নানামুখী সংকটে জর্জরিত ফেনী বিসিক শিল্পনগরী। দেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নাভি হিসেবে পরিচিত ফেনী। প্রবাসী আয়ে সমৃদ্ধ এ জনপদ শিল্প-কারখানায় অনেকটা পিছিয়ে। এর মধ্যে আশা জাগিয়ে শুরু হওয়া এই শিল্পনগরীর বেহাল দশায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। আর এজন্য কর্তৃপক্ষকের অসহযোগিতাকেই দুষছেন তারা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নিয়মিত কর পরিশোধ করেও মিলছে না প্রত্যাশিত সেবা। এছাড়া ২০২৪ সালে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে শিল্প উদ্যোক্তাদের যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তা পূরণ করতে সরকারের উদ্যোগ একবছরেও চোখে পড়েনি।
বিসিক ফেনী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার চাড়িপুর মৌজায় ১৯৬২ সালে ২৫ দশমিক ৪ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ফেনী শিল্পনগরী। এখানকার ১৫২টি প্লটের মধ্যে ১০টি প্রশাসনিক কাজের জন্য ও বাকিগুলো শিল্প ইউনিট স্থাপনে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই শিল্পাঞ্চলে গড়ে উঠেছে রপ্তানিমুখী ওষুধ, টাওয়েল, হ্যান্ড মেইড পেপার, জুট, রাবার, রড, বেকারিসহ প্রায় অর্ধশত শিল্প-কারখানা।
উদ্যোক্তারা জানান, অতিরিক্ত কর জটিলতায় নাখোশ শিল্প-মালিকরা। এছাড়া রয়েছে বর্ষায় জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ সমস্যা, আলো স্বল্পতা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ- কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে তারা। বাড়তি কর দিয়েও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। এছাড়া ২০২৪ সালের আগস্টে জেলায় শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তা পূরণ করতে সরকারের উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
আরও পড়ুন- ৪২ কোটি টাকার বিসিকে কারখানা চলে ৩টি, বাকি সব আগাছানিষ্ক্রিয় মেহেরপুর বিসিকের পরিত্যক্ত প্লটে স্থবির শিল্পায়নকাজ অসমাপ্ত রেখেই প্লট হস্তান্তর, শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু নিয়ে শঙ্কা
সরেজমিনে দেখা যায়, বিসিক শিল্পনগরীর সড়কের দুই পাশের ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। সড়কের দুই পাশে ময়লার স্তূপ করে রেখেছেন কারখানা মালিকরা। বিসিক এলাকায় পানি সরবরাহের ট্যাংক দীর্ঘদিন অচল হয়ে পড়ে আছে। ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান মালিকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে পানি সংগ্রহ করছেন। পানির উৎসের একমাত্র পুকুরটিও ময়লা-আবর্জনা ও ঝোপ-ঝাড়ে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে শিল্প এলাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলে বেশ বিপাকে পড়তে হবে। এছাড়া রয়েছে বর্ষায় জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ সমস্যা, আলো স্বল্পতা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে তারা। বাড়তি কর দিয়েও পাচ্ছেন না আশানুরূপ সেবা।
সাইফুর রহমান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে সড়কে চলাচল করা যায় না। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। মশা-মাছির উৎপাত বেড়েছে। এসব কারণে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও দিন দিন অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোশারফ হোসেন জানান, বিসিকের একমাত্র পুকুরটি ময়লা-আবর্জনা ও ঝোপঝাড়ে ভরাট হয়ে গেছে। বড় ধরনের অগ্নিসংযোগ ঘটলে সেটি নেভানো কোনোভাবে সম্ভব হবে না।
ফেনী বিসিক শিল্প নগরীর সহ-সভাপতি মাঈন উদ্দিন আহমেদ কামরান বলেন, ১৯৬২ সালে বিসিক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল ছিল। কিন্তু পর্যায়ক্রমে অধিকাংশ ওয়াল ভেঙে গেছে। প্রবেশপথের গেটগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। বলা যায়, বিসিক এলাকার কোনো মা-বাপ নেই। সড়কবাতি নেই, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলে পুরো বিসিক এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। এসব বিষয় নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখান থেকে নেওয়ার চেষ্টা করে, দেওয়ার চেষ্টা করে না।
ফেনী বিসিক শিল্প নগরীর সভাপতি ড. বেলাল উদ্দিন আহমেদ জানান, ব্যবসায়ীদের প্রতিবন্ধকতা দূর করার কথা ছিল বিসিকের। শিল্পনগরীতে শিল্প প্রতিষ্ঠান করে বিসিকের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার কথা থাকলেও আমরা নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত। সমস্যা সমাধানে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।
শিল্প নগরীর বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ বিসিক ফেনী কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ফেনী বিসিকে ৪৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে রুগ্ন রয়েছে ৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জেলা প্লট বরাদ্দ উপ-কমিটির মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে যদি কোনো বরাদ্দ আসে, আমরা সেগুলো শিল্প মালিকদের মাঝে বিতরণ করবো।
তিনি আরও বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য যে বাজেট নির্ধারণ করা হয়, সেটা একেবারেই অপ্রতুল। সেজন্য এগুলো সংস্কার করা সম্ভব হয় না। শিল্পপ্রতিষ্ঠান মালিকরা তাদের নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে নানা ধরনের সমস্যা থেকে তারা রক্ষা পাবেন।
এফএ/এমএস