সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মাগুরার নান্দুয়ালি গ্রামের খাদিজা খাতুনের সংগ্রামের পথচলা শুরু হয়। ভোরে নদীর পাড় ও অনাবাদি জমি থেকে টাটকা শাকসবজি সংগ্রহ করে ভ্যান ঠেলে পৌঁছে যান শহরের পাড়া-মহল্লায়। দুই দশকের বেশি সময় ধরে নিজের ইচ্ছাশক্তি আর আত্মমর্যাদাকে সঙ্গী করে চালিয়ে যাচ্ছেন জীবনের যুদ্ধ।
জানা গেছে, খাদিজা খাতুনের মৃত আফিলদ্দিন ফকিরের মেয়ে এবং মৃত আরজ আলীর স্ত্রী। এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন। এদের মধ্যে ছেলে ঢাকা একটি কারখানায় কাজ করছে আর মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।
এমন জীবন যুদ্ধ নিয়ে খাদিজা খাতুন বলেন, ‘আমি কারও কাছে হাত পাতি না, কারো দয়া ভিক্ষা করি না। কিস্তির মাধ্যমে অনেক কষ্টে পুরাতন ভ্যান কিনেছি। এটাই এখন আমার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র বাহন। আমি ফজরের আজান শুনে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে বিভিন্ন ধরনের সবজি সংগ্রহে বের হই। শাক সংগ্রহ হয়ে গেলেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সেই শাক কম দামে বিক্রি করি। দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ইনকাম হয়, তা দিয়েই সংসার চালাই।’
তিনি আরও বলেন, ২০ বছর ধরে এভাবে শাক-সবজি সংগ্রহ করে বিক্রি করছি। ভ্যান ঠেলে সবজি বিক্রি করা আমার জন্য খুবই কঠিন এবং কষ্টকর। সবজি সংগ্রহের জন্য নানা ধরনের বাজে কথা শুনতে হয়। কারণ অন্যের অনাবাদি জমি এবং নদীর পাড়ের শাক-সবজি সংগ্রহের জন্য জমির মালিক বাজে কথা বলেন। এত কিছুর পরেও সুস্থ আছি ভালো আছি, এভাবেই চলছে জীবন। সরকারি আবাসনে থাকার জন্য কিছুটা সহজে জীবন চালাতে পারছি।
শহরতলী নান্দুয়ালি গ্রামের বাসিন্দা তাসমিয়া খাতুন বলেন, খাদিজা সকালে গ্রাম এবং নদীর পাড়ের টাটকা সবজি, কচু পাতা, হেলঞ্চি শাক, পেপলটির পাতা এবং সজনে পাতাসহ সবজি বিক্রি করতে আসেন। এসব সবজি খুবই কম দামে কেনা যায়। খাদিজা খুবই ভালো মনের মানুষ। আমি চেষ্টা করি দেখা হলে সকালের নাস্তা দিতে।
নান্দুয়ালি গ্রামের প্রবীণ আবু তাহের বলেন, ফজরের নামাযের পরে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে মাঝেমধ্যে তাকে দেখা যায়। তিনি ভ্যান ঠেলে সবজি বিক্রি করেন। অনেক মানুষ তার থেকে শাক-সবজি কিনে। তিনি খুব অল্প দামে এসব সবজি বিক্রি করেন।
মো. মিনারুল ইসলাম জুয়েল/এনএইচআর/জেআইএম