দেশজুড়ে

‘আমার আত্মহত্যার কারণ এসআই মিজানুল’

ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার নারী কনস্টেবল হালিমা খাতুন তার ডায়েরিতে আত্মহত্যার কারণ লিখে গেছেন। ডায়েরিটি হালিমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিন সোমবার ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন।

কীভাবে হালিমাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, তা লেখা রয়েছে ডায়েরিতে। তিনি লিখেছেন, আমার মরে যাওয়ার একমাত্র কারণ এসআই মোহাম্মদ মিজানুল ইসলাম।

ইয়াবা বিক্রি করে এমন এক নারী আসামিকে ধরার জন্য আমাকে রুমে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে মিজানুল। ১৭ মার্চ রাত ২টায় আমি থানার অফিসার ইনচার্জকে অভিযোগ দিলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি লিখে যান হালিমা।

সংবাদ সম্মেলনে হালিমার বাবা বলেন, মৃত্যুর পাঁচ দিনের মাথায় আমরা ওর জিনিসপত্র আনতে যাই। তখন ওর লাগেজের মধ্যে ওই ডায়েরি ও দুই কপি কাগজ পাই।

এ বিষয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ধর্ষিত হওয়ার কথা হালিমা ওসিকে জানালেও এ ব্যাপারে তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। আর এ কারণেই রাগে-দুঃখে হালিমা আত্মহত্যা করেছে। ওসি যদি অভিযোগটি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেন, তাহলে হালিমা আত্মহননের পথ বেছে নিত না।

লিখিত বক্তব্যে হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, হালিমা ধর্ষিত হওয়ার পর এসআই রিপন, এসআই খালেকুজ্জামান, এসআই হাসান ও তাদের সঙ্গীরা ঘটনা শুনে হালিমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা, মশকারি ও অশালীন মন্তব্য করে। আমি আমার মেয়ের আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী মিজানুল ও তার সহযোগীদের বিচার চাই।

গৌরীপুর থানা পুলিশের ওসি দোলোয়ার আহাম্মদ বলেন, অভিযোগটি হালিমার বাবার মনগড়া। এসআই মিজানুল ইসলাম যে হালিমাকে ধর্ষণ বা উত্ত্যক্ত করেছে, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ কেউ আমাকে দেয়নি। তবে মিজানুল ইসলাম উল্টো আমার কাছে অভিযোগ করেছে যে, হালিমা তাকে (মিজানুল) ব্ল্যাকমেইল করছিল।

গত ২ এপ্রিল বিকেল ৩টার দিকে গৌরীপুর থানা ব্যারাকের নিজ কক্ষে দরজা বন্ধ করে গায়ে কোরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন পুলিশ কনস্টেবল হালিমা খাতুন (২৫)।

খবর পেয়ে সহকর্মীরা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকে ঢাকা নেয়ার পথে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক হালিমাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আত্মহত্যার ঘটনায় পরদিন রাতে উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেন হালিমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিন।

এ ঘটনায় এসআই মিজানুলকে তাত্ক্ষণিক বরখাস্ত করা হয় এবং ৪ এপ্রিল এসআই মিজানুল ইসলামকে গ্রেফতার দেখিয়ে বিচারিক আদালতে হাজির করে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

এএম/এমএস