দেশজুড়ে

উৎপাদন খরচ উঠছে না রসুন চাষিদের, প্রতি মণে লোকসান হাজার টাকা

নাটোরে রসুনের ভালো ফলন হলেও দাম না পাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন চাষিরা। উৎপাদন খরচের চেয়ে বিঘাপ্রতি তাদের ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। ফলে রসুন চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন জেলার রসুন চাষিরা।

কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় বিগত বছরগুলোতে নিজেদের উদ্ভাবিত বিনাহালে রসুন চাষ পদ্ধতিতে ব্যাপক ফলন ও দাম পাওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা ধারাবাহিকভাবে রসুন চাষ করে আসছেন। ফলে দেশে সর্বাধিক রসুন উৎপাদনকারী জেলা নাটোর।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত রবি মৌসুমে নাটোরে সর্বমোট ২২ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়। তার মধ্যে বড়াইগ্রামে ৮ হাজার ৯৯৩ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ৭ হাজার ৩৭৫ হেক্টর, নাটোর সদরে দুই হাজার ৮৮০ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ৪২৬ হেক্টর, লালপুরে ১১শ’ হেক্টর, বাগাতিপাড়ায় এক হাজার ৭৩ হেক্টর ও সিংড়ায় এক হাজার পাঁচ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ করা হয়। জেলায় এবার কমপক্ষে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৩০ টন রসুন উৎপাদন হয়েছে।

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা সদর, বড়াইগ্রামের লক্ষ্মীকোল হাট ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতিমণ রসুন ১ হাজার দুইশ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা দরে রসুন বিক্রি হচ্ছে।

নলডাঙ্গা হাটে রসুন বিক্রি করতে আসা কৃষক আফাজ উদ্দিন বলেন, গত বছর তাদের উৎপাদিত রসুন ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ায় অধিক লাভের আশায় এবারও রসুন চাষ করেছিলাম, কিন্তু বর্তমানে প্রতি মণ রসুন মাত্র ১ হাজার ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে আমাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না।

তিনি বলেন, এক বিঘা রসুন আবাদে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ২০ থেকে ৩০ মণ। কিন্তু অধিক লাভের আশায় রসুন সংরক্ষণ করেছিলেন। ফলে রসুন শুকিয়ে ওজন কমে বিঘা প্রতি ২০ মণে ঠেকেছে। সে অনুযায়ী বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। ফলে কৃষকরা লাভের পরিবর্তে উল্টো লোকসান গুনছেন। রসুনের এ অস্বাভাবিক দরপতনে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।

লক্ষীকোল হাটের কৃষক রফিকুল ইসলাম, ময়েন উদ্দিন ও রমজান আলী জানান, প্রতি বিঘা জমিতে রসুন চাষ, নিড়ানি, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং রসুন তোলা ও কেটে বাছাই ও গরে সংরক্ষণ করতে বিঘা প্রতি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ মণ রসুন উৎপাদিত হয়েছে। এখন বিক্রির সময়ে জমি থেকে উৎপাদিত রসুন সর্বাধিক ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে। ফলে মণপ্রতি কৃষকের কমপক্ষে ৯০০-১০০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আর যারা জমি লিজ নিয়ে রসুন চাষ করেছেন তাদের লোকসানের পরিমাণ আরও বেশি।

নলডাঙ্গার রশুন ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও রসুন চাষি রানা আহমেদ জানান, এ বছর আমি মোট ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করে প্রায় একশ মণ রসুন পেয়েছি। উৎপাদিত রসুন বিক্রি করে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবো বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু অস্বাভাবিক হারে দাম কমে যাওয়ায় লাভের পরিবর্তে আমার কমপক্ষে এক লাখ টাকা লোকসান যাচ্ছে।

রানা আহমেদ জানান, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে রসুন কিনতে আসা ব্যাপারীরা জানিয়েছেন, সরকার প্রচুর পরিমাণে চায়না রসুন আমদানি করছে। আমদানিকৃত এসব রসুনের আকার বড় হওয়ায় এবং দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা সেগুলো কিনতেই বেশি আগ্রহবোধ করেন। দেশি রসুনের চাহিদা না থাকায় দাম কমে যাচ্ছে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক হাবিবুল ইসলাম খান বলেন, বিনাহালে রসুন চাষের জমিতে কোনো চাষের প্রয়োজন হয় না। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পরে নরম কাঁদা মাটিতে রসুনের বীজ পুতে দিয়ে খড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এভাবে আবাদের রসুনের ফলন বেশি হয়। কিন্তু রসুনের দাম না পেলে কৃষকরা রসুন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

নাটোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আব্দুল মান্নাফ বলেন, দেশে উৎপাদিত ফসলের বাজার মজুদ পর্যালোচনা করে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। সরকারের উচিত কৃষকদের স্বার্থ বিবেচনা করা।

রেজাউল করিম রেজা/এনএইচআর/জেআইএম