শরীরের শক্তি, আত্মবিশ্বাস, যৌনক্ষমতা, এমনকি প্রতিদিনের কাজের প্রতি আগ্রহ — সবকিছুর পিছনে নীরবে কাজ করে এক গুরুত্বপূর্ণ হরমোন - টেস্টোস্টেরন।
অনেকেই মনে করেন এটি শুধু পুরুষের হরমোন। আসলে নারী-পুরুষ উভয়ের শরীরেই এর প্রয়োজন আছে, শুধু পরিমাণে তারতম্য হয়।
শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে কমতে থাকে। তবে আধুনিক জীবনের চাপ, কম ঘুম, অতিরিক্ত ওজন, মানসিক চাপ — এসবের কারণেও এর মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। আর তখনই শরীরে দেখা দেয় একাধিক সূক্ষ্ম পরিবর্তন, যেগুলো আমরা অনেক সময় ‘স্বাভাবিক’ ভেবে এড়িয়ে যাই।
টেস্টোস্টেরনের প্রধান কাজ কী?
টেস্টোস্টেরন মূলত যৌন আকাঙ্কা ও যৌনক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ, পেশিশক্তি ও হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখা, শক্তি, মুড ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানো এবং রক্তে শর্করা ও চর্বি নিয়ন্ত্রণে পরোক্ষ সহায়তা করে থাকে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল জানিয়েছে, টেস্টোস্টেরনের ভারসাম্য পুরুষদের সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তাই এ বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।
পুরুষের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন কমে গেলে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় -
১. যৌন আকাঙ্কা কমে যাওয়া
২. ক্লান্তি ও শক্তির ঘাটতি
৩. মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
৪. পেশি দ্রুত নরম হয়ে যাওয়া
৫. ঘুমের সমস্যা
৬. পেটের মেদ বাড়া
৭. মনোযোগ কমে যাওয়া
৮. টেস্টোস্টেরন অস্বাভাবিকভাবে কম হলে পুরুষের দাড়ি গজানো ধীর হয়ে যায় বা দাড়ি পাতলা হতে থাকে।
মায়ো ক্লিনিক বলছে, এই লক্ষণগুলোর বেশ কিছু যদি একইসঙ্গে দেখা যায়, তবে রক্তপরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
তবে নারীদের শরীরেও অল্প পরিমাণে টেস্টোস্টেরন তৈরি হয়। এটি যৌন অনুভূতি, হাড়ের স্বাস্থ্য, মানসিক শক্তি ও মাংসপেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তাই নারীর শরীরে এ হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কমে গেলে কমে গেলে যৌন আগ্রহ কমে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি, হরমোন ভারসাম্যহীনতা ও মনোযোগ কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কেন কমে যায় টেস্টোস্টেরন?
১. বয়স বাড়া
২. দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
৩. শরীরের অতিরিক্ত মেদ
৪. পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
৫. ধূমপান ও অ্যালকোহল
৬. টাইপ–২ ডায়াবেটিস
৭. কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
এসব কারণে শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যেতে পারে। আমেরিকান ইউরোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, জীবনযাত্রার বদলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টেস্টোস্টেরনের মাত্রাও ওঠানামা করে।
সমাধান কী?
সমস্যা অতিরিক্ত হয়ে যাওয়ার আগেই জীবনযাত্রায় কিছু বিষয় মেনে চলার মাধ্যমে আপনি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পারবেন। যেমন-
১. নিয়মিত ঘুম: দৈনিক ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরের হরমোন ভারসাম্য ঠিক রাখে।
২. ব্যায়াম: স্ট্রেংথ ট্রেনিং বা পেশিশক্তির ব্যায়াম খুব কার্যকর।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ: পেটের মেদ কমলে টেস্টোস্টেরন স্বাভাবিকের দিকে ফেরে।
৪. স্ট্রেস কমানো: ধ্যান, যোগ, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমায়।
৫. প্রোটিন–ফ্যাট–হেলদি কার্বস: সুষম খাবার খাওয়া হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে।
৬. চিকিৎসক পরামর্শ: মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কম হলে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বিবেচনা করা হয়।
টেস্টোস্টেরন শরীরের এক ‘সিগনেচার পাওয়ার হরমোন’। এটিকে শুধু যৌনক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত করলে ভুল হবে। মুড, শক্তি, পেশি — মানবদেহের সামগ্রিক কর্মক্ষমতা নির্ভর করে এর ওপর। তাই লক্ষণগুলো উপেক্ষা না করে জীবনযাত্রা পরিবর্তন বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, সুস্থ থাকুন।
সূত্র: হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, মায়ো ক্লিনিক, আমেরিকান ইউরোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন
এএমপি/জিকেএস