বিলাসী পণ্য সোনার আকাশছোঁয়া দামে খুলনার বাজারে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একদিকে বারবার দাম বাড়ায় সাধারণ ক্রেতা কমেছে, অনেকে আবার দাম কমার অপেক্ষায়। অন্যদিকে সোনার উচ্চমূল্য ও নিরাপত্তা শঙ্কায় সাজসজ্জার জন্য ক্রেতারা ঝুঁকছেন ইমিটেশন গহনার দিকে। তবে, রিসেল ভ্যালু ও সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে সোনা কেনার আগ্রহ এখনও কমেনি সঞ্চয়ী শ্রেণির মধ্যে।
জানা যায়, খুলনায় প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের সোনা ২ লাখ ১৩ হাজার টাকা, ২১ ক্যারেট ২ লাখ ৫ হাজার টাকা ও ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। এরই মধ্যে বুধবার (২২ অক্টোবর) সোনার দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের সোনার দাম পড়বে ২ লাখ ৮ হাজার ৯৯৬ টাকা, ২১ ক্যারেটে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫০১ টাকা, ১৮ ক্যারেটে ১ লাখ ৭০ হাজার ৯৯৪ টাকা।
আরও পড়ুন:একলাফে সোনার দাম ভরিতে কমলো ৮ হাজার ৩৮৬ টাকাভারত-পাকিস্তান-নেপালের চেয়ে বাংলাদেশে সোনার দাম বেশি কেন?
অন্যদিকে খুলনার ইমিটেশন গহনার দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে বিভিন্ন মানের ইমিটেশন গয়না পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণ ও উন্নত মানের দুই ধরনের ইমিটেশন গহনারই চাহিদা রয়েছে। গোল্ড পলিশ ও কালার গ্যারান্টি দিয়ে বিক্রি হওয়া গহনার দাম এখন বেশি। গ্যারান্টি ছাড়া গহনার দাম তুলনামূলক কম। কালার গ্যারান্টি গোল্ড পলিশের চেইন ৭০০ থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। আবার গ্যারান্টি ছাড়া ৩০০-৪০০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে। আংটি ডিজাইন মানভেদে ৫০০-২০০০ পর্যন্তও রয়েছে। মেয়েদের গলার হার বিভিন্ন ডিজাইনের দুই হাজার থেকে শুরু করে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে পাওয়া যাচ্ছে।
‘গচ্ছিত টাকা দিয়ে সোনার গহনা বানিয়েছি। সব কিছুর দাম কমলেও সোনার দাম তেমন কমে না। লাভ না হলেও সোনা কিনে লোকসান হবে না। তবে সোনার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। আর বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক খারাপ। এজন্য সাজসজ্জায় ইমিটেশনের গহনা বেশি ব্যবহার করা হয়।’
সোনার দোকানে আসা শাহানা আক্তার বলেন, সোনার গহনা থাকলেও ইমিটেশনের গহনা বেশি পড়া হয়। বর্তমানে ইমিটেশনের গোল্ড পলিশ পড়তেও ভয় লাগে। দেখা গেলো সোনা ভেবে ছিনতাইকারীরা ধরে বসলো।
তিনি আরও বলেন, চার মাস আগে অল্প অল্প টাকা জমিয়ে একটা সোনার চেইন বানিয়েছি। তখন সোনার দাম অনেক কম ছিল। তখনকার সোনার ভ্যালু এখন অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু এখন নতুন করে সোনার কোনো গহনা আমার কাছে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোনার দাম কম থাকলে সঞ্চয় করে গহনা বানানো সম্ভব।
শিরিনা খাতুন নামে এক চাকরিজীবী নারী বলেন, গচ্ছিত টাকা দিয়ে সোনার গহনা বানিয়েছি। সব কিছুর দাম কমলেও সোনার দাম তেমন কমে না। লাভ না হলেও সোনা কিনে লোকসান হবে না। তবে সোনার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। আর বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক খারাপ। এজন্য সাজসজ্জায় ইমিটেশনের গহনা বেশি ব্যবহার করা হয়।
পিকচার প্যালেস মোড়ের ইমিটেশন গহনা ব্যবসায়ী স্বপন তরফদার বলেন, ইমিটেশন গহনার চাহিদা সবসময়ই রয়েছে। সোনা ব্যবহার আধুনিক যুগে কমে যাচ্ছে। সোনা অনেকে গড়েন এসেট হিসেবে কিন্তু মেয়েদের ইমিটেশন গহনার একটা আলাদা চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ম্যাচিং করে সাজসজ্জার জন্য ইমিটেশন ব্যবহার হয় বেশি।
