নিম্নমানের কিটক্যাট চকলেট বাজারজাতের দায়ে নেসলে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিপাল আবে বিক্রমা ও পাবলিক পলিসি ম্যানেজার রিয়াসাদ জামানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন নিরাপদ খাদ্য আদালত।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) তাদের বিরুদ্ধে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে এ গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত সাহারা বীথি। ওই আবেদনটি করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) কামরুল হাসান। আগামী ১৫ ডিসেম্বর মামলায় পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে নিম্নমানের কিটক্যাট চকলেটের বিরুদ্ধে আগে থেকেই একটি মামলা চলমান। ওই মামলায় কিটক্যাটের আমদানিকারক সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজের (৭ মকিম কাটারা, সাখাওয়াত ম্যানশন, চকবাজার ঢাকা) মালিক মো. মোজাম্মেল হোসাইনকে আসামি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য আইনে মামলা করা হয়েছে। আদালত আগেই তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
ওই মামলার তদন্তে নেসলে বাংলাদেশের আমদানি করা কিটক্যাট চকলেট ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষাতেও নিম্নমানের বলে রিপোর্ট এসেছে। ল্যাবরেটরির রিপোর্টে বলা হয়েছে, চকলেটে দুধের কঠিন অংশ ১২ থেকে ১৪ শতাংশ অথবা তার ঊর্ধ্বে হওয়ার কথা, সেখানে ল্যাব পরীক্ষায় মাত্র ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে দুগ্ধচর্বির মান ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ কিংবা তার বেশি থাকার কথা। কিন্তু রাসায়নিক পরীক্ষায় মাত্র ১ দশমিক ২৩ শতাংশ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য খাদ্য পরীক্ষাগার এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এমন রিপোর্ট দিয়েছে।
পরে ওই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান। মামলার শুনানি শেষে নেসলে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিপাল আবে বিক্রমা এবং পাবলিক পলিসি ম্যানেজার রিয়াসাদ জামানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ দেওয়া হয়।এ বিষয়ে নেসলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, কিটক্যাট পণ্যটি আমদানি করা হয় এবং আমদানির সময় পণ্যের গুণমান বজায় রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করে নেসলে। নেসলে থেকে নিশ্চিত করা হয় যেন প্রয়োজনীয় সকল মান পরীক্ষার পরেই আমদানি করা পণ্য বাজারজাত করা হয়।
আমদানি করা কিটক্যাট মানসম্পন্ন কি না, তা জানতে অস্বীকৃত ল্যাবে পণ্যটি পরীক্ষা করা হয়, যেখানে কিটক্যাটকে চকলেট অথবা ওয়েফার বিস্কুট হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। অথচ কিটক্যাট চকলেট কিংবা ওয়েফার বিস্কুট নয়; এটি চকলেট-কোটেড ওয়েফার। কিটক্যাটের মতো চকলেট-কোটেড ওয়েফারের মান পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) নির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই। খাদ্য নিরাপত্তা আইনের অধীনে মানুষের খাওয়ার জন্য উপযুক্ত বিবেচনায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) করা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এ পণ্যের ছাড়পত্র দেয়।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) কামরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘১০ নভেম্বর স্বপ্ন এসিআই লজিস্টিক থেকে কিটক্যাট চকলেটের নমুনা সংগ্রহ করেন। একইভাবে অন্যান্য এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। সেই নমুনা পাঠান নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষে। পরীক্ষায় দুধের কঠিন অংশ (ফ্যাটবিহীন দুধ/স্কিম মিল্ক পাউডার, ল্যাকটোজ) ১২ থেকে ১৪ শতাংশ অথবা তার ঊর্ধ্বে থাকার কথা। কিন্তু পরীক্ষায় কোনোটিই মান যথাযথ পাওয়া যায়নি। তাই আদালতে মামলা করেছেন তিনি।
এমএমএ/আরএইচ