নির্মাণ করা হয়। এছাড়া শহরে বড় বড় ড্রেন এবং অনেক খাল খননও করা হয়। উন্নয়নের কারণে মানুষের মনে জাতীয় পার্টির নাম এখনো গেঁথে রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে জাতীয় পার্টিকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট চুরি করে আমাকে হারিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক। জোর করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্ষমতায় ছিল তারা। তবে এখন আর জাতীয় পার্টির নাম ব্যবহার করার সুযোগ আওয়ামী লীগের নেই। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জাতীয় পার্টির একটা সমর্থন ছিল। এখনো সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের দলের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
এফএ/এএসএম