‘ইমিটেশন গহনার চাহিদা সবসময়ই রয়েছে। সোনা ব্যবহার আধুনিক যুগে কমে যাচ্ছে। সোনা অনেকে গড়েন এসেট হিসেবে কিন্তু মেয়েদের ইমিটেশন গহনার একটা আলাদা চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ম্যাচিং করে সাজসজ্জার জন্য ইমিটেশন ব্যবহার হয় বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ইমিটেশন গহনা দেশীয় ও দেশের বাইরে থেকেও আসে। ইমিটেশন গহনা ব্যবসায় একটা সময় সিটি গোল্ড বাজার দাপিয়েছে। তবে এখন অনেক কোম্পানি বাজারে এসেছে। উন্নত মানের গোল্ড পলিশ গহনার দাম একটু বেশি। এগুলো পানি লাগলে কিংবা সবসময় ব্যবহার করলেও রং ঝলসায় না।
নিলয় কসমেটিকস ও জুয়েলারির নিলয় হোসেন বলেন, ইমিটেশনের চাহিদা আগের মতোই রয়েছে। তবে এখন বাজার ক্রেতা শূন্য। সোনার দাম বৃদ্ধিতে ইমিটেশনের বিক্রি অনেক বেড়েছে এমনটা নয়। তবে বাজারে উন্নত মানের ইমিটেশন ম্যাচিং সেট আসছে, যার চাহিদা রয়েছে। জন্মদিন বা ছোট অনুষ্ঠানে অনেকে ব্যবহার করেন এসব গহনা। ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত মানভেদে এসব ম্যাচিং সেট পাওয়া যায়।
খুলনার সোনা ব্যবসায়ীরা জানান, সোনার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতা কিছুটা কমেছে। তবে এখনো সোনার বিক্রিতে বড় ধরনের পতন হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজার, ধনী রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক কারণে সোনার দাম বেড়েছে। যার ফলে সোনার ক্রেতা কিছুটা কম। অনেকে বেতন বোনাস থেকে সঞ্চয় করে ছোট ছোট গহনা বানাতেন, যা এখন কিছুটা কমেছে। তবে যাদের সোনার দিকে ঝোঁক আছে, তারা এখনো গহনা গড়ছেন। সাধারণ ক্রেতাদের কাছে সোনার চাহিদাতে এখনো বড় পতন হয়নি।
‘সোনা বিলাসী পণ্য। সোনার রিসেল ভ্যালু থাকার কারণে মানুষ সঞ্চয় হিসেবেই মূলত সোনার গহনা তৈরি করে। তবে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সোনার দিকে সঞ্চয়ী মানুষদের আনাগোনা এখন একটু কমেছে। তবে উচ্চবিত্তদের চাহিদার ভেতরে রয়েছে সোনা।’
খুলনার হেলাতলার ঝুমুর জুয়েলার্সের তুষার ইমরান বলেন, সোনার ব্যবসা মোটামুটি ভালো খারাপ মিলিয়ে চলছে। সোনা বিলাসী পণ্য হওয়ায় দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের চাহিদা একটু কমলেও ঝোঁক রয়েছে। সবকিছুর দামই এখন ঊর্ধ্বগতি। এজন্য সোনার গহনা বানাতে মানুষ একটু হিমশিম খাচ্ছেন। তবে সামনে সোনার বাজারে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:গ্রাহকদের সোনা আত্মসাৎ করতে দোকানমালিকের ডাকাতির নাটক‘শয়তানের নিঃশ্বাসে’ ৫ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার খোয়ালেন বৃদ্ধা
খুলনা জেলা জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবু শংকর কর্মকার বলেন, সোনা বিলাসী পণ্য। সোনার রিসেল ভ্যালু থাকার কারণে মানুষ সঞ্চয় হিসেবেই মূলত সোনার গহনা তৈরি করে। তবে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সোনার দিকে সঞ্চয়ী মানুষদের আনাগোনা এখন একটু কমেছে। তবে উচ্চবিত্তদের চাহিদার ভেতরে রয়েছে সোনা।
বাবু শংকর কর্মকার বলেন, ইমিটেশন গহনার ব্যবহার বাড়লেও তার রিসেল ভ্যালু নেই। একটা সময় তা নষ্ট হয়ে গেলে ফেলে দিতে হয়। কিন্তু সোনা ফেলতে হয় না। সোনার রিসেল ভ্যালু রয়েছে। মান অনুযায়ী দাম পাওয়া যায়। এজন্য সঞ্চয়ী মানুষের কাছে সোনার কদর রয়েছে। অনেকে ধীরে ধীরে টাকা জমিয়ে সোনার অলংকার তৈরি করেন। কিন্তু নিত্যপণ্যে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ও খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন অনেকে সঞ্চয় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এজন্য অনেক ক্রেতা এখন সোনার দিকে ঝুঁকছেন না।
তিনি আরও বলেন, সব মিলিয়ে আমরা সোনা ব্যবসায়ীরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। অনেক সোনা ডিসপ্লে করতে পারি না। আইনশৃঙ্খলার অবস্থা ও পুলিশিং কার্যক্রম অবনতির কারণে সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত হওয়া প্রয়োজন।
এমএন/এএসএম