দেশজুড়ে

সড়ক তো নয়, এ যেন খাল

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ঝোরপাড়া থেকে মহিষাখোলা সড়কটি এখন যেন আর সড়ক নয়, একটি জলাবদ্ধ পুকুরে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এই সড়কে স্থায়ী পানি, বড় বড় গর্ত ও ভাঙা জায়গা সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র এক পশলা বৃষ্টিতেই পুরো রাস্তায় কোমর সমান পানি জমে যায়। এর ফলে ঝোরপাড়া, রাইপুর, আড়পাড়া, কড়ুইগাছি ও মহিষাখোলা গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছর প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না; নির্বাচনের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভোট শেষ হলেই সবাই ভুলে যান। একসময় কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য ব্যস্ত থাকা এই সড়কটি এখন আমাদের কাছে ‌‘মৃত্যুফাঁদ’ হিসেবে পরিচিত। গ্রীষ্মে ধুলা আর বর্ষায় কাদা ও জমে থাকা পানি বছরের প্রায় সময়ই দুর্ভোগের কারণ।

মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ঝোরপাড়া গ্রামের কৃষক আনছার আলী জানান, ধান ঘরে তোলার সময় গাড়ি নিয়ে মাঠে যাওয়া দায় হয়ে যায়। কোমর সমান কাদা। কখনো গাড়ি আটকে যায়, কখনো উল্টে পড়ে। এক ট্রাক ফসল তুলে আনতে এখন দুই দিন সময় লাগে।

একই গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব সফেদা খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবছর মানববন্ধন করি, সড়কে ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ করি, তারপরও কেউ দেখে না। নির্বাচনের সময় সবাই প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু ভোটের পর সবাই ভুলে যায়।

শিক্ষার্থী ইমন আহমেদ বলছেন, বৃষ্টির দিনে স্কুলে যাওয়া যায় না। হেঁটে গেলে জামা-কাপড় কাদা হয়ে যায়, সাইকেল নিয়ে গেলে পড়ে যাওয়ার ভয়। অনেকে তাই পড়াশোনা ফাঁকি দেয়।

ভাঙা সড়কটির কারণে জরুরি চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানান ঝোড়পাড়া গ্রামের গৃহবধূ বিলকিস খাতুন। তিনি বলেন, আমারা সময়মতো হাসপাতালে যেতে না পারলে কী হবে, সেই ভয়েই দিন কাটাই। গ্রামের ভেতরের এই রাস্তায় রিকশা বা ভ্যান চলে না। কোনো রোগী অসুস্থ হলে ঘাড়ে করে বয়ে নিয়ে যেতে হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন জানান, সড়ক খারাপ থাকায় বাজারে পণ্য আনতে পারি না। পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। মাল আনা-নেওয়ায় সময় দ্বিগুণ লাগে। এতে ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।

ধানখোলা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার বাবুল হোসেন বলেন, আমরা বারবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়েছি। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় কোনো কাজ হয় না বলে জানানো হয়। আমরাও হতাশ হয়ে পড়েছি।

বিষয়টি নিয়ে মেহেরপুর গাংনী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ফয়সাল হোসেন বলেন, রাস্তার আইডি নাম্বার ও বরাদ্দ না থাকায় আপাতত সড়কের সংস্কারকাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে নতুন প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

এআইকিউ/কেএইচকে/এমএস