রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ির অগ্নিদুর্ঘটনা কবলিত পোশাক কারখানায় কাটিং মাস্টার হিসেবে চাকরি করতেন নাজমুল। প্রতিদিনের মতো আজও সকালে যোগ দেন কর্মক্ষেত্রে। এরই মধ্যে বিকট শব্দে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে বন্ধুর সহযোগিতায় জানালা ভেঙে প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফেরেন তিনি। আর এই ঘটনারই নিজ মুখে বর্ণনা দেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৪অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী স্থান থেকে সেই ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।
অগ্নিকবলিত গার্মেন্টসে কাজ করছিলেন নাজমুল। কাটিং মাস্টার হিসেবে সেখানে কাজ করেন তিনি। এক বছর ধরে সেখানে চাকরি করেন নাজমুল।
নাজমুল বলেন, আমি চতুর্থ তলায় কাজ করছিলাম। আমি যেখানে কাজ করি সেটার নাম আর এন ফ্যাশন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমি একটা শব্দ শুনতে পাই। তখন জানালা খুলে দেখি সামনের কেমিক্যাল আর ওয়াস ফ্যাক্টরির মাঝখান দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। সেই আগুন আমাদের ফ্যাক্টরির দিকে আসছে। নিচে নামার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। আমরা তখন চারতলায় আটকে পড়ি। পরে আমার বন্ধু বাইরে থেকে দেখতে পাই। পরে পেছনের সাইডের জানালা ভেঙে আমাদের বের করে। বের হওয়ার সময় আমরা পাশের টিনশেডের ওপর পড়ি।
তিনি বলেন, চারতলায় আমরা সাতজন লোক ছিলাম। আমরা বের হতে পেরেছি। তিনতলা থেকে লোক বের হতে পেরেছে কি না আমি বলতে পারি না। এখন পর্যন্ত কোনো খবর জানি না।
অন্য তলায় কতজন করে মানুষ ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি ফ্লোরে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ জন করে ছিল। এই বিল্ডিংটা ছিল পাঁচ তলা। পঞ্চম তলার লোক সব বের হয়েছে। আর তিন তলা থেকে দুইজন বের হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছি। আর দোতলায় ছিল একটা প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, সেটার ছুটি ছিল। সেখানে ছয়জন লোক ছিল বলে শুনেছি। তারাও বের হয়ে গেছে।
নাজমুল জানান, পাঁচতলা ভবনটির তিন তলা, চারতলা ও চারতলায় ছিল সুইং ফ্যাক্টরি (গার্মেন্টস), সেটার নাম আর এন ফ্যাশন। এর মালিক দুইজন, রেজাউল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম। দুজনের নামের অক্ষর নিয়েই এই ফ্যাক্টরির নাম হয় আর এন ফ্যাশন। পাঁচতলার গার্মেন্টসের নাম বিসমিল্লাহ ফ্যাশন। এর মালিকের নাম রাজীব। দোতলায় একটি টি-শার্ট প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, নাম স্মার্ট প্রিন্টিং। আর নিচতলা খালি।
আরও পড়ুনমিরপুরে কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত বেড়ে ১৬নিচতলায় তীব্র আগুন-ছাদের গেটে তালা, ভবনে আটকে মারা যান ১৬ শ্রমিক
এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। দগ্ধ আরও বেশ কয়েকজন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে।
তালহা বিন জসিম বলেন, সব মরদেহ পোশাক কারখানার ভবন থেকে পাওয়া গেছে। মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখনো কেমিক্যাল গোডাউন ভবনের অগ্নিনির্বাপণের কাজ চলছে বলেও জানান ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা।
এর আগে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আগুনের খবর আসে। খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রথমে পাঁচ ইউনিট পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে আরও সাত ইউনিট যোগ দেয় আগুন নিয়ন্ত্রণে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ করে পোশাক কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশে থাকা রাসায়নিকের গোডাউনেও। খবর পেয়ে একে একে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অগ্নিনির্বাপণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ভিড় সামলাতে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। এরপর তাদের সঙ্গে সহায়তায় যোগ দেন পাশে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবক, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি।
কেআর/এমআইএইচএস/জেআইএম