পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে নাম আসায় বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমকে অপসারণের দাবিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
লিগ্যাল নোটিশে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। তিন আইনজীবী হলেন—অ্যাডভোকেট মো. আব্দুস সামাদ, অ্যাডভোকেট শাহিন হোসেন ও অ্যাডভোকেট মো. আতিকুর রহমান।
লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া।
তিনি জানান, নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে (আইজিপি বাহারুল আলম) অপসারণ করতে বলা হয়েছে। অন্যাথায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমসহ পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার নাম এসেছে। স্পর্শকাতর ওই প্রতিবেদনে আইজিপির নাম আসার পরই প্রশাসনের ভেতরে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
প্রতিবেদনে আইজিপির বিরুদ্ধে নেতিবাচক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখা এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠে এসেছে বাহারুল আলমের বিরুদ্ধে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সীমান্তরক্ষী এই বাহিনীর তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরণ আইনের মামলায় ১৩৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। আরও অন্তত ২২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। তবে ঘটনার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু থেকেই নানা প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন ভুক্তভোগীরা।
ঘটনার দেড় দশক এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর সাত সদস্যের জাতীয় স্বাধীন কমিশন গঠন করে সরকার। তদন্ত কমিশন গত ৩০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে ১৪৬ নম্বর পয়েন্টে পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম রয়েছে। তারা হলেন- তৎকালীন আইজিপি নূর মোহাম্মদ, তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার নাইম আহমেদ, তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি (এসবি প্রধান) বাহারুল আলম, সাবেক (পলাতক) অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম, বিডিআর হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দ এবং তার অধীনস্থ তদন্ত দল।
হত্যাকাণ্ডের সময় পুলিশের বিশেষ শাখার নেতৃত্বে থাকা বাহারুল আলম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা। হত্যাকাণ্ডের পরপরই তাকে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে পাঠানো হয়। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরের শান্তিরক্ষা বিভাগে পুলিশের লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৫ সালে আফগানিস্তানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের সিনিয়র পুলিশ অ্যাডভাইজার হিসেবেও কাজ করেন। ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, কসোভো ও সিয়েরা লিওনেও দায়িত্ব পালন করেন বাহারুল আলম। ২০২০ সালে অবসরে যান তিনি। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০ নভেম্বর পুলিশ বাহিনীতে রদবদলের অংশ হিসেবে বাহারুল আলমকে চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে ফিরিয়ে আইজিপির দায়িত্ব দেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
এফএইচ/এমএমকে/জেআইএম/বিএ