লাইফস্টাইল

স্বপ্নে প্রিয়জন হারাতে দেখা যেভাবে কমানো যায়

ঘুমের মধ্যে বারবার প্রিয়জনকে হারানোর স্বপ্ন দেখা খুবই সাধারণ একটি অভিজ্ঞতা। তবে এটি যদি বারবার ঘটে, তাহলে ঘুমের শান্তি নষ্ট হতে পারে এবং মানসিক উদ্বেগও বাড়তে পারে। সাধারণত এ ধরনের স্বপ্নকে দুঃস্বপ্ন বলা হয়, যা অনেক সময় আমাদের মনের গভীরে থাকা ভয় বা চাপের প্রতিফলন হয়ে থাকে।

প্রিয়জন হারানোর স্বপ্নের কারণএ ধরনের স্বপ্ন সাধারণত তখন দেখা যায় যখন একজন ব্যক্তি মানসিক চাপের মধ্যে থাকে বা জীবনে বড় কোনো পরিবর্তন ঘটেছে, যেমন নতুন চাকরি, সম্পর্কের পরিবর্তন বা পরিবারে কোনো দুর্ঘটনা। স্বপ্নের সময় মস্তিষ্ক দিনের অভিজ্ঞতা ও আবেগকে প্রক্রিয়াকরণ করে, বিশেষ করে র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট (আরইএম) স্লিপের সময়। আরইএম স্লিপ হলো ঘুমের সেই পর্যায় যখন আমাদের চোখ দ্রুত নড়াচড়া করে এবং স্বপ্ন সবচেয়ে জীবন্তভাবে দেখা যায়। প্রিয়জনকে হারানোর স্বপ্নের পিছনে কয়েকটি সাধারণ কারণ হলো-

১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগপ্রিয়জন হারানোর স্বপ্ন দেখা সাধারণত আমাদের মনের ভেতরের আবেগ এবং উদ্বেগের প্রতিফলন। যখন আমরা দৈনন্দিন জীবনে অতিরিক্ত চাপ, দুশ্চিন্তা বা মানসিক উত্তেজনার মধ্যে থাকি, আমাদের মন ঘুমের সময় সেই সব অনুভূতিকে প্রক্রিয়া করার চেষ্টা করে। প্রিয়জন হারানোর স্বপ্ন দেখা মানে আপনার মস্তিষ্ক শুধু দিনের চাপে প্রতিক্রিয়া করছে এবং আবেগগুলোকে সামলাচ্ছে।

২. ভয় এবং নিরাপত্তাহীনতাপ্রিয়জনদের হারানোর ভয় বা তাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার নিরাপত্তাহীনতা প্রায়ই স্বপ্নে প্রতিফলিত হয়। এটি আমাদের মনের গভীর আবেগ এবং উদ্বেগকে প্রকাশ করে।

৩. বিচ্ছেদ বা ক্ষতি প্রভাববাস্তবে কোনো প্রিয়জনের সঙ্গে ব্রেকআপ, দূরে চলে যাওয়া বা মৃত্যু, অথবা অন্য কোনো বড় ক্ষতির অভিজ্ঞতা থাকলে মস্তিষ্ক সেই ব্যথা স্বপ্নের মাধ্যমে বারবার ফিরে আনে। এটি মানসিক প্রক্রিয়াকরণের একটি অংশ, যা ঘুমের সময় আবেগকে চিহ্নিত ও সামলাতে সাহায্য করে।

৪. জীবনযাত্রার পরিবর্তননতুন চাকরি, বাসস্থান পরিবর্তন বা সম্পর্কের পরিবর্তনের মতো বড় জীবনযাত্রার পরিবর্তন মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, যা ঘুমের সময় দুঃস্বপ্নের জন্ম দিতে পারে।

৫. ঔষধ বা অসুস্থতাকিছু নির্দিষ্ট ঔষধ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দুঃস্বপ্ন বা খারাপ স্বপ্ন দেখার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণকারী ঔষধ বা ঘুম-উপযোগী ঔষধ ঘুমের মধ্যে অস্বস্তিকর স্বপ্ন তৈরি করতে পারে। তেমনি, ডিপ্রেশন, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা দীর্ঘমেয়াদী উদ্বেগজনিত সমস্যা মানসিকভাবে এমন প্রভাব ফেলে যে, ঘুমের সময় আতঙ্ক এবং দুঃস্বপ্ন দেখেন।

এই স্বপ্ন দূর করতে যা করবেন-

১. স্বপ্ন পুনর্বিন্যাসের কৌশল ঘুম থেকে ওঠার পর আপনার খারাপ স্বপ্নটি মনে করুন। দিনের বেলায় জেগে থাকা অবস্থায় স্বপ্নের সেই অংশটিকে পরিবর্তন করে একটি ইতিবাচক সমাপ্তি যোগ করুন। যেমন, হারানোর স্বপ্নের বদলে ভাবুন, প্রিয়জন ফিরে এসেছেন বা সবাই মিলে হাসছেন। প্রতিদিন কয়েক মিনিট ধরে এই ইতিবাচক স্বপ্নটি মনে মনে অনুশীলন করুন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আপনার অবচেতন মনকে প্রভাবিত করবে এবং খারাপ স্বপ্ন কমাতে সাহায্য করবে।

২. মানসিক চাপ কমানোঘুমানোর আগে রিল্যাক্সেশন বা ধ্যান করুন। শান্ত সঙ্গীত শোনা বা হালকা বই পড়া মনকে শান্ত করতে সাহায্য করবে। এছাড়া, আপনার উদ্বেগ বা যে স্বপ্নটি দেখেছেন তা খাতায় লিখে ফেললে মন হালকা হয়।

৩. ঘুমের রুটিন স্বাস্থ্যকর করাপ্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ওঠার অভ্যাস তৈরি করুন। এটি শরীরের ঘড়ি ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং গভীর, শান্ত ঘুম নিশ্চিত করে। ঘুমানোর ঘরটি অন্ধকার, শান্ত এবং আরামদায়ক রাখুন। আলো, শব্দ বা তাপমাত্রার অস্বস্তি কমান। ঘুমের কিছুক্ষণ আগে মোবাইল, টিভি বা ল্যাপটপ ব্যবহার বন্ধ করুন, কারণ এগুলো মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে এবং ঘুমকে ব্যাহত করতে পারে। চাইলে শোবার আগে হালকা ধ্যান, শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম বা শান্ত সঙ্গীত শোনা ঘুমকে আরও ভালো করতে সাহায্য করে।

৪. মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ যদি দুঃস্বপ্ন বারবার দেখা যায় এবং এটি আপনার দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে, তাহলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সমর্থনের মাধ্যমে সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারেন।

সুত্র: ‍ভেরি ওয়েল মাইন্ড, হিন্দুস্তান টাইমস, উইকি হাউ, আমেরিকান একাডেমি অব স্লিপ মেডিসিন

আরও পড়ুন: নারীর মেজাজ ও এনার্জি নিয়ন্ত্রণ করে যে হরমোনআপনার সুখের পেছনে দায়ী যে রাসায়নিক

এসএকেওয়াই/জেআইএম