স্বাস্থ্য

বেলা বাড়ে, রোগী বাড়ে, ভোগান্তিও বাড়ে পঙ্গু হাসপাতালে

সকাল ১০টা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) ক্যাম্পাসে গিজ গিজ করছে রোগী। করিডোরে, পথের ধারে, ফ্লোরে বসে আছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। টিকিট কাউন্টার ও বহির্বিভাগে চিকিৎসক রুমের সামনে রোগীর দীর্ঘ লাইন। সময় মতো সব চিকিৎসক না আসায় রোগী দেখায় ধীরগতি। ফলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগী ও স্বজনদের।

সময়মতো চিকিৎসক না আসা, এক্স-রে করতে গিয়ে দীর্ঘ সিরিয়াল, অপারেশন করার পরও ইনফেকশন হচ্ছে- এমন অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। প্রতিদিনই এমন চিত্র নিটোরে (পঙ্গু হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত), বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ভোগান্তি যেন আরও বাড়ে। তবে দালালকে টাকা দিলে সবই সহজে হয়ে যায়, এমন অভিযোগও রয়েছে।

কেরানীগঞ্জের হযরতপুর থেকে আসছেন সবুজা (৬০)। সকালে এসে হাসপাতালের সামনে করিডোরেই বসে ছিলেন। দীর্ঘ লাইন ধরে টিকিট কাটছেন। চিকিৎসক দেখানোর ওখানেও লাইন। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না বলে ছেলেকে লাইনে দাঁড় করিয়ে বাইরে বসেছেন এই বৃদ্ধা।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) জাগো নিউজকে সবুজা বলেন, কোমর ব্যথা নিয়ে আসছি। আগেও ডাক্তার দেখিয়েছি। রিপোর্ট আছে, কোমর ব্যথা ভালো হয় না। তাই এখানে আসছি। এখানে অনেক লম্বা সিরিয়াল। রুমে ডাক্তার নেই (এখনো আসেননি)।

রুহুল আমিনকে (২২) নিয়ে যশোর থেকে এসেছেন তার মা। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ওর বাবা মারা যাওয়ার পর অল্প বয়সে সংসারের হাল ধরেছে। অ্যাক্সিডেন্ট করে বিছানায় পড়ে গেছে, এখন কে দেখবে সংসার?

রুহুলের মা আরও বলেন, রুহুল ট্রাক চালাতো। চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় তার ডান পা ভেঙে গেছে। অক্টোবরের ৯ তারিখে অপারেশন করা হয়। সবমিলিয়ে ৫ বার অপারেশন করেছে। সবশেষ চামড়া লাগিয়ে ছুটি দিয়ে (রিলিজ) দিয়েছে। তবে ভুল করেছি বাসায় নিয়ে গিয়ে। এখন পুঁজ বের হচ্ছে, ইনফেকশন হয়ে গেছে। আজ ফজরের সময়ে হাসপাতালে এসে বসে আছি। এখনো (বেলা ১১টায়) ডাক্তার দেখাতে পারিনি।

আরও পড়ুননিটোরের অনিয়মই যেন নিয়ম‘আমাকে আর কেউ চাকরি দেবে না, বলবে তোর পা নেই’ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের চাপে অস্বস্তিতে সেবাগ্রহীতারা

ভোলা থেকে ছেলে ও ছেলের বউকে মোসা. রুমাকে (৩৫) নিয়ে নিটোরে এসেছেন ফাতেমা বেগম। ছেলে তার বউকে নিয়ে ডাক্তারের রুমের সামনে অপেক্ষা করছেন। দুই নাতিকে নিয়ে ফ্লোরে কাঁথা বিছিয়ে বসে আছেন ফাতেমা বেগম। এক নাতি ঘুমিয়ে গেছে, আরেকজন তার কোলে। সেসময় জাগো নিউজের এই প্রতিবেদককে ফাতেমা বেগম বলেন, ছেলের বউয়ের পা ভেঙেছে। প্লাস্টার করে দিয়েছিল, ১৪ দিন পর আসতে বলেছে। এ জন্য এখন আবার আসছি। এখন আবার প্লাস্টার করা লাগবে নাকি।

রুহুল আমিন, সবুজা বা রুমা শুধু নয়- এই ভোগান্তির চিত্র নিটোরে আসা বেশিরভাগ রোগীর। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে বহির্বিভাগে পাওয়া যায়নি দায়িত্বে থাকা অনেক চিকিৎসককে। অনেকে এসেছেন বেলা ১২টার পর। ফলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে রোগীদের।

টিকিট কাউন্টার থেকে জানা গেছে, সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এক হাজার ২২১ জন রোগী বহির্বিভাগের টিকিট কেটেছেন। দায়িত্বরত কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন জাগো নিউজকে জানান, শীতকাল হওয়ায় এই সংখ্যা তুলনামূলক কম। অন্য সময়ে এক হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার রোগী হয়। মঙ্গলবার শিশু ও হ্যান্ড সার্জারির ফলে কিছু রোগী বাড়ে। আজ তো তেমন চাপ নেই।

চাপ নেই, তাতেই রোগীদের এত ভোাগান্তি, চাপ হলে কী হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা পরিচালক বলতে পারবেন। আমার বলার এখতিয়ার নেই।

অপারেশনের পর রোগীদের ইনফেকশনের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক বলেন, এবারে আমাদের ওটির সরঞ্জাম নিম্নমানের পড়েছে। এর ফলে অনেক রোগীর ইনফেকশন হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কেনান জাগো নিউজকে বলেন, আমি তো ছুটিতে। আগামীকাল এসে দেখবো, কী কারণে সমস্যাগুলো হচ্ছে। আগামীকাল আসেন।

এসইউজে/কেএসআর/এএসএম