আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব পাওয়া অভিবাসীরাও এখন ‘নিরাপদ নয়’

আগে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার পর নিজেদের নিরাপদ মনে করতেন অভিবাসীরা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অভিবাসন নীতি সেই নিরাপত্তাবোধে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের কড়াকড়িতে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব পাওয়া অভিবাসীরাও এখন ‘অনিরাপদ’ বোধ করছেন।

সিয়েরা লিওনে গৃহযুদ্ধের সময় পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসে প্রায় এক দশক শরণার্থী শিবিরে কাটান দাউদা সেসাই। তখন তিনি জানতেন না যে, একদিন মার্কিন নাগরিক হতে পারবেন। পরে তাকে জানানো হয়, নিয়ম মেনে চললে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে এবং নাগরিক হলে রাষ্ট্র তাকে সুরক্ষা দেবে। সেই বিশ্বাস থেকেই তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব নেন।

‘আমি যখন শপথ নিয়েছিলাম, বিশ্বাস করেছিলাম সত্যিই আমি এই দেশের অংশ হয়ে গেছি,’ বলেন ৪৮ বছর বয়সী সেসাই।

আরও পড়ুন>>ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী কমেছে ১০ লাখেরও বেশিট্রাম্পের পক্ষে মার্কিন আদালতের রায়, বহিষ্কারের মুখে ৬০ হাজার অভিবাসীযুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের কাজের অনুমতি নবায়নে বড় পরিবর্তন আনলো ট্রাম্প প্রশাসন

কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতি—বিশেষ করে গণহারে বহিষ্কার অভিযান, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের প্রচেষ্টা—মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া অভিবাসীদের মধ্যেও অস্বস্তি তৈরি করেছে। অনেকেরই মনে হচ্ছে, নাগরিকত্ব আর সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিচ্ছে না।

ভ্রমণে ভয়, সীমান্তে জিজ্ঞাসাবাদ

মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া অনেক অভিবাসী এখন বিদেশ ভ্রমণ করতে ভয় পাচ্ছেন। ফেরার পথে মার্কিন সীমান্তে প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া বা আটক হওয়ার ঘটনা তাদের আতঙ্ক বাড়াচ্ছে।

এমনকি, দেশটির ভেতরে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও ভয় তৈরি হয়েছে। নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও এক অভিবাসীকে ভুলভাবে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে আটক করার মতো খবরগুলো উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

সেসাই জানান, এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর ভ্রমণের সময়ও পাসপোর্ট সঙ্গে রাখেন। যদিও তার কাছে কঠোর নিরাপত্তার নিয়ম মেনে বানানো প্রকৃত পরিচয়পত্র রয়েছে।

অপরাধে যুক্ত থাকলে নাগরিকত্ব বাতিল

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ সম্প্রতি যেসব অভিবাসী অপরাধে জড়িত বা নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হবেন, তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে।

গত গ্রীষ্মে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই নিউইয়র্ক সিটির মেয়র–নির্বাচিত জোহরান মামদানির নাগরিকত্ব নিয়ে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিলেন। এটি মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া অভিবাসীদের আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে।

আরও পড়ুন>>সাড়ে ৫ কোটি ভিসাধারীর রেকর্ড খতিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্রঅভিবাসী আটক করলে পুলিশ সদস্যদের হাজার ডলার বোনাস দেবেন ট্রাম্পযুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের কারণে কি সত্যিই অপরাধ বাড়ছে?

নাগরিকত্ব মানেই স্থায়ী নিরাপত্তা নয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নাগরিকত্বের ধারণা বারবার বদলেছে।

১৮শ শতকের প্রথম আইনে নাগরিকত্ব ছিল শুধু ‘সচ্চরিত্র শ্বেতাঙ্গদের’ জন্য। পরে আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আবার ১৯২৪ সালের আইন এশীয়দের নাগরিকত্বপ্রাপ্তি প্রায় বন্ধ করে দেয়, যা ১৯৫২ সালে পরিবর্তন হয়।

এর আগে ১৯২৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ভারতীয়–আমেরিকান ভগত সিং থিন্দসহ বহুজনের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়।

‘এটা বিশ্বাসঘাতকতা’

সেসাই বলেন, আমি যে দেশের প্রতি অঙ্গীকার করেছি, সেখানে আজ এই পরিবর্তন দেখে মনে হয় বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হচ্ছি। এটি সেই যুক্তরাষ্ট্র নয়, যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আমি শপথ নিয়েছিলাম।

সূত্র: এপিকেএএ/