জাতীয়

হঠাৎ বড় ভূমিকম্প হওয়ার কারণ কী? যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ঢাকাসহ সারাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এটাকে দেশের ইতিহাসে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প বলে উল্লেখ করেছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার।

শুক্রবার ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি জানার জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের দেশ তো ভূমিকম্পপ্রবণ। আজকের ভূমিকম্প এত বড় ঝাঁকুনি ও শক্তিশালী হওয়ার কারণ হলো দেশের পূর্ব প্রান্তটা হচ্ছে বার্মা প্লেট, পশ্চিমটা হচ্ছে ইন্ডিয়ান প্লেট; এই সংযোগস্থলে ভূমিকম্প হয়েছে। এবং এই সংযোগটা এতদিন আটকে ছিল। এখন এই সংযোগটা আজকে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে খুলে গেছে। অর্থাৎ আটকানোটা বা লকটা খুলে গেছে।

তিনি বলেন, এখন সামনে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে। আজকের এই ভূমিকম্প সেই সতর্কবাণী দিচ্ছে। প্লেট যেটা আটকে ছিল, সেটা আটকানো অবস্থা থেকে খুলে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে আরও বড় ভূমিকম্প হবে। যেটা আমরা ২০১৬ সাল থেকে বলে আসছি।

তিনি বলেন, আমরা তখন পূর্বাভাস দিয়েছিলাম ৮ মাত্রাশক্তির ভূমিকম্প এখানে জমা হয়ে আছে। সেই শক্তির সামান্য অংশ আজ বের হলো। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্মরণকালের এত বড় ভূমিকম্প হয়নি।

আরও পড়ুনভূমিকম্পে ৩ জন নিহতের ঘটনায় হতভম্ব প্রত্যক্ষদর্শীরা২৩ মাসে দেশে ১৯ ভূমিকম্প, কোনটির কোথায় উৎপত্তি?ভূমিকম্পে নিহত ৩, আহত ৮৫, চলছে জরুরি চিকিৎসাসেবা

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির বলেছেন, ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে বিগত কয়েক দশকে হওয়া ভূমিকম্পের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ শক্তিশালী ও সর্বোচ্চ মাত্রার। এই সময়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ৪ থেকে ৫ মাত্রার সামান্য বেশি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে এগুলোর উৎপত্তিস্থল দেশের বাইরে।

তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চলে একাধিক বড় ভূমিকম্প হয়েছে, যা প্রমাণ করে এটি ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। যে কোনো সময় বাংলাদেশে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে। ঠিক কবে হবে সেটা আমরা বলতে পারি না।

দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসাইন ভূইয়া। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থান এমন যে, ভূমিকম্প হওয়া অবশ্যম্ভাবী। দেশের ভৌগোলিক অবস্থান তিনটি টেকটোনিক প্লেট—ইন্ডিয়ান প্লেট, বার্মিজ প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি হওয়ায় এখানে ভূমিকম্প হওয়ার ঝুঁকি সবসময় বিদ্যমান। বাংলাদেশের ভূগঠন মূলত নরম শিলা দিয়ে তৈরি। তাই নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সি ও উচ্চ অ্যাম্পলিচিউডের ভূমিকম্প হলে ক্ষতি বেশি হয়। ভূমিকম্পের কম্পন মাটির নিজস্ব কম্পাঙ্ক ও ভবনের কম্পাঙ্ক একসাথে মিলে গেলে তা আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

তিনি বলেন, ছোট ছোট ভূমিকম্প প্রতিনিয়ত ঘটছে, যা একেবারেই স্বাভাবিক। পৃথিবীতে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৫০টি ছোট মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে। এক থেকে তিন মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত টের পাওয়া যায় না। কিন্তু চার বা তার ওপরে হলে মানুষ তা অনুভব করতে পারে এবং ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনাও তৈরি হয়।

শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রিখাটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৫.৭। এটির উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে। এটি মাঝারি ধরনের।

মাটির ওপর কম্পনের যে তীব্রতা, এটা স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি। এটির গভীরতা ছিল প্রায় ১০ কিলোমিটার। এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত তিনজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আরএএস/এমএস