আইন-আদালত

রাশিয়া যুদ্ধে কত বাংলাদেশি জড়িয়েছেন, জানতে সরকারকে আইনি নোটিশ

মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে বাংলাদেশের কত নাগরিক বাধ্য হয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়েছেন, তার তথ্য চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের বিদেশের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সুযোগ আছে কি না তা নোটিশে জানতে চাওয়া হয়েছে।

রোববার (১৯ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুয়েল আজাদ এ নোটিশ ডাকযোগে পাঠান। এতে বিদেশি রাষ্ট্রের যুদ্ধে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে নীতিমালার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি যুদ্ধরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের নিরাপদে দেশে ফেরাতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া ও এতে জোরপূর্বক যুক্ত হওয়া অভিবাসীদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে।

নোটিশে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংস্থা ও নীতি বিভাগের যুগ্ম-সচিব এবং ঢাকায় রাশিয়া ফেডারেশন দূতাবাসের কাউন্সিলরকে বিবাদী করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আইনি প্রতিকার চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হবে।

আইনজীবী জুয়েল বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে একটি বাংলাদেশি এজেন্সি রাশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশিদের রাশিয়ায় পাঠিয়েছে। একপর্যায়ে তাদের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য করা হয়। যদিও এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। তারপরও অনেকে বুঝে, না বুঝে রাশিয়া গিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছেন। তাই এর প্রতিকার চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।’

জুয়েল জানান, বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের যুদ্ধে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি এ নোটিশে জানানো হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, রাশিয়ায় বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কেবল ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসেই দুই হাজার ১০০ জনের বেশি অভিবাসী সেখানে গেছেন, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। যদিও সরকারিভাবে এ অভিবাসন জাহাজ নির্মাণ, হোটেল বা পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মতো কাজের জন্য হচ্ছে, তবে কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সঠিক গণনা না থাকায় ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য সামরিক অংশগ্রহণে ঠিক কতজন মানুষ পাচারের শিকার হয়েছেন, তা বলা সম্ভব নয়। প্রায় ৭৫ লাখ প্রবাসী বিভিন্ন দেশে থাকেন, কিন্তু রাশিয়ায় কতজন আছেন, তার সঠিক হিসাব সরকারের কাছে নেই। প্রায় ছয় হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন বৃত্তি বা নিজস্ব খরচে রাশিয়ায় গেলেও তাদের কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার হার খুবই কম।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকার রাশিয়ায় যাওয়া শিক্ষার্থী ও অভিবাসীদের তথ্য কোনোভাবেই প্রকাশ করছে না। এ-সংক্রান্ত সীমিত তথ্য ২০১১ সালের ২১ এপ্রিল প্রকাশিত ‘মাইগ্রেশন ফ্রম বাংলাদেশ অ্যান্ড ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট পলিসি’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। রাশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসীরা নানাভাবে শোষণের শিকার হচ্ছেন। তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, একশ্রেণির লোভী মানবপাচারকারী ও ট্রাভেল এজেন্সি উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অনেক পুরুষকে রাশিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে এবং পরে তাদের প্রতারিত করে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে রুশ সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করে সামান্য প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক আইন এ ধরনের জোরপূর্বক যুদ্ধে অংশগ্রহণকে সমর্থন করে না উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, রাশিয়া বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই করছে। বাংলাদেশ ও রাশিয়া উভয়ই আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র। সদস্য হিসেবে তারা অভিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং যেকোনো ধরনের বৈষম্য ও জোরপূর্বক শ্রম পরিহার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু রাশিয়া ১৯৩০ সালের বাধ্যতামূলক শ্রম কনভেনশনের ১৯ অনুচ্ছেদসহ আন্তর্জাতিক আইন ও কনভেনশন লঙ্ঘন করছে। এছাড়া এ বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ ও ২৫ (১) অনুচ্ছেদে বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, রাশিয়ায় বিপন্ন বাংলাদেশি প্রবাসীদের জীবন রক্ষা করা প্রয়োজন, যা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কর্তব্য। এ ক্ষেত্র বাংলাদেশ তার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে যেতে পারে না। প্রত্যেক দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা বাংলাদেশের জন্য বাধ্যতামূলক। কোনো দেশ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের যুদ্ধে জড়িত করা আমাদের জাতির প্রতি অসম্মানজনক বলে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশ এখন রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ের সঙ্গেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখছে। তাই বাংলাদেশি নাগরিকদের যুদ্ধে যুক্ত করা বা জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ানো হলে দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের ধারাবাহিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এফএইচ/একিউএফ/জেআইএম