জাতীয়

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার দাবি নাগরিক কোয়ালিশনের

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার জন্য সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি দাবি জানিয়েছে নাগরিক কোয়ালিশন। শনিবার (১৫ নভেম্বর) কোয়ালিশনের এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে নাগরিক কোয়ালিশন বলেছে, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি ১৫ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়াত সম্মেলন আয়োজন হয়েছে যেখানে বেশির ভাগ বক্তা আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নানা ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘৃণামূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে ও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘খতমে নবুওয়াত সংগঠনের অতীত ইতিহাস এবং আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তাদের দীর্ঘ ও উসকানিমূলক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে বাংলাদেশের অন্য যে কোনো নাগরিকের মতোই, সংবিধানের ৪১ ধারা অনুযায়ী আহমাদিয়াদের ধর্ম পালন, চর্চা বা প্রচারের অধিকার সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত রয়েছে। বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য এই অধিকার রক্ষায় আমরা অবিচল থাকব।

আমরা খতমে নবুওয়াত আন্দোলনের অতীত ইতিহাসও লক্ষ্য করি এবং কীভাবে ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে বাংলাদেশ যখন তার পূর্ববর্তী গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল তখন এই সংগঠনটি অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৫০-এর দশকের প্রথম দিকে তৎকালীন পাকিস্তানে আহমাদিয়া বিরোধী অনুরূপ ধর্মান্ধ আন্দোলনগুলোরও জোরালো ভূমিকা ছিল গণতন্ত্রের লাইনচ্যুতিতে। আহমদিয়া সম্প্রদায় নিয়ে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।’

বিবৃতিতে নাগরিক কোয়ালিশন বলেছে, ‘আমরা অপরিসীম রক্তপাত ও দুর্ভোগের বিনিময়ে আমাদের মুক্ত মত প্রকাশ ও মুক্ত সংগঠনের অধিকার ফিরে পেয়েছি। যদিও আমরা আমাদের সঙ্গে একমত নয় এমন মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু আমরা কোনোভাবেই তাদের প্রতি সহিষ্ণু হতে পারি না যারা আমাদের সহনাগরিক বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা উস্কে দিতে চায়।

আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি দেশের কিছু বড় ও মূলধারার রাজনৈতিক দল আসন্ন নির্বাচনে ভোটের প্রতিযোগিতায় তুষ্টিবাদী রাজনীতির অংশ হিসেবে আহমাদিয়াদের প্রতি বিষোদগারে লিপ্ত হয়েছে। এটি খুবই আশঙ্কাজনক একটি ব্যাপার।’

সবশেষে বিবৃতিতে নাগরিক কোয়ালিশন বলেছে, আমরা অন্তর্বর্তী সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অনুরোধ করছি এই সংকটকালে বাংলাদেশের জাতীয় জীবনকে অস্থিতিশীল করতে পারে এমন যে কোনো গোষ্ঠীর ব্যাপারে উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে, বিশেষ করে যারা ধর্মকে অবলম্বন করে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করে।

নাগরিক কোয়ালিশন বিভিন্ন নাগরিক সমাজ সংগঠন এবং ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি প্লাটফর্ম। তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো শ্রেণি, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতিসত্তা এবং ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে সব নাগরিকের মৌলিক অধিকারের প্রচার ও সুরক্ষা বিষয়ে সরব থাকা। তারা বিশ্বাস করেন যে এই মৌলিক সাম্যই হতে হবে জুলাই ২০২৪ পরবর্তী বাংলাদেশের ভিত্তিপ্রস্তর।