মুফতি ইফতেখারুল হক হাসনাইন
আল্লাহ তাআলা হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করার পর যখন তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করলেন, তখন আদমের (আ.) মুখ থেকে সর্বপ্রথম যে কথাটি বের হয়েছিল তা ছিল—‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ অর্থাৎ সকল প্রশংসা জগতাধিপতি আল্লাহর জন্যই।
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, যেসব দিনে সূর্য উদিত হয় তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমার দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। যখন আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করলেন, তিনি তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করলেন, ফলে তা তার শরীরে প্রবাহিত হলো। তারপর আবার প্রাণ সঞ্চার করলেন, তখন তিনি সোজা হয়ে বসে গেলেন। তিনি হাঁচি দিলেন, তখন আল্লাহ তার জিহ্বায় এই বাক্য বলালেন, ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ অর্থাৎ সকল প্রশংসা জগতাধিপতি আল্লাহর জন্যই। ফেরেশতারা বললেন, ‘রাহিমাকাল্লাহ’ (আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করুন)। (সুনানে তিরমিজি)
আদমের (আ.) সৃষ্টির পর্যায়সমূহআদমকে (আ.) আল্লাহ তাআলা মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। কোরআন ও হাদিসে তার সৃষ্টির যে পর্যায়গুলো বর্ণিত হয়েছে, তা সংক্ষেপে এরকম:
আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, আমি মাটি দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করব। (সুরা সোয়াদ: ৭১)
২. কর্দমাক্ত ও শুকনো মাটিমাটি পানির সংস্পর্শে এসে কালো, গন্ধযুক্ত ও পরিবর্তিত কর্দমে পরিণত হয়েছিল, যাকে কোরআনে বলা হয়েছে ‘হামাউম-মাসনূন’। পরে পানি শুকিয়ে গেলে মাটি শক্ত হয়ে টিনের মতো শব্দকারী পদার্থে পরিণত হয়েছিল, যাকে কোরআনে বলা হয়েছে ‘সালসাল’। আল্লাহ তাআলা বলেন, অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সালসাল (তথা শুকনো ঠনঠনে) ও হামাউম-মাসনূন (তথা কালচে কাদামাটি) থেকে। (সুরা হিজর: ২৬)
৩. মানুষের আকৃতি গঠনএরপর আল্লাহ তাআলা আদমকে (আ.) পূর্ণ মানুষের আকৃতি দান করলেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আদমকে (আ.) তার যথাযোগ্য গঠনে সৃষ্টি করেছেন। তার উচ্চতা ছিল ষাট হাত। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা আদমের (আ.) আকৃতিবিশিষ্ট হবে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। (সহিহ বুখারি)
৪. রুহ ফুঁকে দেওয়াশরীর সম্পূর্ণভাবে তৈরি হওয়ার পর আল্লাহ তাআলা তার মধ্যে রুহ ফুঁকে দিলেন। এর ফলে তার মধ্যে জীবন, চেতনা, বুদ্ধি, অনুভূতি ও আত্মিক গুণাবলি সৃষ্টি হলো। আল্লাহ তাআলা বলেন, অতঃপর তিনি তাকে সুগঠিত করলেন এবং তার মধ্যে নিজ রুহ থেকে ফুঁকে দিলেন। (সূরা সিজদা: ৯)
আদমের (আ.) সৃষ্টি ও রূহ দানের কাজ শেষ হওয়ার পর আল্লাহ তাআলা তাকে সমস্ত নাম শিখিয়ে দেন। অর্থাৎ প্রতিটি জিনিস, প্রাণী, পর্বত, মানুষ, জীবজন্তু—সবকিছুর নাম ও তাদের গুণাগুণ আল্লাহ তাআলা আদমকে শিখিয়ে দেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আল্লাহ তাআলা শেখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন এবং বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক। তারা বলল, আপনি পবিত্র! আমরা কোনো কিছুই জানি না, আপনি যা আমাদের শিখিয়েছেন সেগুলো ছাড়া। নিশ্চয় আপনিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা। (সুরা বাকারা: ৩১, ৩২)
মহাবিশ্বের অধিপতি আল্লাহ ভালো করেই জানেন, ফেরেশতাদের তিনি পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব করতে সৃষ্টি করেননি। তাই তাদের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা দিয়ে প্রস্তুত করেননি। আর আদমকে পৃথিবীতে তার প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তাই তাকে প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা দিয়ে প্রস্তুত করেছেন। আদম সৃষ্টির আগেই তিনি ফেরেশতাদের বলেছিলেন আদম হবে পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, আমি নিশ্চয়ই পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব। (সুরা বাকারা: ৩০)
লেখক: মুহাদ্দিস, দারুল উলুম মাকবুলিয়া মাদরাসা, দেবিদ্বার, কুমিল্লা
ওএফএফ