আজ ১১ ডিসেম্বর জামালপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে অকুতভয় মুক্তিসেনারা জামালপুরকে শত্রুমুক্ত করে। কিন্তু যথাযথ পরিচর্যা ও সংরক্ষণের অভাবে জামালপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।অধিকাংশ গণকবর ও বধ্যভূমি আজো চিহ্নিত না হওয়ায় সেগুলো এখন পরিণত হয়েছে গরু-ছাগলের চারণ ভূমিতে। একাত্তরের ২২ এপ্রিল হানাদার পাকবাহিনী জামালপুরে প্রবেশ করে। জামালপুরে স্থাপন করে পাক হানাদার বাহিনীর ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের হেডকোয়ার্টার। যুদ্ধকালীন সময়ে জেলা সদরের পিটিআই হেড কোয়াটার, বর্তমান ওয়াপদা রেস্ট হাউস, আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হোস্টেল টর্চার সেল, ব্রহ্মপুত্রের তীরে শ্মশান ঘাট বধ্যভূমি ও ফৌতি গোরস্থান বধ্যভূমিতে ধরে এনে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী বাঙালিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ৪ ডিসেম্বর ধানুয়া কামালপুর বিজয়ের পর মুক্তি বাহিনী চর্তুদিক থেকে জামালপুরকে ঘিরে ফেললে হানাদার বাহিনীও আত্মরক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করে। এক পর্যায়ে ১০ ডিসেম্বর দিন ও রাতব্যাপী মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর চতুর্মুখী আক্রমণে হানাদার বাহিনী পরাস্ত হলে ১১ ডিসেম্বর ভোরে কোম্পানি কমান্ডার ফয়েজুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিসেনারা হানাদার বাহিনীর হেড কোয়ার্টার পুরানা ওয়াপদা ভবনে স্বাধীন বাংলার বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্ত হয় জামালপুর। জামালপুর মুক্ত করার যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর ২শ ৩৫ জন সৈন্য নিহত হয় এবং ৩শ ৭৬ জন হানাদার সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। আর এই যুদ্ধে মিত্র বাহিনীর ১১ জন শহীদ হন।স্বাধীনতার ৪৫ বছর যাবত মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতিচিহ্ন অযত্ন অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে। আশেক মাহমুদ কলেজ ডিগ্রি হোস্টেল টর্চার সেল পরিণত হয়েছে গরুর খোয়াড়ে। ওই টর্চার সেলের সামনে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি গবরের লাকড়ি শুকানো এবং শিশুদের খেলার স্থানে পরিণত হয়েছে। ফৌতি গোরস্থানের গণকবরটিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও, পুরাতন ওয়াবদা সংলগ্ন গণকবরটির স্থানে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ তো নির্মাণ করা হয়নি উল্টো স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ না করায় গণকবরটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও জামালপুরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন আর গণকবরগুলো সংরক্ষণ না করার ফলে দিনদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাথা তুলে ধরতে টর্চার সেল, বধ্যভূমি, গণকবরসহ সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে এটাই এই অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের দাবি।শুভ্র মেহেদী/এফএ/এমএস